আখলাক হুসাইনঃ কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে বছরের প্রথম শিলাবৃষ্টি হয়েছে সিলেটের গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। আকাশ থেকে পড়া বড় বড় শিলাখণ্ডের আঘাতে এলাকার অনেক বাসাবাড়ির জানালার কাচ ভেঙে গেছে। যানবাহনেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জানা যায় দীর্ঘদিন থেকে বৃষ্টি বন্ধ থাকার কারণে মাঠেঘাটে খা-খা পরিবেশ বিরাজ করছে। এই অবস্থায় রাসুলের সুন্নত হচ্ছে সাধারণ মানুষদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে ইসতিসকার নামায আদায় করে আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করা। এই প্রার্থনার জন্য বিশেষ নিয়মও রয়েছে রাসূলের হাদিসে। এই ভিত্তিতে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের নয়াগ্রামের সাধারণ মুসল্লীদের উদ্যোগে নয়াগ্রাম হাওরে ইসতিসকার দোয়ার আয়োজন করা হয়। গত সোমবার (১০মার্চ) আয়োজিত এই মোনাজাত পরিচালনা করেন এলাকার প্রবীণ আলেম জামেয়া মাদানিয়া কাজিরবাজার মাদরাসার শায়খুল হাদীস মাওলানা আহমদ আলী। এছাড়াও এলাকার অনেক উলামায়ে কেরাম ও যুব সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
এরপর প্রথম বৃষ্টি হয় গত বুধবার (১২ মার্চ) বিকেল বেলা। অশান্ত ভূমি বৃষ্টির ফোটা পেয়ে প্রশান্তির নিশ্বাস নেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে “রহমতের বৃষ্টি আলহামদুলিল্লাহ”! এরপরদিনই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নেমে আসে শিলাবৃষ্টির ঝড়। যা এবছরের প্রথম শিলাবৃষ্টি হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রাতের প্রায় ১৫ মিনিট ধরে দেয়া এই শিলাবৃষ্টির ঝড়ে অনেক ক্ষতি সাধিত হয়েছে গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। সর্বশেষ গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০ টায় আবারও শিলাবৃষ্টির কবলে পড়ে সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চল।
গত শুক্রবার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে ফরিদপুর, রাজশাহী, ঈশ্বরদী, খুলনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে। এই তাপপ্রবাহ আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে। তবে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় ঝড়ো বাতাস ও বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ শুষ্ক থাকতে পারে।
গত শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছিল, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ অবস্থান করছিল দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে। পরে শুক্র ও শনিবার সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে থাকে।এদিকে, বৃহস্পতিবারের রাতে কয়েক দফায় শিলাবৃষ্টিতে ক্ষেতের ফসল নিয়ে কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
এদিন সন্ধ্যার পর থেকে রাত পর্যন্ত সিলেট নগর, সদর উপজেলা, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে শিলাবৃষ্টি হয়।সিলেট ছাড়াও মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় প্রচ- শিলাবৃষ্টি হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। সেখানকার স্থানীয়রা জানান, মাত্র ৫ মিনিটের শিলাবৃষ্টি ভয় ধরিয়েছে কৃষকদের মনে। বিশেষ করে তরমুজ চাষিরা পড়েছেন বিপাকে।
২য় ধাপে শনিবার রাতে আবারও হালকা শিলাবৃষ্টি ও ভারি বৃষ্টিবর্ষণ হয়েছে সিলেটের গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায়।
হাকালুকি পাড়ের কৃষক মশাহিদ আলী ও শামীম আহমদ বলেন, এবার তারা তরমুজ চাষ করেছেন। শিলাবৃষ্টি হওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় আছি। তরমুজ এখনো পরিপক্ব হয়নি। শিলাবৃষ্টি যেভাবে হয়েছে, তাতে হাওর অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।
শিলাবৃষ্টিতে ব্যাহত হয় সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ, তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বিদ্যুৎ উন্নয়ন ও বিতরণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে নগরের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ লাইনে ত্রুটি দেখা দেয়। মেরামত কাজের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ সাময়িকভাবে স্বাভাবিক ছিল না। আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের আবহাওয়াবিদ রুদ্র তালুকদার জানান, সিলেটে ২৪ ঘন্টায় ২২ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।