বাবুল রানা, মধুপুর টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের মধুপুরে সাংস্কৃতিক মনা বেশ কিছু ভক্তদের উদ্যোগে ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় লালন সংঘ নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। সংগঠনটি
প্রতিষ্ঠার পর থেকে মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে লালন স্মরণোৎসব নামে দুইবার বৃহৎ পরিষরে লালন সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে।
এরই ধারাবাহিকতায় মধুপুর লালন সংঘ প্রতি বছরের ন্যায় এবারও লালন স্মরণোৎসব’ ২০২৫ নামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আয়োজক কমিটির আহবায়ক
মো. সবুজ মিয়া জানান, অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং তিনি সম্মতি জ্ঞাপন করেন।
তিনি আরও জানান, প্রতি বছরের ন্যায় ১২ ফেব্রুয়ারি মোতাবেক আজ বুধবার রাত ৮টা থেকে শুরু হবে লালন স্মরণোৎসব/২০২৫ উপলক্ষে রাতভর লালন সংগীতের অনুষ্ঠান। বরাবরের মতো আয়োজক কমিটি বাসস্ট্যান্ডে মঞ্চ ও দর্শকগ্যালারি তৈরি করেন। কিন্তু হঠাৎ করেই মধুপুর হেফাজতে ইসলাম আমাদের অনুষ্ঠান নিয়ে আপত্তি জানিয়ে অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার জন্য প্রশাসনের নিকট আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে অনুষ্ঠান স্থগিত করে দেন।
সবুজ মিয়া জানান, এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে আগে থেকেই ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দগন অসম্মতি জানিয়ে আসছেন। এনিয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বাদ আসর মধুপুর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি জাকির হোসেন সরকার দু’পক্ষদ্বয়কে সমঝোতার জন্য আলোচনায় বসার ব্যবস্থা করেন।
উক্ত আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন,
উপজেলা হেফাজতে ইসলামীর সভাপতি মুফতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মাও. মাহমুদুল্লাহ, কওমি উলামা পরিষদের সভাপতি মাও. সোলায়মান কাসেমীসহ আরও অনেকে। অন্যদিকে লালন সংঘ থেকে উপস্থিত ছিলেন, লালন সংঘের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন তরফদার এবং অনুষ্ঠানের আহবায়ক মো. সবুজ মিয়া।
আলোচনায় ইসলামিক দলগুলোর নের্তৃবৃন্দ জানান, লালন এর মতাদর্শ নাজায়েজ, কুফরি বা শিরক। তারা এই ভ্রান্ত মতাদর্শ মধুপুরে প্রচার করতে দিবেন না। এর পরিপ্রেক্ষিতে লালন সংঘের নেতৃবৃন্দরা বলেন, আমরা এখানে মতাদর্শ প্রচারের জন্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করিনি। এখানে লালন এর মতাদর্শ নিয়ে কোন আলোচনা ইতোপূর্বে হয়নি এবারও হবে না। আমরা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করি শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য। এছাড়া যে গান গুলো নিয়ে তাদের আপত্তি রয়েছে আমরা সে ধরনের কোনো গান অনুষ্ঠানে পরিবেশন করবো না।
ইসলামি দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামীকাল বেলা ১১টায় হেফাজত, কওমি উলামা, ইসলামি আন্দোলন মিলে মিটিং করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। কিন্তু পরবর্তীতে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি বিধায় আমরা দুপুরের পর থেকে মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে নির্ধারিত স্থানে মঞ্চের কাজ শুরু করি। হঠাৎ করে বিকেলে জানতে পারি মধুপুর হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে লালন স্মরণোৎসব’ স্থগিতের জন্য প্রশাসনের নিকট আবেদন করেছেন।
মধুপুরের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে কোনো অবনতি না হয় সেই লক্ষে আমরা অনুষ্ঠান স্থগিত ঘোষণা করি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মধুপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় লালন ভক্তদের উপচে পড়া ভীড়। নানা গুঞ্জনে ভারী হয়ে উঠেছে বাসস্ট্যান্ডের চায়ের দোকান গুলো। অনেকে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন বাসাবাড়িতে।