ওবাইদুল্লাহ আল মাহবুব, ইবি প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগ সংস্কারের নিয়ে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন করেছে বিভাগের দু-পক্ষের শিক্ষার্থীরা।একটি পক্ষ বিভাগের নাম পরিবর্তন করে সিলেবাস সংস্কারের দাবিতে এবং অপর পক্ষ বিভাগের স্বাতন্ত্র্য রক্ষার্থে মানববন্ধন করেছে৷
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনির ভবনের সামনে তারা এ কর্মসূচি পালন করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আল ফিকহ্ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগ দীর্ঘদিন গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আসছে ।তবে সম্প্রতি রমজানের ছুটির আগে শেষ কর্মদিবসে বিভাগের শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত নেন, ধর্মতত্ত্ব অনুষদের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় সভাপতির কাছে গিয়ে পরিবর্তনের দাবি জানায়। কিন্তু বিভাগ তা না মানায়, তারা প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে তারা ফিরে যায়।
পরবর্তীতে আজ আবারও আল-ফিকহ বিভাগকে থিওলজি অনুষদের অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে বিপক্ষে আন্দোলন করে উক্ত বিভাগের দু-পক্ষের শিক্ষার্থীরা।
আইন অনুষদের অভ্যন্তরেই থাকতে চাওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের ৩৪০০ নম্বরের আইন কোর্স পড়ানোর কথা থাকলেও আল ফিকহ বিভাগে পড়ানো হয় ২২০০ নম্বরের কোর্স। ১৩৬ ক্রেডিট পড়ানোর কথা থাকলেও তা পড়ানো হয় না। এ ছাড়া তীব্র সেশনজটে ভুগছেন শিক্ষার্থীরা। এসব সমস্যা নিয়ে বারবার বিভাগে দাবি জানানো হলেও কোনো উন্নতি হয়নি। বার কাউন্সিল চাইলে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের যেখানেই আইন পড়ানো হয় তার মান তদারকি করতে পারে। তাই ইবির আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগ ধর্মতত্ত্ব অনুষদভুক্ত করা হলে, বার কাউন্সিল চাইলে কোর্টে সনদ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ জন্য আমরা ধর্মতত্ত্ব অনুষদের মাধ্যমে ভর্তি পদ্ধতির বিরুদ্ধে। আমরা চাই বিগত বছরের মতো গুচ্ছের মাধ্যমে এই বিভাগের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হোক, আইন অনুষদে ভর্তির শর্তাবলি ব্যতীত অন্য কোনো শর্তাবলি আরোপ করা না হোক এবং সিলেবাস সংস্কার করে এলএলবি ডিগ্রির উপযোগী সিলেবাস প্রণয়ন করা হোক।’
এদিকে ধর্মতত্ত্ব অনুষদের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষের শিক্ষার্থীরা বলেন, 'আল-ফিকহ্ অ্যান্ড লিগাল স্টাডিজ বিভাগ শুরু থেকে একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । সে উদ্দেশ্য সাথে সামাঞ্জস্য রেখে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার নেয়া হতো। কিন্তু ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের পরে একটা স্বৈরাচারী প্রশাসন এসে আমাদের শিক্ষকদের কোনো পরামর্শ ছাড়াই পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনে। যে কারণে আমাদের বিভাগের স্বতন্ত্রতা নষ্ট হয়।
আগে যেখানে ভর্তি পরীক্ষায় আল-ফিকহ্ সংক্রান্ত ২০-২৫ টা প্রশ্ন থাকতো কিন্তু বর্তমানে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার কারণে জেনারেল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা চান্স পাচ্ছে যাদের অধিকাংশের আরবিতে তেমন জ্ঞানই নেই। আল-ফিকহ্ বিভাগে আবরিতে ২৩০০ মার্কের পরীক্ষা থাকে যারা আরবিতে অদক্ষ তার কীভাবে ফিকহ্ বুঝবে, কী করে একজন ফকিহ্ হিসেবে পরিচয় দিবে। যেটা আল-ফিকাহ্ বিভাগের সাথে একেবারেই যায় না। তাছাড়া আমাদের বিভাগটি আইন অনুষদের একটি বিশেষ সাহিত্য বিভাগ আর ফিকহ মূলত ইসলামী শরিয়াহ সংশ্লিষ্ট আর ইসলামী শরিয়াহ মানেই আরবি। প্রতিটি বিষয়ে পড়াশোনার জন্য বেসিক কিছু জ্ঞান থাকতে হয়। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের যেমন বিজ্ঞান বিষয়ে ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হয়, তেমনি ফিকহ পড়তে আসা শিক্ষার্থীদেরও আরবি জানা থাকতে হবে। ফ্যাসিস্ট আমলের সিদ্ধান্ত আমরা কোনভাবেই মানব না। বিভাগে যারা পড়াশোনা করতে আসবে, তারা যেন ন্যূনতম আরবি দক্ষতা নিয়ে আসে। মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীরা না আসায় বিভাগ স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্য হারাচ্ছে।’
এবিষয়ে সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. ফকরুল ইসলাম বলেন, একাডেমিক ভাবে যে দাবিটা গেছে সেটা একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে আলোচনার মাধ্যমে বিবেচনা করা হবে।