পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে, কিংবা পাড়া-মহল্লার দোকানে আসতে আসতে সব পণ্যেরই দাম বাড়ে। কিন্তু ক্রেতার কাছ থেকে কতটুকু মুনাফা আদায় করা যাবে তার কোনও মাপকাঠি নেই। ফলে আদা-রসুন-আলু-পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে উচ্চ মূল্যে। কিছুদিন আগেই পেঁয়াজের দাম দুই শ’ ছাড়িয়ে যায়। আলুর দামও পৌঁছেছিল শতকের কাছাকাছি। নতুন মৌসুমের আলু-পেঁয়াজ আসতে শুরু করায় বর্তমানে দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে দাম এখনও আসেনি সাধারণ মানুষের। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়ছে না খুব একটা।
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) মিরপুর ১ ও ২ নম্বরের পাইকারী বাজার, খুচরা বাজার ও মহল্লার মুদি দোকানসহ ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগাড়ির বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, মানভেদে পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচড়া বাজারে আদার দামের পার্থক্য দাঁড়ায় প্রতি কেজিতে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। দেশি রসুনের পার্থক্য ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, চায়না রসুনের পার্থক্য ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, পেঁয়াজ ও আলুর পার্থক্য ২০ টাকায় এসে দাঁড়ায়।
পাইকারি বাজার থেকে খুচরায় বিভিন্ন পণ্যের দামের পার্থক্য অনেক বেশি বলে অভিযোগ ক্রেতাদের
মিরপুর ১ নম্বরের কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, খুচরা বিক্রেতারা মানভেদে পেঁয়াজ ৭৫-৮০ টাকা, লাল ও সাদা আলু ৪৫-৫০ টাকা, দেশি রসুন ২৮০, চায়না রসুন ২৪০-২৬০, ভারতীয় আদা ২৪০, চায়না আদা ২৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
মিরপুর ২ নম্বরের বিভিন্ন মুদি দোকান ঘুরে দেখা যায়, সাদা আলু ৫০ টাকা, লাল আলু ৪৫ টাকা, পেঁয়াজ ৭৫ টাকা, আদা ২৪০ টাকা, দেশি রসুন ২৮০ টাকা ও চায়না রসুন ২৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এই এলাকার ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদেরও এসব পণ্য একই দামে বিক্রি করতে দেখা যায়।
আলু আর পেঁয়াজের দাম বেড়ে এখন কমছে, তবে আগের দামে আর ফেরেনি
তবে মিরপুর ১ নম্বরের কাঁচা বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা পাবনার পেঁয়াজ ৬০ টাকা, মানিকগঞ্জের পেঁয়াজ ৬২ টাকা, লাল ও সাদা আলু থেকে ২৮-৩০ টাকা, চায়না আদা ২০০ টাকা, ভারতীয় আদা ১৮০ টাকা, দেশি রসুন ২৩৫-২৪০ টাকা, চায়না রসুন ২১৫- ২২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
এক্ষেত্রে পাইকারি দামের সঙ্গে খুচরা ব্যবসায়ীদের বিক্রয় দামের তুলনা করলে দেখা পেঁয়াজ ১৫-২০ টাকা, আলু ১৫-২০ টাকা, আদা ৪০-৬০ টাকা, দেশি রসুন ৪০-৪৫ টাকা, চায়না রসুন ২৫-৩৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। দামের এই পার্থক্য নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীরা একে অন্যকে দোষারোপ করেন।
দাম বেশি রাখা নিয়ে পাইকারি ও খুচড়া ব্যবসায়ীরা পরস্পরকে দোষারোপ করছেন
মিরপুর ১ নম্বরের কাঁচা বাজারের হাবিব এন্টারপ্রাইজের পাইকারি ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীরা লাভ করছে এখন। আমাদের কাছে তো বিভিন্ন মানের পণ্য থাকে। তারা কম দামের পণ্য নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। এতে তারা বেশি লাভবান হচ্ছে।
এদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীদের দিকে দাম বৃদ্ধির অভিযোগ করে বাজারের খুচরা বিক্রেতা মো. শরীফ বলেন, বাজারে মাল একটু কম আসলেই পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম প্রতি কেজিতে বাড়িয়ে দেয়।
মিরপুর ২ নম্বর এলাকার জিদান জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা তো খুব বেশি করে এসব পণ্য আনি না। কারণ এগুলো দ্রুত পঁচে যায়। তাই অল্প করে আনি বলে দাম বেশি পরে। এছাড়া আমাদের যাতায়াত ভাড়াও যুক্ত করতে হয়। তাই কিছুটা বেশি দামেই বিক্রি করি।
পাড়ায় মহল্লায় খোলা ভ্যানেও বিভিন্ন পণ্যের দাম ইচ্ছেমতো রাখার অভিযোগ
ভ্রাম্যমাণ আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. বিল্লাল বলেন, আমরা ফেরি করে মানুষের বাড়ির কাছে গিয়ে পণ্য বিক্রি করি তাই দাম একটু বেশি। এছারা আমি ভালো পণ্যটাই আনি বেশি দামে।
এদিকে এসব পণ্যের দাম নিয়ে একাধিক ক্রেতা বলেন, আমরা আসলে নিরুপায়। আমাদের যে দামে বিক্রি করে সে দামে আমরা কিনতে বাধ্য। আমাদের করার কিছু নেই।
বাজার করতে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী খলিল রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকা করে তারপর সেটা ১৫০ টাকায় নামিয়ে বলে যে দাম কমেছে! এটা কোনোভাবেই চলতে পারে না।