“শীতলা ষষ্ঠী”
রম্যরচনা
অরবিন্দ সরকার
বহরমপুর,মুর্শিদাবাদ।
শ্রীপঞ্চমীর সরস্বতী পূজার পরেই শীতলা ষষ্ঠী। ভোম্বল সরস্বতীর পুজোর আয়োজন করেছে। কিছু দিন পূর্বে সাদা কলাই ও বোড়া কলাই বাজার থেকে কিনে এনে, তাকে ধুয়ে , রোদে শুকিয়ে, সাদা কলাই গুলো বালি দিয়ে কড়াইয়ে তার মা ভেজে রেখেছে।
আজ ভোম্বল সাদা বেগুন আশি টাকা দরে পাঁচ কিলো, সাদা সিম একশো টাকা দরে একশো গ্রাম, নিয়ে এসেছে। পঞ্চমী থাকতেই নতুন উনুনে তেল সিঁদুর দিয়ে বড়ো এ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়িতে কলাই সিদ্ধ হবে।
তিথি মেনে সব আয়োজন চলছে। তাড়াতাড়ি পঞ্চমী ছেড়ে যাবে তাই বাড়ীর রাস্তায় পুরোহিতের অপেক্ষায় ব’সে আছে। কতো পুরোহিত কেউ সাইকেলে, কেউ মোটরসাইকেলে ভোম্বলের সামনে দিয়ে পলক ফেলতে না ফেলতেই উধাও হয়ে যাচ্ছে। ভোম্বলের পুরোহিতের দেখা নাই। এদিকে সময় চলে যাচ্ছে পঞ্চমীর। তারপর দেখছে তার পুরোহিত নতুন মোটরসাইকেল চেপে আসছে। কি ব্যাপার তার বোধগম্য হচ্ছে না? এদিকে সময় নেই তাই ওকথা জিজ্ঞাসা ছেড়ে একেবারে প্রদীপ ও ধূপধুনো জ্বালিয়ে পুজো শুরু। তিন তুড়ি মেরে শাঁখে ফুঁ দিয়ে পুষ্পাঞ্জলির শেষে পুরোহিত দক্ষিনা নিয়ে চলে যাবার সময়,ভোম্বল আগ্রহী কি ব্যাপার জানতে?
পুরোহিত বললো, এখন বলার সময় নেই, যখন পুজোর চাল ফলমূল নিতে আসবো তখন বলবো।ভোম্বলের আর তর সয়না, বাধ্য হয়ে তাড়াতাড়ি পুরোহিত বললো তার কাহিনী। গীতাঞ্জলি ফ্ল্যাটের সামনে তার সাইকেলটা ভেঙে পড়লো। চিৎপটাং হয়ে পড়ে আছি, তখন ফ্ল্যাটের লোকজন আমার নামাবলী ও পৈতা দেখে বললো পেয়ে গেছি। এই ব’লে চ্যাংদোলা ক’রে এঘর তো ও ঘর করে সত্তরটি ফ্যামিলির পুজো সেরে পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা পেলাম।ওরাই ফ্ল্যাটের নীচে শোরুম থেকে এটা কিনে দিলো আর পঞ্চাশ লিটার পেট্রোল একদম ফ্রি। ভাঙা সাইকেলটা পাশের ভাঙাচোরা কেনার দোকানে পঞ্চাশ টাকা কিলো দরে বেঁচে দিয়ে তোমার বাড়ি এলাম। এবার থেকে আর লেট হবে না। যথাসময়ে পুজো পাঠ করে দেবো সবার। ভোম্বলের চক্ষু চড়কগাছ, পুরোহিত সরস্বতীর বরপুত্র দেখছি। আমরা আরাধনা করছি মায়ের আর দেবী উজাড় করে ঢেলে দিচ্ছেন পুরোহিতে। এবার যদি জন্ম নিই তাহলে পুরোহিত হবো। বিনি পয়সার ব্যবসা। এতো টাকা বা সুদ ব্যাঙ্কের দেওয়ার ক্ষমতা নেই।
এদিকে উনুনে নতুন হাঁড়িতে কলাইসেদ্ধ শেষ করে তার মা একটা ঘরে ঢেকে রেখে দিয়েছে। ষষ্ঠীর সকালে মা ষষ্ঠীকে দিয়ে আমাদের গুষ্টির সেবা হবে। পরের দিন শীতলা ষষ্ঠী, ঠাকুর মায়ের নেশা চা খাওয়ার কিন্তু উনুনের ধর্মঘট।তাই তার ঠাকুরমা একটি স্টিলের বাটিতে এক কাপ জল চিনি চা পাতা মিশিয়ে উঠোনে সূর্য্যের তাপে দিয়ে রেখেছে। ভোম্বল সেও সূর্য্যের দিকে মুখ করে মুড়ি কলাই সেদ্ধ মেখে পিণ্ডি চটকাতে লাগলো।তেল পেঁয়াজ লঙ্কা লবণ দিয়ে সবকিছু মেখে খাওয়া শুরু করলো।একটিন মুড়ি নিমেষেই ভোম্বল খেয়ে ফেললো। ঠাকুরমার চা কিন্তু এখনও কিছুতেই গরম হচ্ছে না। ভোম্বল তার ঠাকুরমাকে বললো তুমি আমার পিঠে চাপিয়ে দিও অথবা শুয়ে পড়ছি পেটে চাপিয়ে দাও গরম হবে তাড়াতাড়ি। ঠাকুরমার উক্তি,তুই ঠাণ্ডা কলাই সেদ্ধ খেয়েছিস তাই তোর শরীরে চা গরম হবে না। বরং আমি ছেঁকে চা মুখে পুরলে মুখের উত্তাপেই গরম লাগবে।
ভোম্বল বললো – ভোজের শেষে আইসক্রিম দেই কিন্তু এখানে ঠাণ্ডা আগে তারপর গরম। ঠাকুরমা তুমি এবার থেকে শীতলা ষষ্ঠী বাদ দিয়ে উগ্রচণ্ডির পুজো করিও। একে তো ঠাণ্ডায় কুপোকাত তার উপরে ঠাণ্ডা। মা শীতলার কি ঠাণ্ডা লাগে না? এসব পাঠ তুলে দেওয়া ভালো। গরম গরম খাবার শরীরে শক্তি আনে আর বাসি ঠাণ্ডা খাবার শরীরের বিষক্রিয়া শুরু করে। ঠাকুরমা দেখো দেখো ঠাকুরবাবা তোমার চেয়ে বুদ্ধিমান? বিড়ি ফুঁকে নেশা মিটিয়ে শরীর গরম করছে,আর তুমি বারো হাত কাপড়েও ন্যাংটা?তাপ নিতে ও দিতেও শিখলে না? পতির পূণ্যে সতীর পূণ্য! তাহলে ওই চা পান বাদ দিয়ে ধুমপানে আগ্রহী হও। জীবনের সুখ শান্তি ওখানেই আছে। বিড়িতে আছে সুখটান, তাই ঠাকুরবাবার বিড়িতেও তোমার ভাগ আছে! তুমি না তার অর্ধাঙ্গিনী?