নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহীঃ গণপূর্ত বিভাগ-১ রাজশাহী জোন এর ট্রেসার বা ৩য় শ্রেনীর কর্মচারী মনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে দায়ের হওয়া একটি লিখিত অভিযোগের সূত্র ধরে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে অগ্রযাত্রা৷ প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়- বিভিন্ন ঠিকাদারদের হয়রানি করে উর্ধতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে মনোয়ার কিভাবে কোটিপতি হয়েছেন সেসব তথ্য। একই সাথে তুলে ধরা হয় তার সম্পদের আংশিক বিবরণও। চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা সেই ভিডিও প্রতিবেদনের সূত্র ধরে অগ্রযাত্রার রাজশাহী ব্যুরোর অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা রাজশাহী মহানগরীর কাজীহাটা এলাকায় গিয়ে খোঁজ পায় ৩য় শ্রেনীর ওই কর্মচারীর ২বাড়ির, এছাড়াও তাকে ডাকা হয় সম্পদের কুমির বলে। ওই অনুসন্ধানে আরো খোঁজ মিলেছে রাজশাহী মহানগরীর অন্যতম প্রাণকেন্দ্র এবং অভিজাত এলাকা গুড়িপাড়ায় আরো ১টি বাড়ির। যার আনুমানিক মূল্য কয়েক কোটি টাকা।
এছাড়া গুঞ্জন আছে রাজশাহী মহানগরীর সিএন্ডবি মোড়ে অবস্থিত সুরমা রেস্টুরেন্ট নানকিং-এর মূল মালিক বর্তমানে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা দুদুর সাথে মালিকানা শেয়ারেও আছেন মনোয়ার। যদিও মনোয়ার দাবি করেন ওই রেস্টুরেন্টটির মালিক তিনি নন, তিনি সেখানে কাজ করেন। কিন্ত প্রশ্ন ওঠে - একজন সরকারি কর্মচারী সরকারি চাকরির বাইরে অন্য কোথাও চাকরি করার নিয়ম আছে কিনা, তাছাড়া মনোয়ারের মতো এমন কোটিপতি সরকারি কর্মচারী কেনোই বা বাড়ি গাড়ি থাকার পরেও একটি রেস্টুরেন্টে কর্মচারী হিসেবে চাকরি করতে যাবেন। সূত্রের তথ্য বলছে, মূলত এই রেস্টুরেন্টটির শেয়ারেই আছেন মনোয়ার। নিজের সম্পদের তথ্য গোপন করতে ভুল তথ্য দিয়েছেন সাংবাদিকদের। মনোয়ারের বাড়ি ঝালকাঠির রাজাপুরে হলেও গত ১০ বছরে রাজশাহীর প্রাণকেন্দ্রে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। অপরদিকে মাসে ২০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করা ৩য় শ্রেনীর কর্মচারী মনোয়ার। ১০ বছরে টাকার জোরে একাধিকবার নিজের বদলীও ঠেকিয়েছেন তিনি। কারণ রাজশাহীই তার দূর্নীতির অঘোষিত সম্রাজ্য।
ওদিকে মনোয়ারের কর্মস্থল গণপূর্ত বিভাগ-১, রাজশাহী জোন কার্যালয়েও গিয়েছে টিম অগ্রযাত্রা। জানা গেছে- মনোয়ার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কর্মচারী ইউনিয়নের সহ সভাপতি ছিলেন, নিজেকে শ্রমিকলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে ব্যাপক দাপট দেখাতেন অফিসে ৷ হয়রানি করতেন ঠিকাদারদের। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন টেন্ডার পাইয়ে দিতেন আওয়ামী লীগ পন্থী ঠিকাদারদের। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষ উর্ধতন কর্মকর্তাদের জিম্মি করতেও ছাড়তেন না তিনি। আর এমন দাপট দেখিয়ে ব্যাপক ঘুষবানিজ্য করা মনোয়ার সরকার পতনের পর পরই ভোল পাল্টেছেন। বর্তমানে গণপূর্ত কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘনিষ্ঠ ওই ৩য় শ্রেনীর কর্মকর্তা। জানা গেছে এখনো সেই পুরোনো আওয়ামী দাপটই দেখিয়ে যাচ্ছেন মনোয়ার। চালিয়ে যাচ্ছেন দূর্নীতি।
এ ব্যাপারে জানতে মনোয়ারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি সবকিছু অস্বীকার করে বলেন এগুলো মিথ্যা। আপনারা সত্য রিপোর্ট করেন আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু মিথ্যে কোন রিপোর্ট করলে আমি আপনাদের ছাড় দেব না। একপ্রকার হুমকি দেয় তৃতীয় শ্রেণীর ওই কর্মচারী মনোয়ার হোসেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগ ১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাশেদুল ইসলাম বলেন, এসব বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তবে এই সংশ্লিষ্ট কোনো কিছু কারো বিরুদ্ধে পেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাজশাহী গণপূর্ত জোন এর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল গোফফার জানান, বিষয়টি অনেক বড় ঘটনা। তবুও আমার জানা নেই। যদি কোনো এই ধরনের সম্পৃক্ততা পাই অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।