মোঃ-জাহিদুল ইসলাম রুমন,সীতাকুণ্ড চট্টগ্রাম : সীতাকুণ্ডের এই চন্দ্রনাথ ধামে প্রতিবছর শিবরাত্রি তথা শিবচতুর্দশী তিথিতে বিশেষ পূজা হয়; এই পূজাকে কেন্দ্র করে সীতাকুণ্ডে বিশাল মেলা হয়। সীতাকুন্ড চন্দ্রনাথ পাহাড় এলাকা বসবাসকারী হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা প্রতি বছর বাংলা ফাল্গুন মাসে (ইংরেজি ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস) বড় ধরনের একটি মেলার আয়োজন করে থাকে। যেটি শিবচতুর্দশী মেলা নামে পরিচিত।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্য তীর্থস্থান চন্দ্রনাথ পাহাড় ও বিভিন্ন মঠ মন্দির এখানে রয়েছে,এই মেলা ছাড়াও প্রতিদিন দূর দূরান্ত ও বিভিন্ন জেলা থেকে মঠ-মন্দির গুলোতে পূজা দিতে আসে পূজারী রা,কেউ বা আসে মানব করতে।যখন এ মেলা শুরু হয় পুরো এলাকা জুড়ে সিসি টিভি সহ,আইন শৃঙ্খলা বাহিনি ও তৎপর থাকে মেলার এলাকা জুড়ে থাকে হাজার খানেক সেচ্ছাসেবী ও বিভিন্ন সংগঠন।
মেলার বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান বলেন, সুষ্ঠ -সুন্দরভাবে যাতে শিবচতুর্দশী মেলা সম্পন্ন হয়, সে লক্ষ্যে সব দপ্তরের দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মজিবুর রহমান জানান, শিবচতুর্দশী মেলা উপলক্ষে এবার মোট ৬০০ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। মেলায় জনসমাগম গতবারের তুলনায় বেশি হবে ধরে নিয়েই এই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, মেলা কেন্দ্রিক সকল প্রস্তুতি আমরা সম্পন্ন করেছি। সকলে মিলে একটি সুন্দর-সুষ্ঠ মেলা সম্পন্ন করতে মেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব রকমের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধাম শিবচতুর্দশী মেলায় দোকান, যানবাহন বা অন্য কোনো কিছু থেকে যেন কোনো চাঁদাবাজি না হয়।
তিনি সকল রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ কর্মকর্তা ও মেলার স্বেচ্ছাসেবকদের কঠোরভাবে মনিটরিং করার আহবান জানান । কেউ চাঁদাবাজি করলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান।
এক্ষেত্রে কোনো দলীয় তদবির গ্রহণ করা হবে না। বরং কেউ তদবির করলে তাকে তদবিরকারী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, এজন্য আমি একটি ফরম তৈরি করেছি। সেখানে তদবিরকারীকে স্বাক্ষর করতে হবে। অপরাধীকে বাঁচানোর সহযোগী হিসেবে তদবিরকারীর নাম স্থায়ীভাবে লিখে রাখা হবে যেন ভবিষ্যতে তদবিরকারীও ভালো কোনো অবস্থানে যেতে না পারে।
চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার আরও বলেন, আমি চাই এবারের মেলাটি হবে সম্প্রীতির উদাহরণ। এখানে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ পূণ্যার্থী আসেন। তাদেরকে নিরাপদে তীর্থ করে ফিরে যেতে আমরা কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেবো। পুলিশ ১১টি ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করবে।
চন্দ্রনাথ পাহাড়ে বষস্ক ও অসুস্হ হলে তাদের জন্য রয়েছে চান্দের গাড়ি তথা জিপ, এ গাড়ি গুলো রেল লাইনের কালি মন্দির থেকে শুরু করে ইকোপার্ক দিয়ে উপরে মন্দিরে যাতায়াত করে।এ মেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দেশ থেকেও আসে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
প্রায় ৮-১০লাখ পূর্নার্থী এ মেলায় আসে,মেলা চলাকালীন আন্তনগর ট্রেন ও সীতাকুণ্ড রেল স্টেশনে দাড়ায় ৩/৪দিন যেন দূর দূরান্ত থেকে সহজে যাতায়াত করতে পারে, পূজা শুরু হওয়ার ৩দিন পর আস্তে আস্তে কমতে শুরু করে সনাতনধর্মাবলম্বীরা। তবে কেনাকাটায় ব্যাস্ত মগ্ন থাকে এলাকাবাসীও। আবার ১৫ দিন পর শুরু হয় এক দিনের দোলপূর্ণিমা মেলার। এরই মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ হয় এই পূজা।