এই কথাটির অতি তাৎপর্য এবং মাহাত্ম্যতা রয়েছে, কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যা ঘোষণা করেছেন তা কখনো বান্দার জন্য মিথ্যা হতে পারে না, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষের ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আইনশৃঙ্খলা নীতি নির্ধারণ প্রশাসন ব্যক্তিগত সামাজিক জীবন সর্ব অবস্থায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেমন নির্দেশ দিয়েছেন ইনসাফের তেমনি নবী করীম (সা:) হাদিসের অসংখ্য দলিল প্রমাণ রয়েছে !! সমাজে ধনী গরিব উঁচু নিচু সর্ব অবস্থায় ইনসাফের কথা বলা হয়েছে! ইসলাম পরিপূর্ণ এবং সূক্ষ্ম ভাবে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করে, কুরআনুল কারীমে বর্ণিত হয়েছে, ‘অবশ্যই আল্লাহ ইনসাফ, ন্যায়বিচার ও সদাচারের আদেশ করেছেন।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৯০)। একই নির্দেশনা দিয়ে অন্য আয়াতে বলেছেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের আদেশ করেছেন যে, আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌঁছে দেবে এবং যখন মানুষের মাঝে বিচার মীমাংসা করবে তখন ইনসাফ ও ন্যায়বিচার করবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৫৮)।
আমাদের পাথেও চলার পথে আমরা সকলেই অনেকে চেষ্টা করি ইসলামিক লেভাস ইসলামিক নিয়ম কারণে চলাফেরা করার জন্য, কিন্তু আমরা কি সঠিক ইসলামের নিয়ম-কানুন এবং নীতি নির্ধারণ সঠিকভাবে করতে পারি!যদি সঠিক ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে পারি তবে ইহকালীন কল্যাণ এবং পরকালীন মুক্তি আসবে, ইসলাম মানে এটা নয় একটি মেনে আরেকটি মানবো আরেকটি মানলে আরেকটি মানবো না এটা ইসলাম নয়।ইসলাম হলো একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা! যেমন ধনী, গরিব, উচু, নিচু বর্ণ, গোত্র,ধর্ম ইসলামী বিশ্বাস আকিদা, সর্ব অবস্থায় যেখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আইন প্রচলিত, সেখানে আমি কিভাবে একটাকে বাদ দিয়ে সমাজ প্রতিষ্ঠা করব ইসলামিক নিয়ম এবং বিধানে, আমাদের চিন্তা করতে হবে আমরা কি প্রতিটি জায়গায় ইসলামের সঠিক নিয়ম এবং বিধান কি মানতে পেরেছি? নবী করীম (সা:) এর পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান ছিল আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আইন অনুযায়ী ইনসাফ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় কখনো নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলেও সত্যের নিরিখে ন্যায়নিষ্ঠ বিচার করতে হবে এবং নির্দ্বিধায় তা মেনে নিতে হবে। এ ব্যাপারে সরাসরি নির্দেশনা দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহতায়ালা। কোরআন শরিফে এসেছে, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা ইনসাফ ও ন্যায়বিচারে দৃঢ়পদ থাকবে আল্লাহর সাক্ষীরূপে। যদিও তা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতা-মাতা ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে হয়। সে ধনী হোক বা গরিব হোক, উভয়ের সঙ্গেই আল্লাহর অধিকার আছে। সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচার করতে প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৩৫)। যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বিচারের ক্ষেত্রে যেমন আত্মপক্ষে ঝুঁকে না যায়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। তেমনি অন্যের প্রতি আক্রোশ ও বিদ্বেষও যেন অন্য জনের উপর চালিয়ে না দেওয়া হয় , সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
ইনসাফ ও ন্যায়বিচার ছাড়া দুজন ব্যক্তির মাঝের সম্পর্কও স্থায়ী হয় না। রক্তের বাঁধনে গড়া আত্মীয়তা ভেঙে যায়। বিচূর্ণ হয়ে যায় মা-বাবার রক্ত-ঘামে গঠিত সাজানো সংসার। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক এসব ছোট ছোট বন্ধন যদি ভাঙনের মুখে পড়ে, তাহলে ন্যায়বিচার ছাড়া একটি সমাজ দাঁড়িয়ে থাকবে মানুষের সমাজ হিসেবে, এটা একরকম দিবাস্বপ্ন ছাড়া কিছু নয়। এছাড়া যদি ইসলামিক জীবন পূর্ণাঙ্গভাবে ফলো করা হয় রাষ্ট্রে ন্যায় বিচার এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাহলে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ও সর্ব জায়গায় প্রতিষ্ঠা পাবে ইনসাফ ও ন্যায় বিচার । তারও আগে প্রয়োজন ব্যক্তিগত ন্যায়বিচারের বোধ ও সদিচ্ছা। প্রতিমুহূর্তে নিজের আত্মাকে দাঁড় করাতে হবে বিবেকের কাঠগড়ায়। এ ভাবে ই প্রতিষ্ঠা পাবে ব্যক্তি থেকে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সর্বত্র সুবিচারের বিচারের মধুর স্বাদ লাভ করবে। মানুষের সমাজে ন্যায্য অধিকার ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা ছাড়া শান্তি, সাম্য, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা সৃষ্টি হতে পারে না। ইনসাফ ও ন্যায়বিচার ছাড়া দুজন ব্যক্তির মাঝের সম্পর্কও স্থায়ী হয় না। রক্তের বাঁধনে গড়া আত্মীয়তা ভেঙে যায়। বিচূর্ণ হয়ে যায় মা-বাবার রক্ত-ঘামে গঠিত সাজানো সংসার। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক এসব ছোট ছোট বন্ধন যদি ভাঙনের মুখে পড়ে, তাহলে ন্যায়বিচার ছাড়া একটি সমাজ দাঁড়িয়ে থাকবে মানুষের সমাজ হিসেবে, এটা একরকম দিবাস্বপ্ন ছাড়া কিছু নয়। এমনকি মানুষের সরিষার দানা পরিমাণ ক্ষুদ্র কর্ম ও আচরণও আমি সেদিন উপস্থিত করব। হিসাব গ্রহণের জন্য আমিই যথেষ্ট।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৪৭)। আল্লাহ ও তার বিচারের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস ও শেষ দিবসের পরিণতির ভীতি যাদের আছে তারা কোনো দিন অনাচার ও কারও প্রতি অবিচারের কথা ভাবতে পারে না। দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রীর ক্ষেত্রেও তাই বলা হয়েছে! আপনি কি আপনার স্বামীর সঠিক অধিকার টুকু আদায় করতে পেরেছেন? এমন কি স্ত্রী সন্তান পিতা-মাতা পরিবার পরিজন,প্রিয় স্বজন প্রবেশি, সকলের প্রতি ইনসাফ প্রতিষ্ঠার কথা পুঙ্খানুপুঙ্খানু বলা হয়েছে, আপনার ব্যক্তি এবং পারিবারিক জীবনে কি ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন? আল্লাহতায়ালা কোরআন শরিফের অনেক স্থানে সমাজের বিচারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বিশেষভাবে। আল্লাহ বলেছেন, ‘যখন তোমরা মানুষের মাঝে বিচার করো তখন ইনসাফের ভিত্তিতে সুবিচার করো।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৫৮)। অপর এক আয়াতে বলেছেন, ‘যদি তারা ফিরে আসে তাহলে উভয়ের মাঝে ন্যায়ানুগভাবে সুবিচার করবে এবং তোমরা ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করো। কেননা আল্লাহ ইনসাফকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা হুজরাত,) তাই আল্লাহ আপনি সুন্দর আপনার বিচার সুন্দর! সেই ইনসাফের প্রতীক্ষায় কত নাখাস্তা গুনাগার মাজলুম যাদের অর্থ সম্পদের কাছে দুনিয়ার ক্ষমতা টিকে না তারা আপনার রহমতের দরিয়ার অপেক্ষায় ।
মু.আমিনুল ইসলাম তারেক
সাবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী , গণমাধ্যম কর্মী ও কলামিস্ট।