১৪/০২/২০২৫
“ভোম্বল সবার কাক্কু”
রম্যরচনা
অরবিন্দ সরকার
বহরমপুর,মুর্শিদাবাদ।
ভোম্বল দাস, একটা কোম্পানির মালিক। অবশ্য তাকে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।আসল মালিকের নাম অতিভেকবাবু। মালিক প্রশাসনের বড়ো মাথা। যতো বিভাগের চুরি তার ভাগের মালামালের হিসেব রাখতো এই ভোম্বল কাকু। প্রশাসনিক নেত্রীর মুখে কখনো কখনো কাক্ কাক্ কাক্কু উ উ র রব শুনতে পাওয়া যেতো। এক তদন্ত কমিটি আদালতে দায়িত্ব পেয়ে, বহু অভিযোগে তার কাছে হাজির। ভোম্বল কাকু তখন বলে, আমার কাছে এসেছো বেশ করেছো! কিন্তু মালিকের নাগাল তোমরা পাবে না।পেলেও তার টিকি ছুঁতে ছুঁতে পগাড়পার।কারণ তিনি অতি- ভেকধারী। নামের সঙ্গে মিল আছে তার। টাকা দিয়ে সবার মুখে সেলোটেপ পরিয়ে দেয়। তদন্ত মাঝপথে হারিয়ে যাবে রাস্তা না পেয়ে! অথবা লোক জড়ো করে ঠেঙিয়ে এমন মার তোমাদের দেবে যে বাপের নাম ভুলিয়ে দেবে। তোমরা কোথায় এসেছো নিজেই জানো না? কেটে পড়ো, কেটে পড়ো।
ভোম্বল কাকুর সঙ্গে সব চোরেদের সদ্ভাব। ফোনে ফোনে কথা তার সঙ্গে। ডায়েরির পাতায় হিসেব নিকেষ করা থাকে। তবে সাংকেতিক নামে টাকা পয়সা লেনদেন হয়। তদন্ত কমিটি আদালতে বারবার বলে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তদন্ত কমিটির নায়ক, আসলে তদন্ত ধামাচাপা দিতে টাকা খেয়ে ব’সে আছে! আদালত নাছোড়বান্দা, তাকে ধরে এনে হাজির করার নোটিশ জারি করেছে। ভোম্বল কাকু এবার বেকায়দায়। দে ছুট লাগিয়ে বাবার হাসপাতালে ভর্তি। গোপন রোগে আচ্ছন্ন,মুখ দিয়ে নাকি কথা বের হচ্ছে না? তদন্ত কমিটি আসে,আর হাসপাতাল তাকে ঘিরে রাখে। হাসপাতালের বড়কর্তা , বিভিন্ন ডাক্তার দিয়ে, বিভিন্ন অসুখ দেখিয়ে প্রেসক্রিপশনে কাকুর কঠিন না জানা অসুখের জন্য বিশ্রাম লেখে। আদালত তাকে বেঁধে আনবে কি, তার হাসপাতালের ঘরে ঢুকে তদন্ত করার আদেশ খারিজ হয়ে যায়। নিরুপায় তদন্তের গতি বাড়াতে আদালত ওই তদন্ত কমিটির কর্তাকে তিরষ্কার ক’রে দল থেকে ছেঁটে, নতুন নেতা হাজির করিয়ে হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতালের সঙ্গে কাকুর মনিবের গাঁটছড়া বন্ধন। তদন্ত কমিটিকে দেখে ভোম্বল তড়িঘড়ি এক মহিলার বেডে, তাকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ে। বেগতিক দেখে তদন্ত কমিটি আদালতে জানাই যে পুরুষ বিভাগ ছেড়ে কাকুকে মহিলা বেড়ে মহিলার সঙ্গে শুয়ে থাকতে দেখা গেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আদালতকে জানাই, জরুরি ভিত্তিতে আসন না পেয়ে তাকে মহিলা বেডে দেওয়া হয়েছে। ওখানে অবশ্য প্রেম পিরিতি করার মতো কাকুর অবস্থা নাই। আই সি ইউ তে যখন তখন ভর্তি করাতে হতে পারে এমন অবস্থা কাক্কুর।
দুদিন পর আবার তদন্ত কমিটির লোকজন গেলে ভোম্বল কাকু ছুটে গিয়ে আই,সি,ইউতে ঢুকে নল নিয়ে বসে আছে। তদন্ত কমিটির ওই ঘরে প্রবেশ নিষেধ,কারন বাইরের কেউ ঘরে ঢুকলে ইনফেকশন্ হ’তে পারে! কাকুর জোড়া মোবাইল, তদন্ত কমিটি বাজেয়াপ্ত করে। সেখানে অনেক তথ্য মিলেছে এবং ভোম্বল কাকুর মোবাইলে কথোপকথন উদ্ধার করেছে। আদালতে প্রমাণ চাই যে ওটা ভোম্বল কাকুর কণ্ঠস্বর। হাসপাতালে লুকোচুরি ভোম্বলের এখন নেশা ও পেষা হ’য়ে গেছে। আদালত কাক্কুর সব চালাকি ও হাসপাতালের সুপার সন্দেহদীপের সঙ্গে তার গিঁটবন্ধন বুঝতে পেরে রুদ্ধদ্বার কক্ষে রায় দেন যে এক্ষুনি গিয়ে কাক্কুকে তুলে নিয়ে তার গলার স্বরের নমুনা পরীক্ষা করতে হবে। কেন্দ্রীয় পুলিশ সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে চুপিসারে ঢুকে কাকুকে ঘাড় ধরে নিয়ে আসে। কাক্কু এবার আঁচলে লুকোবার পথ পায়নি। তদন্ত কমিটি তার পরীক্ষা ক’রে আবার হাসপাতালে ফেরৎ দিয়ে আসে। তখন এক নার্স বলে শুয়ে পড়ুন,আপনার কষ্ট হচ্ছে কি? কাক্কু বললো এর আগে কোথায় ছিলে? আমার কষ্ট ওরা নিঙড়ে বের করে নিয়েছে। এখন আর তোমাদের দরকার নাই। এখন হাসপাতালে আর লুকোচুরি খেলতে হবে না। এবার তোমাদের সঙ্গে প্রেম পিরিতির গল্প করতে পারবো। আবার হয়তো আদালতে চ্যাংদোলা ক’রে নিয়ে যাবে, তথ্য মিলে গেলে! অতিভেক মনিব হয়তো আমার কিছু ব্যবস্থা করবেই! নাহলে যে সেও জড়িয়ে যাবে! তাই আদালতে খেলা শুরু হবে। মামলার দিন পিছিয়ে পিছিয়ে ফেলার ব্যবস্থা হবে। এবিষয়ে মনিবেরা সিদ্ধহস্ত। গোপনে এমন টাকার বাণ্ডিল দেখাবে যে বিচারক মামলার দিন ফেলতেই ভুলে যাবে। এবার থেকে দিন পড়বে না, বছর পড়বে! কারণ একবছর অন্তর দিন ফেলতে বাধ্য করা হবে বিচারের।
প্রবাদ বাক্য কি মনে নেই “টাকা দিলে বাঘের দুধ মেলে”! আর “বিচারের বাণী নীরবে কাঁদে” এই কথা পিতৃপুরুষের আমল থেকে শোনা যায়।