বাবুল রানা বিশেষ প্রতিনিধি মধুপুর টাঙ্গাইলঃ টাঙ্গাইলের মধুপুরের প্রথম সারির মোটরসাইকেল মেকানিক শিশির চন্দ্র দেব। তাকে চেনেন না এমন পুরাতন মোটরসাইকেল চালক মধুপুর উপজেলায় খুব কমই আছে।তার জন্ম শেরপুর জেলার লসমনপুর এলাকায়। তিনি অধীরচন্দ্র দেবের তিন ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে ৪র্থ সন্তান।
সে ১৯৯০ সালে তার মামাতো বোন জামাই মধুপুর ঘোষপাড়ার স্বপন দে সরকার এর মাধ্যমে মধুপুর আসেন। পরবর্তীতে তিনি সর্ব প্রথম মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে আখিমল চৌধুরীর জায়গায় মোটরসাইকেল মেরামতের জন্য একটি ছোট্ট গ্যারেজ ভাড়া নিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। সেসময়ে হাতেগুনা কয়েকজন মোটরসাইকেল মিস্ত্রি ছিলো তাদের মধ্যে মিল্টন, বাবলু, গুডু, আঙ্গুর, ও আহাম্মদ উল্লেখ যোগ্য। এদের মধ্যে বাবলু, মিল্টন ও আঙ্গুর মৃত্যু বরণ করেছেন।এরপর তিনি ১৯৯৩ সালে শেরপুর শহরের সম্ভান্ত্র পরিবারে মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
বর্তমানে তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। এ কর্মের মধ্যদিয়েই মেয়েকে মাস্টার্স এবং ছেলেকে এসএসসি পাস করান। এরপর ছেলে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে আজ-অব্দি সেই একই পেশায় নিয়োজিত আছেন।
সেই ১৯৯০ সালে এ পেশায় নিয়োজিত সকলের উন্নতি হলেও সহজসরল হাস্যজ্বল এই সাদামনের মানুষটির জীবনে আজও পর্যন্ত তেমন কোনো আশার আলো পরিলক্ষিত হয়নি।
তিনি জানান, বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায় গিয়ে তার সবচেয়ে কাছের মানুষগুলোই বারবার ঠকিয়েছে। যেকারণে দীর্ঘ ৩৫ বছর নিষ্ঠার সাথে কাজ করেও নিজের কষ্টের উপার্জনের টাকা দিয়ে জায়গা জমি বাড়িঘর কিছুই করতে পারেননি বলে জানান তিনি। ১৯৯০ সাল থেকে আজও পর্যন্ত মধুপুরে মোটরসাইকেল মেরামতের জন্য এক নম্বরে থাকা শিশির চন্দ্র দেব একটি সুপরিচিত নাম। এখনও বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে শখের মোটরসাইকেলটি টুকটাক কাজের জন্য এই শিশির বাবুর কাছে নিয়ে আসেন। বর্তমান সময়ে তার কাছে কাজ শিখে আজ অনেকেই বাড়ি গাড়ির মালিক বনে গেছেন কিন্তু তার অবস্থান ১৯৯০ থেকে ২০২৫ একই ধারায় বহমান। সদাহাস্যজ্বল মিশুক মানুষটি ঠিক একই ধারায় সেই আগের মতই নিজেকে পরিপাটি রাখতে ভালোবাসেন।
তিনি জানান, দীর্ঘ ৩৫ বছর মধুপুরের অনেক বন্ধু বান্ধবের সাথে মিশেছি, অনেকের উত্থানপতন দেখেছি, সেই ছোট্ট মধুপুর শহর এখন বড় শহরে রুপান্তরিত হয়েছে। আমার দেখা অনেক কাছের মানুষগুলো আজ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন, তারা আজ নিজনিজ স্থানে প্রতিষ্ঠিত। আমাকে নিয়ে ভাবার মতো সময় কি আর তাদের আছে? অথচ একসময় তাদের দিন রাত কেটেছে আমার গ্যারেজে। অনেককেই রাতে বাসায় পৌঁছে দিয়ে নিজের পরিবারের খোঁজ-খবর রাখতে পারিনি, এমন অনেক অসংখ্য আবেকের কথা তিনি জানালেন। দীর্ঘ সময় এ কাজে অনেকেই আমাকে যার যার স্বার্থে শুধু ব্যবহারই করেছে, যেকারণে আজও আমাকে ভুলের মাশুল হিসেবে একই পেশায় কাজ করতে হচ্ছে এমন অনেক কষ্টের কথাও জানালেন এই মানুষটি।
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যেখানে আরাম আয়েশ করার কথা সেখানে এখনও সকাল থেকে রাত পর্ষন্ত সময় পার করছেন মোটরসাইকেল মেরামতের কাজে। এখন আর বড় স্বপ্ন দেখার ইচ্ছে নেই তার, বাকী জীবনটা সততার সঙ্গে এ মধুপুরেই কাটাতে চান বলে জানান তিনি।