সারাদেশ

মধুপুরে ছেলের হাতে মা খুনের ঘটনায় ঘাতক ছেলে গ্রেফতার

  প্রতিনিধি ১৫ মার্চ ২০২৫ , ১০:৪৯:৫২ প্রিন্ট সংস্করণ

বাবুল রানা মধুপুর টাঙ্গাইলঃ টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলাধীন মহিষমারা ইউনিয়নের শালিখা গ্রামের পাগুখার মোড় এলাকায় ছেলে হাতে মা খুনের ঘটনায় রাতেই ঘাতক ছেলে রাজিবকে গ্রেফতার করেছে মধুপুর থানা পুলিশ। এঘটনায় মারাত্মক ভাবে আহত হয়েছেন ঘাতকের স্ত্রী শোভা।

শুক্রবার (১৪ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার শালিখা এলাকায় এ লোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটে বলে জানা যায়।
এলাকাবাসী জানান, শালিখা এলাকার দিলদার হোসেন খায়রুল পাগলার একমাত্র ছেলে মোঃ রাজিব(৩২) দীর্ঘদিন যাবত মাদকাসক্ত। সে অতিরিক্ত মাদক সেবনের ফলে মাঝে মধ্যেই এলাকার লোকজনকে দা বটি দিয়ে ধাওয়া করতো বলে জানা যায়। ইতিপূর্বে তিনি তার নিজের অন্ডকোষ কেটে খেয়ে ফেলেন, এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও তিনি এলাকায় মাদক সেবন ও ধর্ষণ সহ নানা অপরাধ করতে থাকে। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তাকে পারিবারিক ভাবে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে রাখা হয়। সেখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে আসার পর আবারও বিভিন্ন অপরাধ করতে থাকে। পরবর্তীতে তাকে মাদকসহ গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায় মধুপুর থানা পুলিশ।

বিগত ৭/৮ মাস আগে সে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়িতে ফিরে আসে।মা রাজিয়া বেগম (৪৫) ছেলের প্রতিদিনের নেশার টাকা যোগাতে মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করেন।এরই ধারাবাহিকতায় মা রাজিয়া বেগম ১৪ই মার্চ শুক্রবার দুপুরে প্বার্শবর্তী আয়নাল ভেন্ডারের বাড়িতে ইফতারি তৈরি করতে যান।পরবর্তীতে সে ইফতারি শেষ করে সন্ধ্যার দিকে বাড়িতে এসে তার রুমে বসে পান খাচ্ছিলেন এমন সময় তার ছেলে রাজিব এসে আনারস কাঁটার বাগি দিয়ে পিঠের মধ্যে কোপ দেয়। তার স্ত্রী শোভা শাশুড়ীকে বাঁচাতে গেলে তাকেও কোপ দিয়ে হাতের চারটি আঙুল কেটে ফেলে দেয়। ভয়ে মা দৌড় দিলে পিছন দিক থেকে তাঁকে এলোপাতাড়ি ভাবে কোপাতে থাকে। একপর্যায়ে সে পড়ে গেলে সেখানে তাকে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পা বেঁধে টেনে হেঁচড়ে বাড়ির পিছনে নিয়ে যায় পুঁতে রাখার জন্য। এদৃশ্য দেখে রাজিবের স্ত্রী ও তার একমাত্র ৯বছরের কন্যা রিয়ামনি বাড়ি থেকে দৌড়ে বেড়িয়ে ডাকচিৎকার করতে থাকে।

তাদের ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে তাদেরকেও সে ধারালো বাগি দিয়ে ধাওয়া করে।পরবর্তীতে এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে এগিয়ে গেলে সে দৌড়ে পালিয়ে যায় বলে জানা যায়। মারাত্মক ভাবে আহত রাজিবের স্ত্রীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ঘাতক রাজিবের একমাত্র মেয়ে রিয়া মনি(৯) জানান, আমি বারান্দায় বসে ছিলাম, দাদু তার রুমে বসে পান খাচ্ছিলো, বাবা সেখানে গিয়ে তাকে বাগি দিয়ে কোপ মারে। তা দেখে আমি চিৎকার দিলে মা রান্না ঘর থেকে দাদুকে বাঁচাতে এলে তাকেও কোপ মেরে হাতের চারটি আঙুল কেটে ফেলে দেয়।

মেয়েটি আরও জানায়, এসময় দাদু চিৎকার করে মাকে বলছিলো তুমি মনিকে নিয়ে দৌড়ে পালাও ও তোমাদের মেরে ফেলবে। একথার পর দাদুকে আবারও কোপ দেয়। এসময় মা আমাকে নিয়ে দৌড়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়ে ডাকাডাকি করতে থাকে। আমাদের চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে বাবা দাদির লাশ রেখে পালিয়ে যায়।চোখের সামনে দাদিকে কুপিয়ে মারার দৃশ্য মনে করে বারবার হাঁপিয়ে উঠছিল এই ছোট্ট শিশু রিয়ামনি। সে এই নির্মমতা দেখে তার পাষণ্ড পিতার ফাঁসি দাবি করেন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন, মধুপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমরানুল কবীর।

 

এসময় উপস্থিত ছিলেন, ওসি তদন্ত রাসেল, এসআই সেলিম, আলোকদিয়া ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই আঃ রাজ্জাক সহ আরও অন্যান্য পুলিশ সদস্যগন।ঘটনাস্থল থেকে সুরতহাল রেকর্ড করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল প্রেরণ করা হয়েছে।ইতিমধ্যে রাতেই মধুপুর থানা পুলিশ আসামিকে ধরতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন শুরু করেন। এর ফলে রাত পনে ৩টার দিকে মহিষমারা ইউনিয়নের কোনাপাড়া এলাকা থেকে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন, মধুপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমরানুল কবীর।

Author

আরও খবর

Sponsered content