নাজিরপুর (পিরোজপুর) প্রতিনিধি; পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শেখমাটিয়া ইউনিয়নের বাবুরহাট বাজারে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও চাঁদা দাবিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন।সংঘর্ষের সময় দু’টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।এতে গুরুতর আহত একজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাতে উপজেলার শেখমাটিয়া ইউনিয়নের বাবুরহাট বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়সুত্রে জানা যায়, শেখমাটিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম শেখ ও তার ভাইদের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক দলের নেতা আজমীর হোসেনের কাছে চাঁদা দাবি করে এবং বাজারের একটি দোকানের সামনে তাকে আটকে রাখে। বিষয়টি জানাজানি হলে উপজেলা যুবদলের সহস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক মোঃ বদিউজ্জামান এসে এঘটনার প্রতিবাদ করে এবং আজমীরকে নিয়ে যেতে চাইলে দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হয় এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষে আহতরা হলেন বদিউজ্জামান (৪০), শরিফুল ইসলাম (২৪), সবুর সরদার (৪৫), মাহবুব ভুইয়া (৬৫), আল মামুন সরদার আজমীর (৪২), তায়জুল ইসলাম (৩৩), এমাম ভুইয়া (২৫), রুহুল আমীন ভুইয়া (৩৫), জহিরুল ইসলাম শেখ এবং পলাশ শেখ (২৮)। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
বাজারের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, সংঘর্ষ শুরুর আগে ফিল্মি স্টাইলে দেশীয় অস্ত্রের মহড়া চালিয়েছে একদল যুবক। অস্ত্র মহড়ার নেতৃত্বে ছিলেন জহিরুল ইসলাম জহিরের ছোট ভাই ও ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা সোহেল শেখ।
সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছে। হামলায় আহত উপজেলা যুবদলের সহস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. বদিউজ্জামান বলেন, উপজেলার শেখমাটিয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আজমীর হোসেনকে সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম ও তাঁর ভাই যুবলীগ কর্মী জাহিদসহ চার-পাঁচজন একটি দোকানের সামনে আটক করেন। এর আগে প্রায় দুই মাস ধরে তাঁরা আজমীরের কাছে চাঁদা চান। এ ঘটনা শুনে সেখানে গেলে বিএনপি নেতা জহিরের নেতৃত্বে তাঁর ভাই ও তাঁর গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমার ওপর হামলা করে আমার সঙ্গে থাকা দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। পরে এ খবর শুনে আমার আত্মীয়স্বজন সেখানে গেলে জহিরের লোকজন তাঁদের ওপরও হামলা করেন।
এঅভিযোগ অস্বীকার করে ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব মো. জহিরুল ইসলাম শেখ বলেন, যুবদল নেতা বদিউজ্জামানের চাচা মাহাবুব ভূঁইয়া তাঁকে গালাগালি করেন এবং তাঁর লোকজনের ওপরে হামলা করেন। এ নিয়ে সংঘর্ষে বাজারে কে কাকে মেরেছেন, তা তিনি জানেন না।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু হাসান খান সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়। যতদূর জানতে পেরেছি, এটি একটি পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও স্থানীয় বিরোধের জের। বিএনপি একটি নিয়মতান্ত্রিক দল, এখানে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, অশান্তি সৃষ্টিকারী ও দখলদারদের জন্য কোনো ছাড় নেই। আমার দলের কোনো নেতাকর্মী যদি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি প্রশাসনের কাছে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা: অশেষ প্রতীম রায় জানান,সংঘর্ষে গুরুতর আহত একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেলে প্রেরণ করা হয়েছে এবং বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ভর্তি রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে নাজিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) শেখ হিলাল উদ্দিন জানান, ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
প্রান্ত মিস্তী
নাজিরপুর (পিরোজপুর) প্রতিনিধি;