মো: মফিদুল ইসলাম সরকার : আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, বারাক ওবামা এবং বাইডেনের সঙ্গে কাজ করেছেন বিশ্ববিখ্যাত পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞানী এবং ক্যালিফোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহকারী অধ্যাপক ড. রাস বিহারী ঘোষ।
তিনি বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার ওসমানপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন।
তার বাবা রজনী কান্ত এবং মাতানাম সুশীলা ষোষ ।
তিনি বাজিত পুর থেকে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করেন।তারপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইস এসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
রসায়নে প্রাথমিক ভাবে শিক্ষকতার মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেন এবং মাত্র ২৪ বছর বয়সে বাংলা ভাষায় একটি রসায়ন বই লেখেন বিএসসি শিক্ষার্থীদের জন্য ।
পরবর্তীতে তিনি ইন্টারমিডিয়েটের শিক্ষার্থীদের জন্যও রসায়নের এই বইটি লেখেন। যা জনপ্রিয়তা লাভ করে ব্যাপকভাবে। ড. রাসবিহারী ঘোষ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৭১সালে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ইংল্যান্ডের সলফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন এবং মেরসি নদী ব্যবস্থায় গবেষণার জন্য বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসে সান ফ্রান্সিসকো বে ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে জলবায়ু ও পরিবেশের উপর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন, যা নাসা দ্বারা আর্থিক ফান্ডিং করা হয়।
অধ্যাপক ডঃ রাসবিহারী ঘোষ ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ও ক্যালিফোর্নিয়া পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থায় গ্রাউন্ডওয়াটার ও সুপারফান্ড সাইটের সমস্যা সমাধানে উপরও কাজ করেন। তিনি নাগরিক অধিকার আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ফলে ড. ঘোষের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়। কিন্তু তিনি ৪২ বছর ধরে অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান এককভাবে। যা চলমান আছে আমেরিকার এজটি আদালতে।
২০০০ সালে অধ্যাপক ড. রাসবিহারী ঘোষ রাজ্য চাকরি ছেড়ে দিয়ে অলাভজনক কাজ শুরু করেন এবং নোবেল পুরস্কার বিজয়ী গ্লেন টি সেবর্গ ও চার্লস এইচ. টাউনসের সাথে মিলিত হয়ে আন্তর্জাতিক ইনস্টিটিউট অফ বেঙ্গল বেসিন (আইআইবিবি) প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর জীবনব্যাপী এই পরিবেশ বিজ্ঞানে নির্মল অবদানের জন্য, চার্লস এইচ. টাউনস ২০০৭ সালে তাঁর নামে একটি চেয়ার প্রতিষ্ঠা করেন।
ডঃ ঘোষ ৩৫ বছর সময় নিয়ে হাইড্রোগ্রামিন প্রযুক্তি উন্নয়ন করেন যা ভূগর্ভস্থ জলাশয় পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে এবং বৈশ্বিক জল সংকট ও তাপীয়তার মোকাবিলা করে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে, তিনি বাজিতপুর জেলা (৬টি উপজেলা নিয়ে গঠিত) তৈরির বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান হন এবং সেখানে যুক্ত আছেন ট্রেজারার হিসেবে ড. যাকিয়া সুমি সেতু এবং অধ্যাপক কবি ওয়াহিদুজ্জামান খান, কৃষ্ণ চন্দ্র দাস,আ: বাছেত এলাকার সচেতন নাগরিক। ড. রাসবিহারী ঘোষ একজন বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী হিসেবে নন্দিত। পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার জন্য তিনি উচ্চতর মর্যাদা পেয়েছেন। যা বাংলাদেশের গর্ব এবং গৌরবের। ড. ঘোষ তাঁর বিপ্লবী আবিষ্কার, হাইড্রোগ্রামীন প্রযুক্তি -এর জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এই উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ভূগর্ভস্থ জলভাণ্ডারের অখণ্ডতা রক্ষার একটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি সরবরাহ করে এবং জল বিশুদ্ধকরণ ও পুনঃপ্রবেশের সক্ষমতা প্রদান করে। হাইড্রোগ্রামীন প্রযুক্তির বিশেষত্ব হল এটি ভূগর্ভস্থ জলাধারার বিশুদ্ধতা সংরক্ষণ এবং প্রাকৃতিকভাবে পুনঃস্থাপন সক্ষমতা প্রদান করে। তাছাড়া পানি বিশুদ্ধকরণ এবং পুনঃপ্রবেশ উভয় ক্ষেত্রেই এটি সমাধান প্রদান করে, যা টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ সংরক্ষণে সহায়ক। ড. ঘোষের এই সাফল্যমণ্ডিত কাজ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট নোবেলবিজয়ী বিজ্ঞানীদের প্রশংসা লাভ করেছে এবং তাঁরা ড. ঘোষের এই অবদানকে গুরুত্বের সঙ্গে সাদরে গ্রহণ করেছেন।
প্রযুক্তিগত অর্জনের পাশাপাশি, ড. ঘোষ আন্তর্জাতিক ইনস্টিটিউট বেঙ্গল অ্যান্ড হিমালয়া বেসিন (IIBHB) এর প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান। এটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান যা বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানীয় জল নিশ্চিত করতে কাজ করছে। ড. ঘোষের নেতৃত্বে, এই প্রতিষ্ঠান জল সংকট ও দূষণ সমস্যা সমাধানে নিরলসভাবে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞানীরা সহায়তা প্রদান করছেন। তাঁদের মধ্যে চার্লস টাউনস ড. ঘোষের অসাধারণ কাজের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন। ড. ঘোষের উদ্ভাবন এবং পানির গুণগত মান ও পরিবেশগত স্থিতিশীলতা নানা উন্নয়নকল্পে বিশ্বব্যাপী কিছু গুরুতর চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে। তাঁর এই অবদান শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক বোঝাপড়া উন্নত করে না, বরং গণমানুষের জন্য নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করার বাস্তবসম্মত সমাধান প্রদান করে। ফলে তাঁর এই অবদান সবার জন্য বিশেষ করে ।
এদিকে বিশ্ব বিখ্যাত পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞানী ড.রাস বিহারী ঘোষের হাতে গড়ে ওঠা ডক্টর ঘোষ সাইন্স এন্ড টেকনোলজিতে প্রতি বছরেই বিনা খরচে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন প্রায় আড়াই’শ শিক্ষার্থী ।
ড.রাস বিহারী ঘোষ জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার আলো ছড়াচাচ্ছেন। তিনি অসহায় এবং গরীবদ শিক্ষার্থীদের বিশেষভাবে সহযোগিতা করেন। বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন।
ড.রাস বিহারী ঘোষ ২০২০ খ্রি: কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের ওসমানপুর গ্রামে নিজ বাড়িতেই ডক্টর ঘোষ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি নামে একটি প্রতিষ্টান তৈরি করেনে।
বর্তমানে শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার প্রশিক্ষন, সেলাই মেশিন চালানো, বেসিক ইংরেজি, পরিবেশ বিজ্ঞান এবং হাইড্রোফ্লামিং সহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারচ্ছেন।
প্রতি বছর এখান থেকে প্রায় আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন।
এ ব্যাপারে ডক্টর ঘোষ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি প্রতিষ্ঠানের ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত) শুভম চন্দ্র দাস বলেন,আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি,বিশেষত শিক্ষার প্রসার এবং কর্মমুখী কাজের মাধ্যমে স্হানীয় ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশিক্ষন এবং বেকারত্ব দূরীকরনে কাজ করছি। আমাদেরকে সবসময় সহযোগিতা করছেন গণ মানুষের কবি অধ্যাপক কবি মো: ওয়াহিদুজ্জামান , হাফছা জাহান প্রিয়া, দূর্জয় চক্রবর্তী, জয় বিশ্বাস সহ এলকার অনকেই সহযোগিতা করছেন।