মোঃ তরিকুল ইসলাম, বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ- কালভার্ট ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধাসহ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা- সবই আছে, শুধু নেই খালটি। দৃশ্যটি বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নের। স্থানীয়রা বলছেন, খালে প্রভাবশালীরা মাছের ঘের করার কারণে এলাকায় ধান চাষ ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। দীর্ঘদিন ধরে এমনটা চলতে থাকায় একসময়ের প্রবাহমান বড় ভাই জোড়া খালটি এখন মরতে বসেছে। এ ছাড়া ইউনিয়নের অন্যান্য যে খালগুলো রয়েছে সে গুলোর অবস্থাও একই। দখলদাররা এতটাই ক্ষমতাধর যে, কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা কথা বলারও সাহস পান না।
পশ্চিম মল্লিকেরবেড় গ্রামের মো. মোস্তফা বলেন, ‘আমরা ছোট বেলায় পুঁটিমারী খাল দিয়ে বাগেরহাট জেলা শহরে যাতায়াত করতাম। মাছ ধরতাম। কিন্তু কয়েক বছর ধরে লাকি নামে এক সাবেক মহিলা মেম্বার খালে বাঁধ দিয়ে ঘের করছে। এ কারণে খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে।’
বড় সন্ন্যাসী গ্রামের ওবাদুল ইসলাম বলেন, ‘সাবেক মহিলা মেম্বার লাকি পুঁটিমারী খালে দুটি বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের করেছেন। আমরা চাই সরকারি খাল উন্মুক্ত থাকুক। সবাই এই খাল ব্যবহার করুক।’ ছোট সন্ন্যাসী গ্রামের সুকান্ত বলেন, ‘এলাকার খালে ঘের করে মাছের চাষ করে। খালের পানিও আমরা ধরতে পারি না। তবে কারা করে তাদের নাম বলতে পারব না।’
মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নের বাসিন্দা সুমন হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের এলাকার ওপর দিয়ে ছোট ভাই জোড়া ও বড় ভাই জোড়া নামে দুটি খাল বয়ে গেছে। প্রভাবশালীরা এই দুই খালের ওপরে বাঁধ দিয়ে মাছের চাষ করছেন। পানির অভাবে আমরা জমিতে ঠিকমতো সেচ দিতে পারি না।’
স্থানীয় কৃষক প্রকাশ মণ্ডল বলেন, ‘১০ বছর ধরে খালটি তারা দখল করে রেখেছেন। একটা খালতো মরেই গেছে। দখলদারদের নাম মুখে আনলে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে। আমরা প্রশাসনের কাছে খাল দুটি অবমুক্ত করার দাবি জানাই।’
মল্লিকেরবের ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নেপাল মণ্ডল বলেন, ‘সাবেক চেয়ারম্যান এবং এলাকার কিছু উচ্ছৃঙ্খল মানুষ প্রায় ১০ বছর ধরে খাল দখল করে মাছ চাষ করছেন। আমরা একাধিকবার বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সবাইকে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে আমাদের আতঙ্কে থাকতে হয়। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের অত্যাচারে এলাকা ছেড়ে পালাতে হয়।’
মল্লিকেরবেড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তালুকদার ছাবির আহম্মেদ বলেন, ‘ইউনিয়নের অর্ধেকের বেশি খালে বাঁধ দিয়ে এলাকার প্রভাবশালীরা মাছের চাষ করেন। আমি একাধিকবার কয়েকটি বাঁধ অপসারণ করেছি। কিন্তু পরে সেগুলো আবার আগের মতো হয়ে যায়। উপজেলার আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বিষয়টি আমি উপস্থাপন করেছি।’
স্থানীয় কৃষকরা খাল উন্মুক্ত রাখার দাবি জানালেও প্রভাবশালীরা তা দখল করে আছে জানিয়ে এই জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘একদিকে দখলদার অন্যদিকে কৃষক, যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের সংঘর্ষ হতে পারে। এসব তথ্য আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে জানানোর পরও ইউএনও ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছেন। বারবার বলার পরও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। জেলা প্রশাসক যদি নির্দেশ দেন তাহলে আমি নিজ খরচে খালগুলো দখলমুক্ত করে দেব।’
কারা খালগুলো দখল করে রেখেছেন জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান তালুকদার ছাবির কারও নাম বলতে রাজি হননি। তবে পরিষদের সামনের খালে সাবেক সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর লাকি বাঁধ দিয়ে ঘের করেন বলে জানান তিনি।
চেয়ারম্যানের কথার সূত্র ধরে যোগাযোগ করা হয় সাবেক কাউন্সিলর লাকির সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমাকে দিয়ে খালে ঘের করাতেন। গত দুই বছর ধরে আমি খালে পাটা (বাঁশ দিয়ে বানানো বেড়া) দিয়ে মাছ চাষ করছি। কোনো বাঁধ দেওয়া হয়নি।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক খালিদ হোসেন বলেন, ‘জেলার কয়েকটি খাল কিছু প্রভাবশালী দখল করেছে। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এরই মধ্যে আমি সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি শিগগিরই খালগুলো দখলমুক্ত করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে পারব।’