লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ানঃ বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন এবং শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় আগামী ১০৮৫ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে। মিশরের কায়রো শহরের প্রাণকেন্দ্রে ৯৭১ খ্রিস্টাব্দে ফাতিমি খলিফা আল-মুইয লি-দিনিল্লাহ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় শুধু ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির কেন্দ্র নয়, বরং সমগ্র মানবতার জন্য একটি উজ্জ্বল শিক্ষার বাতিঘর হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।
শুরুতে একটি মসজিদ হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও, দ্রুত তার প্রভাব বিস্তার করে আধুনিক বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম এবং সম্মানিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে আল-আজহার। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ইসলামের “ইলমের কাবা” বা জ্ঞানী ব্যক্তিদের মক্কা বলা হয়, যেখানে এক সময় কেবল ইসলামিক শিক্ষা দেয়া হত। তবে সময়ের সাথে সাথে এখানে গড়ে উঠেছে বৈশ্বিক শিক্ষার এক বিস্তৃত ক্ষেত্র, যেখানে গণিত, দর্শন, চিকিৎসা, রসায়ন, সমাজবিজ্ঞানসহ নানা শাখায় শিক্ষা দেওয়া হয়।
আজকের দিনে, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৩০ লক্ষ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে, যাদের মধ্যে বিশ্বের ১২০টিরও অধিক দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা অন্তর্ভুক্ত। এটি শুধুমাত্র মিশরীয়দের জন্য নয়, বরং বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য এক আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রমে আধুনিক শিক্ষার সাথে ইসলামী মূল্যবোধের সমন্বয়ে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, যার ফলে বিশ্বব্যাপী ইসলামী শিক্ষার সঠিক উপস্থাপন ও প্রয়োগের পথে আল-আজহার একটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া, আল-আজহারের শিক্ষকদের সংখ্যা ৫০,০০০-এরও অধিক। তারা কেবল ইসলামী শিক্ষার প্রতিপাদক নয়, বরং পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন শাস্ত্রের ওপর গবেষণায় নিযুক্ত আছেন। তাদের তত্ত্বাবধানে আজহারের শিক্ষার্থীরা শুধু ইসলামী ধর্মীয় জ্ঞানেই নয়, বরং আধুনিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, মানবিক বিজ্ঞান এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঐতিহ্য ও গবেষণার মাধ্যমে, আল-আজহার বিশ্বব্যাপী ইসলামী চিন্তা ও শান্তির এক অগ্রণী প্রতীক হিসেবে পরিচিত। এটি উগ্রতার বিরুদ্ধে এবং ইসলামের প্রকৃত শান্তির বার্তা প্রচারের জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আল-আজহার, ইসলামী সমাজে মধ্যপন্থার এক শক্তিশালী মঞ্চ হিসেবে তার অবস্থান অটুট রেখেছে এবং এক্ষেত্রে তা বিশ্বের মুসলিম জনগণের জন্য এক আদর্শ স্থানে পরিণত হয়েছে।
আজ, ১০৮৫ বছরের দীর্ঘ ইতিহাসের পরও, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় তার ঐতিহ্য ও মিশনের সাথে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে, একটি আলোকিত শিক্ষার প্রতীক হিসেবে, যা ইসলামী সভ্যতার এক মাইলফলক হয়ে থাকবে এবং ভবিষ্যতেও বিশ্বজুড়ে শিক্ষার পথপ্রদর্শক হিসেবে নিজেদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে।
লেখক, শিক্ষার্থী, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়,কায়রো মিশর