তৌফিকুর রহমান তাহের ::(সুনামগঞ্জ)দিরাই-শাল্লা প্রতিনিধি, নদীর তলদেশ অনেকটাই ভরাট হয়ে গেছে। তার উপর নদীর দু’পাড়ও হয়ে গেছে সংকুচিত। ফলে পাহাড়ি ঢলের পানি ধারণ করার সক্ষমতাও দিনদিন হারিয়ে ফেলতে বসেছে দাঁড়াইন নদী। ওই নদীর পাড়ঘেঁসেই হাঁ করে বসে আছে রাক্ষসী মাদারিয়া বাঁধ। একসময়ের আতঙ্কের নামই ছিল এই মাদারিয়া। বাঁধ রক্ষা করতে করা হত মাইকিং। উপজেলাবাসী উড়া-কোদাল, চিড়ামুড়ি সঙ্গে নিয়ে আসত এই বাঁধ রক্ষা করতে। রাতদিন মাটি কাটতে হত হাজারো কৃষকদেরকে। এগুলো ২০১৭সালের পূর্বের কথা।
সেই ছায়ার হাওরের অন্তর্গত মাদারিয়া বাঁধের গোড়ায় এবার বড়ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। নদীর পানি ধীরেধীরে কমতে শুরু করায় ফাটল ক্রমেই বড় হচ্ছে। বৃষ্টি হলে এই ফাটল ধসে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। ফলে বাঁধের গোড়া আরও দুর্বল হয়ে ভেঙে যেতে পারে বাঁধ। বাঁধে ভাঙার আরেক কারণ বাঁধের পশ্চিম অংশের গোড়া রয়েছে ৬০ফুট গভরতা। একই অবস্থা বাঁধের পূর্বদিকেও। স্থানীয়রা কৃষকরা বলছেন এখনই বাঁধের দু’পাশে নতুন করে বাঁশের আড়ি ও ফাটলের জায়গায় মাটি ফেলে ভরাট না করলে এ বাঁধের উপর ভরসা করা যায় না বলে অভিযোগ তাদের। অন্যদিকে উদগল হাওর ডুবে গেলেই ছায়ার হাওরকে আর বাঁচানো যাবে। ফলে ছায়ার হাওরেকে রক্ষা করতে উদগলবিল হাওরে প্রায় কোটি টাকার বিকল্প বাঁধ দিত পাউবো। কিন্তু এবছর দিরাই উপজেলার জয়পুর গ্রামের ক্লোজারে কোন প্রকল্প দেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে এদিকেও ঝুঁকিতে রয়েছে ছায়ার হাওর।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের যুক্তি প্রকল্পের ব্যয় কমানোর জন্যই জয়পুরে পিআইসি দেয়া হয়নি। এটি উর্ধতন কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তেই বাদ দেয়া হয়েছে।
এদিকে মাদারিয়া বাঁধের ৫৭নং পিআইসির সভাপতি আব্দুল আজিজ তালুকদার বলেন মাদারিয়া বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ এটি এলাকার সবাই জানে। বাঁধের পূর্ব পশ্চিমে ডুয়ার। এরমাঝে বাঁধের পূর্বদিকে ফাটল দেখা দিয়েছে। আমার পিআইসির বরাদ্দ দিছে মাত্র ৪লাখ ৭০হাজার টাকা। এরমধ্যে আমি আনন্দপুর খেলার মাঠ থেকে হাইওয়ে সড়ক পর্যন্ত ২০০ মিটার বাঁধের কাজ করেছি। সুখলাইন গ্রামের বাঁধেও কাজ করেছি। এখন ফাটল বন্ধ করতে ও বাঁশের আড়ি দিতে গেলে এখন আমার জমি বিক্রি করতে হবে। অথচ মাদারিয়া বাঁধে অন্যান্য বছর ২৪লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হত। বাঁধের উভয়পাশে গত বছরের বাঁশের আড়ির গোড়া পচে গিয়ে ভেঙে গেছে বাঁশের আড়ি। আমি কী করব বলুন।
জানা যায়, ছায়ার হাওর উপ প্রকল্পের ৫৭নং পিআইসির ১৭৬ মিটার বাঁধ মেরামতের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪লাখ ৭৬হাজার টাকা। এবিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা (এসও) রিপন আলী বলেন তাদের বাঁধে ১ফুট মাটি ধরা হয়েছে। আজকালের মধ্যে গিয়ে আমি দেখে আসব। প্রয়োজনে নতুন বাঁশের আড়ি ও ফাটলকৃত জায়গায় টেকসই করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন বলে জানান তিনি। চানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়াস চন্দ্র দাস বলেন ঝুঁকিপূর্ণ হলে বাঁধকে টেকসই করার জন্য কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।
পাউবোর তথ্য মতে এখন পর্যন্ত উপজেলায় প্রায় ৭০ভাগ মাটি কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি। দ্বিমত পোষণ করে হাওর বাঁচাও আন্দোলন উপজেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তরুণ কান্তি দাস বলেন আমাদের সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিয়নের সদস্যদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে কাজ হয়েছে মাত্র ৫০ভাগ। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। মাদারিয়া বাঁধকে টেকসই করার জন্য যা যা প্রয়োজন তা না করলে যেকোন দুর্ঘটনার দায় পানি উন্নয়ন বোর্ডকেই নিতে হবে হুঁশিয়ার দেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন সংগঠনের।
উল্লেখ, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে ফসলরক্ষায় ৮৪কিঃমিঃ বাঁধ মেরামতে ১১৫টি পিআইসির বিপরীতে বরাদ্দ প্রায় ২৫কোটি টাকা।