পাভেল ইসলাম মিমুল স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী নগরীর মধ্যে মাদকের অন্যত্তম ঘাটি মতিহার থানা অঞ্চল। এই অঞ্চলে ছোট বড় মিলে প্রায় ১৯৯ জন মাদক কারবারী রয়েছে। সেই কয়েক যুগ ধরে এ অঞ্চলটি মাদকের স্বর্গরাজ্য।
নগর জুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান চললেও মতিহার থানা এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী এখনও অধরা। অদৃশ্য এক ‘হোয়াইট কালার’ গডফাদারের ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে উঠেছে এক শক্তিশালী মাদক সিন্ডিকেট।হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক।
মিজানের মোড় এলাকায় মাদকের সিন্ডিকেটের গডফাদার ও মূল হোতা মৃত আব্দুলের ছেলে জাকা এবং মুজাম্মেলের ছেলে সাগর বর্তমানে এই চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
বর্তমানে মতিহার থানা অঞ্চলে এক বোতল ফেনসিডিলের দাম ২৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা। আর এই টাকা যোগাড় করতে দিন রাত এক করে ফেলছে মাদক সেবিরা।
মাদকের টাকা যোগাড় করতে চুরি,ছিনতাই,ব্ল্যাকমেইলসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে তারা।
দিন-রাত সমানতালে প্রকাশ্যে চলছে মাদক কেনাবেচা। সেখানেই বসে মাদক সেবনও চলছে। টাকা দিলেই যেকোনো বয়সের কেউ পেতে পারে হেরোইন,ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক। অনেক স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরও দেখা যায় দেদারসে মাদক নিতে। তাদের এই মাদক বিক্রির হাটে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। প্রতিবাদ করলেই চলে নির্যাতন। অনেক ভুক্তভোগী বলেন,অদৃশ্য এক শক্তি তাদের ছায়া দিয়ে রেখেছে।এদের বিরুদ্ধেও মাদকসহ নানা অপরাধে ডজনের বেশি মামলা রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,প্রকাশ্যেই চলছে মাদক বিক্রি। তাদের ভয়ে কেউ মিডিয়ার সামনে মুখ খুলছেন না। তবে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বলছেন,এসব মাদক ব্যবসায়ীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কাজ করছে সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী ও চোরেরা। তারাই এসব কারবারির নিয়মিত ‘কাস্টমার’। কেউ প্রতিবাদ করলেই নেমে আসে নির্যাতন ও হয়রানি। এদের কারণে এলাকায় বেড়েছে চুরি ও ছিনতাই। যুব সমাজ ধ্বংসের মুখে। প্রতিবাদ না হওয়ায় দিন দিন তাদের দাপট বেড়েই চলেছে।
অন্যদিকে প্রতিবেদক গোপনে ডাঁসমারী, সাতবাড়িয়া, জাহাজঘাট, মিজানের মোড়, খোঁজাপুর এলাকায় ঘুরে ভিন্ন চিত্র দেখেন।
প্রকাশ্যেই হাতে ফেনসিডিল তুলে দিচ্ছেন সেবনকারীদের। মৃত্যু আব্দুলের ছেলে জাকা ও মুজাম্মেলের ছেলে সাগর প্রকাশ্যেই মাদক বিক্রি করছেন। দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই সাতবাড়িয়া ও মিজানের মোড়ে চলছে রমরমা মাদক ব্যবসা। এলাকাবাসীর অভিযোগ,বাড়ির সামনেই যেন মাদকের হাট বসেছে।
প্রতিদিন ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজা, ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেটসহ নানা মাদক কিনতে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসছে। এ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছে ২০ থেকে ৩০ জন মাদক কারবারি। দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা করলেও অনেকেই এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
স্থানীয়রা বলেন, মিজানের মোড় এলাকায় মাদক সিন্ডিকেটের মূল হোতা হলো জাকা ও সাগরের পরিবার। তবে এই এলাকার প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ী বাবু ও পাঞ্জাতনের ছেলে শাহিনও সিন্ডিকেটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। জাকা ও সাগরের নেতৃত্বে রমরমা ব্যবসা চলছে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী জানান, মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করলেই হুমকি আসে।প্রকাশ্যেই তারা বলে,পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণসহ সবকিছুকেই ম্যানেজ করে ব্যবসা চালায়। এদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।
মাদক বিক্রির কারণে এলাকার যুবকরা ব্যাপকভাবে আসক্ত হয়ে পড়ছে। দ্রুত এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিলে যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। এলাকাটি এখন মাদকের ভয়াল থাবায় গ্রাস হয়ে গেছে। প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপই পারে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে।
আমরা সবসময় মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেই। কিন্তু কিছু প্রভাবশালী চক্র এসব মাদক কারবারিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছে। আমরা প্রশাসনের দৃঢ় পদক্ষেপ কামনা করছি। প্রয়োজনে সহযোগিতাও করবো।
মিজানের মোড় এলাকায় মাদক নির্মূল করতে হলে আব্দুলের ছেলে জাকা ও সাগর কে গ্রেপ্তার খুব জরুরী।
জানতে চাইলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র এডিসি সাবিনা ইয়াসমিন বলেন,মাদক বিরোধী অভিযান অব্যহত রয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন থানা, ডিবি পুলিশ মাদক বিরোধী অভিযানে মাদকসহ মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তার করে নিয়মিত মাদক মামলা হচ্ছে। তালিকা ভূক্ত মাদক কারবারিদের পুলিশ নজর দারিতে রেখেছে। মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) রাজশাহী বিভাগের উপ-পরিচালক মো. জিল্লুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।