শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৯:১৬ অপরাহ্ন
English
ব্রেকিং নিউজ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে রেললাইনের রেল ক্লিপসহ চোর আটক চট্টগ্রাম প্রবাসী ক্লাব লিমিটেডের উদ্যোগে প্রবাসী পরিবারদের মাঝে নগদ অর্থ ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ মধুপুরে ছেলের হাতে মা খুনের ঘটনায় ঘাতক ছেলে গ্রেফতার ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক স্কুল ছাত্রী নিহত রোজা হল ধনী গরিবের পার্থক্য নির্ণয়ের মাপকাঠি বন্ধুত্বের আলোয় ইফতারের মিলনমেলা, পাঁচ বছর পর একসঙ্গে দ্বিতীয় বারের মত কর্ণফুলী টানেল টোল ডিপার্টমেন্ট কতৃক ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে শিবিরের মতবিনিময় চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইফতার”হুইল” চেয়ার” ও আর্থিক সহায়তা প্রদান পঞ্চগড় শিশু কন্যা ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ

সাভারের আশুলিয়ায় পুড়িয়ে দেয়া লাশের স্তুপ থেকে সন্তানের লাশ নিয়ে দাফন কাজ শেষে জানতে পারে তাদের সন্তান জীবিত

Muktakathan News
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ১৫৫ Time View

সাভার প্রতিনিধি : ৫আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর বিজয় মিছিলে যোগ দিয়ে রিফাত হোসেন (১৯) নামের এক যুবক নিখোঁজ হন।

নিখোঁজ রিফাতকে খুজতে বাবা-মা ছূটে যান নগরীর বিভিন্ন হাসপাতাল -ক্লিনিক বাদ দেননি মর্গও ; তবুও ছেলের খোজ পাননি তারা।

পরদিন রিফাতের বাবা আশুলিয়া থানায় গিয়ে পোড়ানো লাশের স্তুপ  থেকে সবগুলো লাশই দেখে একটি লাশ রিফাতের বলে মনে হয় তার। সবগুলো লাশ এরই সর্বাঙ্গ পুড়ে কয়লা প্রায় তাই কিছুটা নিশ্চিত হয়ে সেই লাশটি কে তার গ্রামের বাড়ি বগুড়ায় নিয়ে দাফনকাজ শেষ করেন এবং মিলাদ /দোয়া পড়িয়ে তারা আবার কর্মের তাগিদে সাভাএর আশুলিয়ায় ফিরে আসেন। তখন তারা জানতে পারেন, ছেলে রিফাত বেঁচে আছেন।

এনাম মেডিকেলের পক্ষ থেকে ফেসবুকে ছবি দিয়ে একটি পোস্ট করা হয়। এই পোস্ট ‘আমাদের সাভার’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে শেয়ার করা হয়। এতে বলা হয়, রাকিব নামের একজন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। তার ‘গানশট ইনজুরি’।

এই পোস্ট চোখে পড়ে রাসেলের। পোস্টে থাকা ছবিটি রিফাতের সঙ্গে মিলে যায়; কিন্তু পোস্টে ছবির ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছিল ‘রাকিব’। অভিভাবকের খোঁজ পেতে পোস্টে যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছিল। সেই সূত্রে পরিবার হাসপাতালে গিয়ে রিফাতকে শনাক্ত করে।

ওই নম্বরে ফোন করলে হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার ইনচার্জ মো. ইউসুফ আলী নথি দেখে বলেন, আন্দোলনকারী ছাত্ররা ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টা ৩৮ মিনিটে রাকিব নামের এক রোগীকে এখানে ভর্তি করেন। রোগীর মাথায় গুলি লেগেছিল। গুলি মাথার ভেতরেই আটকে ছিল। রোগীর অভিভাবক পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে হাসপাতালের পক্ষ থেকে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। এই পোস্ট ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে পড়লে রিফাতের খোঁজ পায় পরিবার।

পরিবারকে এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, রিফাতের মাথার পেছন দিকে গুলি লেগে তা মাথাতেই আটকে আছে। অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করতে গেলে তাকে বাঁচানো সম্ভব হবে কি না, তা তারা নিশ্চিত নন। এই হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার করা সম্ভব না।

এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রিফাতকে রেখেই মা-বাবা ছেলের চিকিৎসার কাগজপত্র নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরতে থাকেন। বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তার অস্ত্রোপচার করতে রাজি হচ্ছিলেন না। পরে এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এক চিকিৎসক পরামর্শ দেন, মো. রুহুল কুদ্দুস নামের চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করার।

রুহুল কুদ্দুস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক। তিনি প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন রাজধানীর কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে। গত ৩০ আগস্ট এই হাসপাতালেই তিনি প্রথম রিফাতকে দেখেন। ৩ সেপ্টেম্বর অস্ত্রোপচার করে রিফাতের মাথার ভেতরে থাকা গুলিটি বের করেন তিনি। চিকিৎসা শেষে ১৩ সেপ্টেম্বর রিফাত বাড়ি ফেরেন।

চিকিৎসক রুহুল কুদ্দুস বলেন, ব্রেন টিউমার অস্ত্রোপচারে তিনি অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে থ্রিডি সিটিস্ক্যান করে উন্নত যন্ত্রপাতির সাহায্যে তিনি রিফাতের অস্ত্রোপচার করার সাহস করেন। গুলিটি রিফাতের মগজের বাঁ পাশে থাকায় রক্তনালি ছিঁড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন জটিলতার আশঙ্কা ছিল। তবে গুলি ভেতরে থাকায় রিফাতের মগজে সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল। তাই অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।

রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘আন্দোলনে রিফাতসহ দুজনের মগজ থেকে গুলি বের করেছি। মাথার খুলিসহ বিভিন্ন অংশ থেকে গুলি বের করেছি ১৫ থেকে ১৬ জন রোগীর। অস্ত্রোপচারগুলো জটিল ও অত্যন্ত ব্যয়বহুল। রিফাতসহ আমি কারও বেলাতেই অস্ত্রোপচারের জন্য কোনো টাকা নিইনি; আর রিফাতের চিকিৎসার খরচও মওকুফ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।’

কিছু মনে না থাকাসহ রিফাতের যেসব জটিলতা হচ্ছে, তা সেরে যাবে বলে আশাবাদী এই চিকিৎসক।

কী দেখে পোড়া লাশটি রিফাতের বলে মনে করেছিলেন—এই প্রশ্নোত্তরে রিফাতের বাবা লুৎফর বলেন, পোড়া লাশের শরীরের মাংস বলতে কিছু ছিল না। চেহারা দেখেও চেনার উপায় ছিল না। তবে রিফাতের সামনের দুটি দাঁত একটু ভাঙা। লাশের মুখের দাঁতও তেমন মনে হয়েছিল। শরীরটাও লিকলিকে ছিল। তাই লাশটি রিফাতের বলে মনে করেছিলেন তিনি। পরে রিফাতকে ফিরে পাওয়ার কথা আশুলিয়া থানায় গিয়ে নিজেই জানিয়ে এসেছেন তিনি।

রিফাতের বাবা লুৎফর প্রামাণিক ও মা পারুল বেগম জানান, তারা প্রথমে এই ভেবে সান্ত্বনা খুঁজে নিচ্ছিলেন যে ছেলে মারা গেলেও লাশটা তো অন্তত পেয়েছেন; কিন্তু পরে যখন জানতে পারেন, ছেলে মারা যাননি, তখন তারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন; কিন্তু রিফাত বেঁচে থাকলেও মাথায় গুলি লাগায় তার অবস্থা আর আগেরমত স্বাভাবিক নেই।
পারুল বেগম বলেন, ‘ছেলের মুখে আবার মা ডাক শুনছি। ছেলেকে পাইলাম; কিন্তু ভালোমতন তো পাইলাম না।’

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন অনুষ্ঠিত দাখিল পরীক্ষায় রিফাত জিপিএ ৪ দশমিক ৬৯ পান। আশুলিয়ার দারুল ইসলাম ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তিনি। মাদ্রাসাতেই থাকতেন। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের জেরে মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে গেলে আশুলিয়ার বাসায় যান রিফাত। গত ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে যোগ দিতে গিয়ে রিফাতের জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। তবে সেদিন কী হয়েছিল, তার কিছুই এখন আর মনে নেই রিফাতের।

মা-বাবা জানান, ৫ আগস্ট রিফাত বাসায় না ফেরায় তারা এলাকার হাসপাতাল-ক্লিনিকে তাকে খুঁজতে যান। তাদের সঙ্গে ছিলেন পাশের বাসার অনার্স–পড়ুয়া মো. রাসেল ইসলাম। রিফাতের সঙ্গে মাঠে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে তার সঙ্গে বড় ভাই-ছোট ভাইয়ের মতো সম্পর্ক হয়ে যায় রাসেলের। তারা সাভারের এনাম মেডিকেল ও হাসপাতালেও গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, রিফাত নয় রাকিব নামের একজন ভর্তি আছেন। তাই তারা চলে আসেন। পরদিন রিফাতের বাবা আশুলিয়া থানার সামনে স্তূপ করে রাখা পোড়া লাশের স্থানে যান। সেখানে থাকা একটি লাশকে নিজের ছেলের বলে মনে হয় তার।

ছেলেকে জীবিত ফেরত পেলেও এখন আর্থিক খরচের বিষয়টি চিন্তায় ফেলেছে রিফাতের মা-বাবাকে। ছেলের দেখভালের জন্য কর্মক্ষেত্র থেকে বিনা বেতনে (মাসিক বেতন প্রায় ২০ হাজার টাকা) ছুটি নিয়েছেন রিফাতের বাবা। রিফাতের মা একটি হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করে মাসে পেতেন ১২ হাজার টাকার মতো। তাকেও কাজটি ছেড়ে দিতে হয়েছে।

রিফাতের মা-বাবা আরও জানান, এনাম মেডিকেল ও ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রিফাতের চিকিৎসার খরচ নেয়নি; কিন্তু রিফাতের জন্য ওষুধ, পুষ্টিকর খাবার, তাদের ১১ বছর বয়সী এক মেয়েকে মাদ্রাসায় পড়ানো, বাড়িভাড়াসহ বিভিন্ন খাতে এখন অনেক খরচ হচ্ছে। স্থানীয় রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনের তরুণেরা আর্থিক সহায়তা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তবে তারা সরকারের কাছ থেকে সহায়তা চান।

রিফাতের বাবা লুৎফর প্রামাণিক বলেন, আমার ছেলে তো এখন প্রতিবন্ধী হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাইছিল। পড়তে পারব কি না জানি না। ভবিষ্যতে কোনো কাজ করতে পারব কি না, তাও জানি না। সূত্র : যুগান্তর।

Author

Please Share This News in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© Muktakathan Kalyan Foundation ©
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102