শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ০২:৫৯ পূর্বাহ্ন
English
ব্রেকিং নিউজ
গফরগাঁওয়ে সাংবাদিকদের ১৪ দফা দাবী আদায়ে শোভাযাত্রা আলোচনা ও লিফলেট বিতরণ রায়পুরায় মহন মে দিবস উপলক্ষে র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত মেহেরপুরে জেলা বিএনপির মহান মে দিবসে র‌্যালি ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত নানা আয়োজনে বারহাট্টায় মহান মে দিবস উদযাপিত মধুপুরে ট্রাক ও কভার্ডভ্যান ড্রাইভার্সের উদ্যোগে মে দিবস পালিত। কুড়িগ্রামের উলিপুরে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালিত হয়েছে মেহেরপুর গাংনীতে পুরানো বিল্ডিংয়ের সাদ ভেঙ্গে ভিক্ষুক নিহত-আহত স্ত্রী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মেহেরপুরে মহান মে দিবস পালিত বেলকুচিতে ১লা মে শ্রমিক দিবস উপলক্ষে পল্লি চিকিৎসক এসোসিয়েশনের উদ্যোগে ফ্রী চিকিৎসা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত। চাঁপাইনবাবগঞ্জে মহান মে দিবস উপলক্ষে রালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

লোভের ফাঁদে কৃষক: টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলে তামাক চাষের বিস্তার

Muktakathan news
  • Update Time : শনিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৭০ Time View

কালিহাতী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি:  দেশি-বিদেশি সিগারেট ও বিড়ি কোম্পানিগুলোর প্রলোভনে পড়ে তামাক চাষের দিকে ঝুঁকছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। আগাম অর্থ সহায়তা ও উৎপাদন সামগ্রী সরবরাহের মাধ্যমে কৃষকদের তামাক চাষে আকৃষ্ট করা হচ্ছে। ফলে টাঙ্গাইলের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে বাড়ছে তামাক চাষ, যা পরিবেশের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং কৃষিজমির উর্বরতা কমিয়ে দিচ্ছে।

 

সরকারি বিধি অনুযায়ী তামাক চাষের জন্য অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। অধিক লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছর নতুন নতুন জমি তামাক চাষের আওতায় আসছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর দাদনের ফাঁদে পড়ে কৃষকেরা নিজেদের স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। বিশেষত, তামাক চাষে ব্যবহৃত ‘কারগিল’ নামক সার কৃষক ও তাদের পরিবারের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করছে এবং জমির উর্বরতা কমিয়ে দিচ্ছে।

 

টাঙ্গাইলের কালিহাতী, ভূঞাপুর, সদর, দেলদুয়ার ও নাগরপুর উপজেলায় তামাক চাষ সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। বিশেষত কালিহাতীর সল্লা, দেউপুর, চর হামজানী, কদিম হামজানী, পটল, জোকারচর, গোহালিয়াবাড়ী, ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী, জগৎপুরা, চর নিকলা, সদর উপজেলার কাকুয়া, হুগড়া, দেলদুয়ারের এলাসিন, নাগরপুরের পাকুটিয়া, ভাদ্রা ও মোকনা এলাকায় দিগন্তজুড়ে তামাক ক্ষেত দেখা যায়।

 

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড, জাপান টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড, আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানি ও অন্যান্য স্থানীয় প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে কৃষকদের তামাক চাষে উৎসাহিত করছে। সরকারি কোনো তদারকি না থাকায় এ কোম্পানিগুলো অবাধে কৃষকদের দাদনের মাধ্যমে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে।

 

কালিহাতীর চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ কৃষক তামাক চাষে ব্যস্ত। কৃষক আমির আলী, হারেছ মিয়া ও শুকুর মামুদ জানান, কোম্পানিগুলো বীজ, সার, কীটনাশক, ত্রিপলসহ যাবতীয় সামগ্রী সরবরাহ করে এবং পরে তাদের কাছ থেকেই তামাক পাতা কিনে নেয়।

 

দীর্ঘ আট বছর ধরে তামাক চাষ করা কৃষক জব্বার মিয়া বলেন, “তামাক চাষে অন্য ফসলের তুলনায় দ্বিগুণ লাভ হয়। শরীর ও পরিবেশের ক্ষতি হলেও লাভ বেশি হওয়ায় চাষ ছাড়তে পারছি না।”

 

তিনি জানান, পাতার আকার ও সংরক্ষণের ধরন অনুযায়ী কোম্পানির প্রতিনিধিরা দাম নির্ধারণ করেন, এবং তাদের ছাড়া বাইরের কেউ তামাক কিনতে পারে না।

 

টাঙ্গাইলের পরিবেশ উন্নয়ন কর্মী সোমনাথ লাহিড়ী জানান, তামাক চাষে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ চাষিদের শরীরে নিউরো-টক্সিক প্রভাব ফেলে, যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এছাড়া জমির উর্বরতা হ্রাস পায় এবং পরিবেশে দূষণ ছড়িয়ে পড়ে।

 

ডা. জিল্লুর রহমান বলেন, “দীর্ঘদিন তামাক চাষের সঙ্গে যুক্ত থাকলে ক্যানসার, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, চর্মরোগ, পেটের পীড়াসহ নানা জটিল রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া চাষিদের সন্তানরা ‘গ্রিন টোব্যাকো সিনড্রোম’ নামক রোগে আক্রান্ত হতে পারে।”

 

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আশেক পারভেজ জানান, “তামাক চাষ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো সরকারি নির্দেশনা নেই। তাই এ বিষয়ে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। তবে তামাক চাষ রোধে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।”

 

পরিবেশের ক্ষতি, কৃষিজমির উর্বরতা কমে যাওয়া ও কৃষকদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার কি কার্যকর পদক্ষেপ নেবে? নাকি বহুজাতিক কোম্পানির মুনাফার ফাঁদে পড়ে কৃষকরা ধ্বংসের পথেই এগিয়ে যাবেন?

Author

Please Share This News in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© Muktakathan Kalyan Foundation ©
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102