ঢাকা, ৭ অক্টোবর ২০২৪: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে আজ রাজধানীর শাহবাগে একটি বৃহৎ ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। "ভারতীয় আগ্রাসন বিরোধী ছাত্র সমাবেশ" শিরোনামে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আয়োজনে এই সমাবেশটি বিকেল ৩:৩০ টায় শুরু হয়। সমাবেশে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও তরুণ সমাজের প্রতিনিধি সহ অসংখ্য মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
আবরার ফাহাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন
সমাবেশে বক্তারা আবরার ফাহাদের আত্মত্যাগের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তারা বলেন, আবরার ছিলেন এক সাহসী কণ্ঠস্বর, যিনি দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি ও ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতের সাথে বাংলাদেশের পানি, বিদ্যুৎ ও বাণিজ্য চুক্তির সমালোচনা করার জন্যই ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও, অনেকেই এখনও এই বিচারের কার্যকরীতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
বক্তারা আবরারের হত্যার সাথে জড়িত সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবির পাশাপাশি ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। তাঁরা বলেন, "আবরার আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। তার হত্যার পেছনে যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ষড়যন্ত্র ছিল, তা আমাদের মনে রাখতে হবে। আমরা ভারতের সঙ্গে বৈষম্যমূলক চুক্তি চাই না, আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে হবে
সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, "আমরা আজ এখানে আবরারকে শ্রদ্ধা জানাতে জড়ো হয়েছি, কিন্তু এই আন্দোলন এখানেই শেষ নয়। আমরা ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলবো। আবরারের আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়, তার জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।"
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পটভূমি
২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলে একদল সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে। আবরারের ফেসবুক পোস্টে ভারতের সাথে বাংলাদেশের বিভিন্ন চুক্তি নিয়ে সমালোচনা করার কারণে তাকে টার্গেট করা হয় বলে জানা যায়। তার মৃত্যুতে দেশব্যাপী শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং বিভিন্ন মহলে প্রতিবাদ শুরু হয়। আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা হলেও বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
আবরারের এই নির্মম হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনীতি ও রাষ্ট্রবিরোধী চুক্তি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়িয়ে তুলেছে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এক নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করেছে।
আবরার হত্যার ঘটনায় তার বাবা মো. বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় মামলা করেন।
২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে ২০ জনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। এছাড়া এ মামলার অপর পাঁচ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো- বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিই বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার (মেকানিক্যাল ইঞ্জনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশারফ সকাল (বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ), সদস্য মুজাহিদুর রহমান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাজেদুল ইসলাম (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল, ১৭তম ব্যাচ), মাহমুদুল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), এ এস এম নাজমুস সাদাত (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মিজানুর রহমান (ওয়াটার রিসোসের্স, ১৬ ব্যাচ), শামসুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল), মাহামুদ সেতু (কেমিকৌশল), এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাহমুদুল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ) এবং মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল)। এর মধ্যে শেষের তিনজন পলাতক রয়েছে।
যাবজ্জীবনের ৫ আসামি হলো- বুয়েট ছাত্রলীগের সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (১৪তম ব্যাচ, সিই বিভাগ), গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (মেকানিক্যাল, তৃতীয় বর্ষ), আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), সদস্য আকাশ হোসেন (সিই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ) ও মোয়াজ আবু হোরায়রা (সিএসই, ১৭ ব্যাচ)।