প্রতিনিধি আখলু খাঁন ওসমানীনগর সিলেট: সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় পলাতক শিক্ষকের বিরোদ্ধে বিদ্যালয়ের সরকারী বরাদ্ধের ২১ লক্ষ টাকা দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। পলাতক দূর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষকের নাম নুরুল ইসলাম। তিনি উপজেলার প্রচীনতম বিদ্যাপীট শরৎ সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পলাতক প্রধান শিক্ষকের বিরোদ্ধে গত বছরের ৯ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। অভিযোগ দাখিলের ৩ মাসেও কোন প্রতিকার হয়নি, তাই শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান।
সরজমিন পরিদর্শন কালে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিবাক সুত্রে জানাযায়,জুলাই-আগষ্টের ছাত্র আন্দোলনের চাপের মুখে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর উপজেলার প্রাচীনত বিদ্যাপীট শরৎ সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন। গনঅভুত্থানের আগে আওয়ামীলীগের এই শিক্ষক বিদ্যালয়কে দূর্নীতির আখড়ায় পরিনত করে গড়ে তুলেছিলেন আওয়ামীলীগের শক্ত সিন্ডিকেট। সরকারী বরাদ্ধ দূর্নীতি,স্বজনপ্রীতি,দলীয় প্রভাব বিস্তার,সুন্দরী শিক্ষার্থীদের সাথে অশ্লীল বচন ভঙ্গিতে কথা বলে নানা সময় অনৈতিক প্রস্তাবের অভিযোগ সহ গুরুতর অভিযোগে গত বছরের (৯ অক্টোবর)ওসমানীনগর উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপমা দাসের কাছে ৯ টি অভিযোগে লিখিত অভিযোগ দাখিল করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দাখিলকৃত অভিযোগে জেলা যুবলীগের সভাপতি ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদের অপসারিত উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম আহমদ ভিপি,সাদিপুর ইউনিয়নের অপসারিত ইউপি চেয়ারম্যান সাহেদ আহমদ ভিপি(মুছা)পলাতক প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলামের যোগসুত্রে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে আসা সরকারী বরাদ্ধের ১৭ লক্ষ টাকার মধ্যে মাত্র ২ লক্ষ টাকার কাজ, একই বিদ্যালয়ের মাঠ উন্নয়নে সরকারী বরাদ্ধের ৭ লক্ষ টাকা মধ্যে মাত্র ১ লক্ষ টাকার কাজ করে দুই বরাদ্ধে মোট ২১ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এছাড়া প্রধান শিক্ষকের বিরোদ্ধে শিক্ষার্থীদের অন্যান্য অভিযোগের মধ্যে গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে ক্লাসে মেয়েদের সাথে অকারণে,অপ্রয়োজনে গায়ে হাত দেওয়া,সুন্দরী শিক্ষার্থীদের মুঠোফোন সংগ্রহ করে রাতে হোয়াটসঅ্যাপে অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়া,বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের বিরোদ্বে অবস্থান নিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষাকর্মকর্তা সত্য ব্রত রায়ের মাধ্যমে আন্দোলন বিমুখে চাপ প্রয়োগ করা। সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই দলীয় প্রভাবে বিধিবহির্ভূতভাবে প্রধান শিক্ষক হওয়া,প্রধান শিক্ষক পদে থেকে লাভজনক ব্যবসা প্রতিষ্টান পরিচালনা করা ও স্কুলের ফান্ডের টাকা নিজ ব্যবসায় ইনভেষ্ট করা সহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরোদ্ধে। এর আগে তার অপসারণ চেয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা অবরোধ করলে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে প্রধান শিক্ষকের অপসারণের নিশ্চয়তা দিলে শিক্ষার্থীরা তাদের অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে।
দূর্নীতিবাজ পলাতক প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলামের অতীতের এসব অন্যায় কর্মকান্ডের সাথে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষাকর্মকর্তা সত্য ব্রত রায়ের যোগসুত্র রয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে আন্দোলনে যুক্ত হতে না পারে সে ক্ষেত্রে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উপজেলা পরিষদ থেকে আওয়ামী প্রশাসনের কাজ করে শিক্ষার্থী ও অভিবাকদের নানা ভয় ভীতি প্রদর্শন করেছিলেন। বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির অভিবাক সদস্য মো: ফয়জুল হক বলেন মাধ্যমিক শিক্ষাকর্মতার সাথে পলাতক প্রধান শিক্ষকের যোগসুত্র রয়েছে। কারন মাধ্যমিক শিক্ষাকর্মতা ও প্রধান শিক্ষক দুজনই জুলাই-আগষ্টের ছাত্রআন্দোলন বিরোধী ছিলেন। তাদের দলীয় সখ্যতায় পলাতক প্রধান শিক্ষককে বিদ্যলয়ে পুনরায় পূর্ণবাসনের প্রশাসনিক চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সত্য ব্রত রায় এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, চাইলেই একজন প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত করা কিংবা চাকুরিচ্যত করা যায়না। সময় এবং অপেক্ষার প্রয়োজন হয়। অভিযোক্ত পলাতক প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমি পারিবারিক কারণে কয়েক দফা ছুটিতে আছি,এবং আমার প্রতিটি ছুটি মাধ্যমিক শিক্ষাকর্মকর্তার মাধ্যমেই পাশ হয়েছে। চাইলে আপনি তার কাছ থেকে রেকর্ড দেখে নিতে পারেন। সপ্তম,অষ্টম,নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিডিও বক্তব্যে বলেন,পলাতক প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম স্যার,আমাদের আদর্শ নয়,তিনি ছিলেন আওয়ামী লুটেরা চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য,আমারা শিক্ষার্থীরা পলাতক প্রধান শিক্ষকের সুষ্ট বিচার প্রত্যাশা করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন,প্রধান শিক্ষক পলাতকের বিষয়টি আমি শুনেছি,প্রধান শিক্ষক কর্তৃক বিদ্যালয়ের বেআইনী কোনৎ কার্যক্রম আমরা সমর্থন করিনা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও পলাতক প্রধান শিক্ষকের বিরোদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।