আসুন ঈদের উৎসবকে আনন্দময় করতে ও অন্যরকম করে সাজাতে …গরিব ও অসহায়দের দিকে সাম্যের হাত বাড়িয়ে দিই। খোঁজ নিই পাশের বাড়ির আত্মীয়-স্বজন , ধনী গরিব গোত্র ধর্ম, নিকট আত্মীয়, এতিমখানায় যে বেড়ে উঠছে ছেলেটি যার পিতামাতা কেউ নেই পৃথিবীতে তার দুস্থ অসহায় পাড়া প্রতিবেশির। কেউ শিশু; কেউ কিশোর; কেউ বা আছে যুবক; যারা আবার সঠিক পথ নির্দেশনা না পেয়ে সংসারে গ্লানি টানতে টানতে নিজের পরনের লুঙ্গিই কিনতে পারেনি। এমনও মানুষ আছে যাদের চোখে অফুরন্ত জল আজকে খেলা করছে! কি ভাবছেন সত্যিই এরকম মানুষ এখনো পৃথিবীতে আছে, সমাজের অসংখ্য মানুষ এরকম তার বুক চাপা না বলা কথাগুলো কাউকে বলতে পারছে না! চলুন না তার প্রতি আমরা একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিই, আমরা হয়তো একটা জামা বাদ দিব না কিনার, হয়তো কিছু খাবার আমরা কম কিনব, তারপরেও যদি আপনার একটু প্রচেষ্টায় আপনার নিকটাত্মীয় ওই এতিমখানার যে ছেলেটি মা-বাবা নেই তার মুখে যদি একটু হাসি ফুটে কাল কেয়ামতের দিন স্রষ্টার কাছে আপনার নাজাতের জারিয়া হয়ে যাবে।
তাকে’ই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিই। যারা বয়স্ক, বয়সের ভাড়ে নুজ্য; তাদের দিকে ভালবাসার দৃষ্টিতে তাকাই। এদের কারো প্রতি কোনো করুণা নয়। বরং সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই এগিয়ে যাই। নিজেদের ঈদের কেনাকাটার কিছু অংশ তাদেরকেও দিই।
এতিমদের জন্য করণীয় :- আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) ছিলেন এতিম, তিনি সবসময় এতিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন।এতিমের মাথায় হাত বুলালে অসংখ্য নেকি সহ ইহকালিন কল্যাণ পরকালীন মুক্তি মিলে, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)এতিমদেরকে অনেক ভালবাসতেন। একবার ভেবে দেখেন তো যার বাবা নেই মা নেই পৃথিবীতে কেউ নেই! ওই এতিমখানার একটি কোণে সে পড়ে আছে একা! তাকে নিয়ে যদি আপনি ঈদ টা করেন তার সাথে যদি একটু সময় আপনি কাটান আপনার তো কোনো ক্ষতি নেই। এতে করে তার যেমন কষ্টটা দূর হয়ে যাবে, তেমনিভাবে স্রষ্টার কাছে আপনি প্রিয় বান্দা হিসেবে পরিণত হলেন।
বিত্তশালীদের প্রতি…সমাজের অনেক সম্পদশালী আছেন যারা নিজেদের ঈদের আনন্দ উদযাপনে অনেক অর্থ খরচ করেন। তাদের প্রতি আবেদন- তারা যেন ভুলে না যান দিকভ্রান্ত পথহারা শিশু-কিশোর ছেলে মেয়েদের। ভুলে না যান পাড়া প্রতিবেশি গরিব-দুঃখী অভাবি লোকদের কথা। যাদের পোশাকতো দূরের কথা খাবার কেনার সামর্থ্য নেই।
সমাজপতিরা যদি সাধ্যমতো সব অভাবীর কথা ভাবে; এগিয়ে আসে তাদের সহযোগিতায়, তবে অসহায় মানুষও উপভোগ করতে পারবে ঈদের আনন্দ। কারণ এ গরিব-দুঃখী অভাবি মানুষগুলো এ সমাজ ও রাষ্ট্রেরই অংশ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না; আল্লাহর তার প্রতি দয়া করে না।’ অর্থাৎ যারা গরিব দুঃখীর প্রতি সদয় হয় না; আল্লাহ তাআলাও সে মানুষের প্রতি সদয় হবে না। তা হতে পারে দুনিয়াও আখিরাতে।
পরিশেষে…মানুষ স্রষ্টার সৃষ্টির অতুলনীয় সেরা জীব। সমাজের সম্পদশালীদের দিকে পুরোপুরি নির্ভরশীল না হয়ে কম-বেশি সবাই অসহায় মানুষের দিকে সুদৃষ্টি দিলে, তাদের জীবনমান ও ঈদ আনন্দে আসবে পরিবর্তন। দারিদ্র্যের মলিন মুখে ফুটবে অমলিন হাসি। ভুলে যাবে দুঃখ বেদনা। তারও ভোগ করবে ঈদের আনন্দ।
তাইতো কবির ভাষায় বলতে চাই-“ঈদ এলো মানুষের জন্য; ঈদ এলো জীবনের জন্য।একা একা হয় না তো ঈদ; হয় না তো ঈদের খুশী।একা একা ঈদ করে সেই; যেই জন মূলত দোষী।ঈদের আনন্দ যে ভাগ করে নেয়; সেই জন আসলেই ধন্য।”
সুতরাং মুসলিম উম্মাহ একে অপরের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে প্রত্যেকেই ধন্য হতে চাই। তাই আল্লাহ তাআলা গরিব-দুঃখী-অসহায়কে ঈদের আনন্দ দিতে সম্পদশালীদের এগিয়ে আসার তাওফিক দান করুন। তাই ঈদ বয়ে আনুক প্রতিটি মানুষের জীবনে ইহকালীন কল্যাণ এবং পরকালীন মুক্তি এবং ভালোবাসা সমৃদ্ধির যুগবানি।
মু. আমিনুল ইসলাম তারেক সাবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, গণমাধ্যম কর্মী ও কলামিস্ট।