আসুন জানা যাক বিশেষজ্ঞদের কথা—
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শব্দে রয়েছে রোগ সারানোর ক্ষমতা। ‘উপায়’ শব্দ নাকি ব্রহ্মাস্ত্রর থেকেও বেশি শক্তিশালী!অবিশ্বাস্য ও অসীম তার ক্ষমতা।তাই বুঝে- জেনে-শুনেই ব্যবহার করতে হয়।এই শব্দের ব্যবহারেই রোগ নিরাময় করা সম্ভব।বিশেষজ্ঞদের মতে, শব্দের প্রভাব মনে পড়ে।কারণ, মন শান্ত এবং অশান্ত করার ক্ষমতা রয়েছে শব্দের মধ্যে।মনের প্রভাব শরীরেও ভীষণভাবে নাড়া দেয়।ফলে শব্দের মাধ্যমে শরীরের নানা সমস্যা ঠিক করা সম্ভব বলেই বিশেষজ্ঞরা একমত।এর কয়েকটি উপায়ও তাঁরা জানিয়েছেন যা নিম্নে তুলে ধরা হলো।
ভ্রমরী প্রাণায়াম (Bhramari Pranayama): মনকে একাগ্র করে ধ্যানের পর্যায়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে এই প্রাণায়ম। শব্দের কম্পনে মন ও স্নায়ু শান্ত হয়।এর জন্য প্রথমে সোজা হয়ে বসবেন।নিজের চোখ দু’টি বন্ধ করে তাতে আলতো করে হাতের আঙুল রাখবেন।নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে ছাড়ার সময় ভ্রমর অর্থাৎ মৌমাছির মতো শব্দ করবেন।এতে মন শান্ত রাখার পাশাপাশি শরীরও তরতাজা করে তোলা যায়।
মন্ত্রোচ্চারণ (Chanting): মন্ত্রের আলাদা মহাত্ম্য রয়েছে। এর নির্দিষ্ট ছন্দ ও শব্দ রয়েছে। যার প্রভাব সরাসরি শরীরে পড়ে এবং শান্তির অনুভূতি দেয়।অনেকেই ‘ওঁ’ শব্দের উচ্চারণের মাধ্যমে ধ্যান করেন। তবে যে যার মতো বিশ্বাস অনুযায়ী কিংবা পছন্দ মতো শব্দ বেছে নিতে পারেন।এতে শরীরের যাবতীয় নেগেটিভ এনার্জি দূর হয় এবং নতুন করে শক্তির সঞ্চার হয়।
টোনিং সাউন্ডস (Toning Sounds): শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের রোগ নিরাময়ের জন্য বিভিন্ন রকমের শব্দ রয়েছে। যেমন কানের জন্য ‘Nnn’ উচ্চারণ ভাল। চোখের ক্ষেত্রে ‘Eemm’ শব্দের প্রয়োগ করতে পারেন। সাইনাসের সমস্যায় ‘Mmm’ শব্দ উচ্চারণ করবেন।নাকের জন্য ‘Llmm’ শব্দটি উচ্চারণ করতে বলা হয়।আর ফুসফুসের জন্য ‘Ssss’ শব্দের উচ্চারণ বেশ ভাল।
তাছাড়াও ধাতুর পাত্র (Singing bowl) এর শব্দও অনেক ক্ষেত্রে মনকে আরাম দেয়।এমন পদ্ধতি বর্তমান উন্নত বিশ্বে বিভিন্ন স্কুল,কলেজ,হোটেল,স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র, বিনোদন কেন্দ্র,ক্লাব,থেরাপি সেন্টার,মেডিটেশন সেন্টার,স্পা বা ম্যাসাজ সেন্টার,মাদক নিরাময় কেন্দ্র,শিশু ও বৃদ্ধাশ্রম,শিশু-কিশোর সংশোধনাগার, জেলখানা, মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্র,পুনর্বাসন কেন্দ্র ইত্যাদিসহ অটিস্টিকদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশে এক বিশেষ গবেষণায় সাউন্ড থেরাপির মাধ্যমে আরও যে যে সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় তা হলো, চোখে কম দেখা,কানে কম শোনা,প্রায়ই মন খারাপ থাকা,নিজের প্রতি ক্ষিপ্ততা ও আত্নহত্যা প্রবণতা, কিছুই ভালো না লাগা,অস্থির ভাব ও যে কোন কাজে মনযোগে অক্ষমতা,যৌন অনিহা,কোষ্ঠকাঠিন্য,গ্যাস্ট্রিক ও খাদ্যে অরুচি,খিটখিটে মেজাজ বা অল্পতেই রেগে যাওয়া,সকল কাজেই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব বা সিদ্ধান্ত হীনতা, মাথা ঘোরানো বা ভার সাম্য হারানো, স্বাভাবিক ভাবে ঘুম না আসা কিংবা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ঘুম থেকে ওঠা ইত্যাদি।এক কথায়, মেডিটেশনের ফলে যতোটা শারীরিক মানসিক উন্নয়ন ঘটে তার সবটাই এই সাউন্ড থেরাপি প্রয়োগ দ্বারাও সম্ভব!এতে মন শান্ত হয় আর শরীরও করে তরতাজা।বাংলাদেশেও বিভিন্ন স্থানে এর ব্যাবহার ও অগ্রগতির প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে।
মো: শোয়েব হোসেন (লেখক)
সাউন্ড থেরাপি গবেষক,
সংগীত শিক্ষক ও কণ্ঠশিল্পী।