শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৫:২৫ অপরাহ্ন
English
ব্রেকিং নিউজ

শেষ প্রহরে এক নিঃসঙ্গ আত্মার চিরকালীন যাত্রা

Muktakathan News
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫
  • ৯ Time View

✍ লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ানঃ রাতের গভীরতা তখনও পুরোপুরি কাটেনি। আকাশের কোণে শেষ রাতের চাঁদ ম্লান আলো ছড়িয়ে রেখেছে। ফজরের আজান ভেসে আসছে দূর থেকে, কিন্তু আজ আমার ঘুম ভাঙছে না। চারপাশ নিস্তব্ধ, বাতাসে এক অদ্ভুত শূন্যতা।

মা এলেন, নরম হাতে আমার কপালে হাত রাখলেন। প্রতিদিনের মতো মিষ্টি কণ্ঠে ডাকলেন, “বাবা, ফজরের সময় হয়ে গেছে, উঠো!”কোনো সাড়া নেই।
তারপর মুহূর্তেই বদলে গেল পরিবেশ। মায়ের অস্থির চিৎকারে কেঁপে উঠলো পুরো ঘর। বাবা দৌড়ে এলেন, আমার নিথর দেহ দেখে তার শক্ত হৃদয়ও যেন ভেঙে টুকরো হয়ে গেল। ছোট বোনটা এল, আমার হাত ধরে ফিসফিস করে বলল, “ভাইয়া, একটু চোখ খুলে তাকাও, না! দেখো, আমি কাঁদছি…”
আমি সব শুনতে পাচ্ছিলাম, দেখতে পাচ্ছিলাম, কিন্তু কোনো উত্তর দিতে পারছিলাম না।
পরিবারের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে উঠলো। আত্মীয়-স্বজন ছুটে এলেন, কেউ মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল, কেউ চিৎকার করে বিলাপ করছিল।
তারপর আমাকে বিছানা থেকে শক্ত কাঠের খাটিয়ায় শুইয়ে দেওয়া হলো। আমার চেনা নরম বালিশ আর কম্বলের জায়গায় আজ কাঠের কঠিন স্পর্শ। গরম পানি আনা হলো, কয়েকজন আমার নিথর শরীরে পানি ঢালতে লাগলো।
আমি চিৎকার করে বলতে চাইলাম, “না! আমার শরীর পুড়ে যাচ্ছে! থামো!”
কিন্তু কেউ শুনলো না।
তারপর আমাকে সাদা কাফনের কাপড়ে মুড়িয়ে ফেলা হলো। বাবা আমার মুখে হাত বুলিয়ে ফিসফিস করে বললেন, “বাবা, এত চুপ কেন? একবার শুধু বলো, তুমি ভালো আছো…”
কিন্তু আমি তখনও নির্বাক।
জানাজার জন্য আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো। মা খাটিয়া আঁকড়ে ধরে কাঁদছিলেন, “আমার ছেলেকে নিয়ে যেও না! ও তো কিছুক্ষণ আগেও আমার সঙ্গে ছিল!”
কিন্তু তাকে সরিয়ে দেওয়া হলো। বাবা দাঁড়িয়ে ছিলেন নিশ্চুপ, দুই চোখ বেয়ে নেমে আসা অশ্রু গোপন করার ব্যর্থ চেষ্টা করছিলেন।
তারপর আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো সেই ছোট্ট, নিঃসঙ্গ গহ্বরে—আমার চিরস্থায়ী ঠিকানায়।
আমি আতঙ্কিত হয়ে উঠলাম। চিৎকার করে বলতে চাইলাম, “না! আমাকে এখানে রেখো না! আমি একা থাকতে পারবো না!”
কিন্তু কেউ শুনলো না।
বাবা, চাচারা কবরে নেমে এলেন। আমাকে দু’হাত দিয়ে মাটির গভীরে শুইয়ে দিলেন। চারপাশের অন্ধকার যেন আমাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। আমি কেঁপে উঠলাম, বলতে চাইলাম, “বাবা, আমাকে এখানে রেখো না! আমি তোমাদের সঙ্গে যেতে চাই!”
কিন্তু কেউ শুনলো না।
তারপর কাঠের তক্তা দিয়ে আমার উপর ঢেকে দেওয়া হলো। ধীরে ধীরে মাটির স্তূপ উঁচু হতে লাগলো। আলো কমে আসছিল, নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছিল। আমি হাত বাড়িয়ে দেখতে চাইলাম, কেউ আছে কি না, কিন্তু চারপাশে শুধু নিঃসীম অন্ধকার।
আমি শেষবারের মতো চিৎকার করে উঠলাম, “তোমরা কোথায় যাচ্ছো? আমাকে একা রেখে যেও না! আমি ভয় পাচ্ছি!”
কিন্তু সবাই চলে গেলো।
শুধু আমি পড়ে রইলাম নিঃসঙ্গ, একা। তখন আমার পাশে ছিল না মা-বাবা, না বন্ধু, না প্রিয়জন, না পৃথিবীর কোনো সান্ত্বনা। শুধু আমার আমলগুলো রয়ে গেলো সঙ্গী হয়ে।
হে আমার রব, সেদিন আমাকে একা রেখো না…

লেখক, শিক্ষার্থী, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো,মিশর।

Author

Please Share This News in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© Muktakathan Kalyan Foundation ©
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102