রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:০৯ অপরাহ্ন
English
ব্রেকিং নিউজ
উলিপুরে বিএনপির ৩১ দফা রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত পরিকল্পনার প্রচারণা ভালো মানুষের কদর কমছে, তবুও আশার প্রতীক মোঃ আব্দুস সালাম মেঘনায় বালু উত্তোলনের সময় ১০ ড্রেজার মেশিন জব্দ দালালদের স্বপ্নভঙ্গ! কুয়েতে দূতাবাসের দুর্নীতিবিরোধী বিপ্লব শুরু পঞ্চগড়ে সেনাবাহিনীর অভিযানে চার হাজার পিস ট্যাপেন্টাডল সহ মাদক ব্যবসায়ী আটক ঢাকায় বাংলাদেশ তৃণমুল সাংবাদিক ফোরাম (বিটিএসএফ) এর মতবিনিময় সভা তাড়াশ পৌর বিএনপি ৭নং ওয়ার্ডে সভাপতি হিসেবে সকলের দোয়া ও সমর্থন চেয়েছেন —কবির সরকার( খবির) ফতেপুরে খেলাফত মজলিসের মজলিসে শুরা অনুষ্ঠিত সভাপতি: মুজিব, সাধারণ সম্পাদক: শামীম মালয়েশিয়া যেতে আগ্রহীদের সতর্ক করেছে কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন চাঁপাইনবাবগঞ্জে শহীদদের স্মরণে তারুণ্যের আইডিয়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন

সম্প্রীতির বন্ধনে দেশ গড়ার প্রত্যয়ে ঐতিহাসিক সেমিনার

Muktakathan News
  • Update Time : রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৬৫ Time View

মোঃ সাইফুল ইসলাম, সিলেট বিভাগীয় প্রধানঃ সম্প্রীতির বন্ধনে দেশ গড়ার প্রত্যয়ে ঐতিহাসিক সেমিনার: পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন ও বৌদ্ধ সংস্কৃতির বিকাশে সুপারিশনামা উপস্থাপন।

শুক্রবার ২৫ এপ্রিল রাঙামাটির পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক দিনব্যাপী সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা রাখতে গিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত (অব.) সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, “সকল সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়াই বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য। পাহাড় ও সমতলের মানুষকে একীভূত করে, সম্মিলিত চেতনায় আমরা এগিয়ে যেতে চাই উন্নয়নের পথে।”

সেমিনারের শিরোনাম ছিল: “বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও বৌদ্ধ সংস্কৃতি বিকাশে করণীয়”।
আয়োজনে ছিল বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ব্যবস্থাপনায় ছিল মোনঘর। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজিব কান্তি বড়ুয়া , ট্রাস্টি, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্ট , বাংলাদেশ।

রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, “বর্তমান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের সকল দরজা উন্মুক্ত রেখেছে। পাহাড়িদের আর পেছনে পড়ে থাকার সময় নেই। আমাদের মেধা, সম্পদ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়ে আমাদেরই নিজের ভাগ্য বদলাতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “কফি ও কাজুবাদামের মতো পাহাড়ি কৃষিজ সম্পদকে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। প্রয়োজনে সমতল থেকে বিশেষজ্ঞদের এনে প্রযুক্তিগত সহায়তায় স্থানীয় কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।”

এক আবেগঘন মুহূর্তে উপদেষ্টা বলেন, “আমরা কাপ্তাই লেককে শুধু স্মৃতির বেদনায় নয়, সম্ভাবনার স্বর্ণখনি হিসেবে দেখছি। এর মাছ আহরণ ও পর্যটন বিকাশের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে পাহাড়িদের ভূমিকা বাড়াতে হবে।”

উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, “আমরা আর পিছিয়ে থাকতে চাই না। আমরা পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ মেইনস্ট্রিমে যুক্ত হয়ে দেশের সামগ্রিক অগ্রযাত্রায় অংশ নিতে চাই।” তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে কার্যকর অবদান রাখার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “সমাজ, ধর্ম ও রাষ্ট্র—এই তিনটির প্রতি আমাদের গভীর মনোযোগ ও দায়িত্ববোধ থাকা উচিত। আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধান সম্প্রীতির বন্ধনে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার যে প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন, তাতে আমরা সকলে একাত্ম হবো, এটাই আমাদের অঙ্গীকার হওয়া উচিত।”

তিনি আরও বলেন, “মানুষের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আর সেই মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস অপরিহার্য। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেরণাদায়ী স্লোগান ‘আসুন দেশ বদলাই, পৃথিবীকে বদলাই’। এই আহ্বান বাস্তবায়নে আমরা সকলে এগিয়ে আসি।”

এই অঙ্গীকারের মাধ্যমে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা সকলের প্রতি ঐক্যবদ্ধ হবার এবং উন্নয়নের পথে একসঙ্গে হাঁটার আহ্বান জানান।

সেমিনারে মনিস্বপন দেওয়ান, সাবেক উপমন্ত্রী , পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষযক মন্ত্রণালয় এবং মং সার্কেলের রাজা সাচিংপ্রু চৌধুরী এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের যুগ্ম সচিব ও সদস্য (পরিকল্পনা) সুমন বড়ুয়া বক্তব্য রাখেন।

মুখ্য আলোচক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া তাঁর মূল আলোচনায় বলেন: “জাতীয় উন্নয়ন কেবল অবকাঠামো দিয়ে হয় না, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ দিয়েও হয়। বৌদ্ধ সংস্কৃতির অন্তর্নিহিত মানবিক গুণাবলী যদি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন ও নীতিনির্ধারণে অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে পাহাড়ি জনগণও দেশের মূলধারায় সম্মানজনকভাবে সম্পৃক্ত হতে পারবে।”

দ্বিতীয় অধিবেশনে আরও তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। উপস্থাপন করেন যথাক্রমে :
অধ্যক্ষ অশোক কুমার চাকমা (মোনঘর), ইঞ্জিনিয়ার পুলক জীবন খীশা,এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনন্দ বিকাশ চাকমা।

তাঁরা তাঁদের প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, “পাহাড়ি জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে যদি উন্নয়ন কাঠামো গড়ে তোলা হয়, তাহলে শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম নয়, সমগ্র বাংলাদেশ লাভবান হবে।”

দিবসের শেষে সেমিনারে সর্বশেষে বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান ভবেশ চাকমা সেমিনারের সভাপতির বক্তব্যে বলেন, “আজকের এই জ্ঞানগর্ভ আলোচনা আমাদের চিন্তার পরিধিকে শুধু সম্প্রসারিত করেনি বরং একটি আত্মজিজ্ঞাসার দ্বার খুলে দিয়েছে, আমরা কীভাবে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মর্যাদা ও সংস্কৃতির যথাযথ মূল্যায়ন করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি।”

তিনি বলেন, “বৌদ্ধ সংস্কৃতি শুধুমাত্র ধর্ম নয়, এটি মানবিকতা, সহনশীলতা ও অহিংসার এক জীবনদর্শন, যা আজকের সময়ের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।

সেমিনারে উপস্থাপিত প্রধান সুপারিশনামা:

১। স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন।
২। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ভাষা, পোশাক, নৃত্য, সংগীত ও আচারকে সংরক্ষণের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা
৩। তরুণ প্রজন্মের মাঝে বৌদ্ধ দর্শনের মানবিক চেতনা ছড়িয়ে দিতে স্কুল পর্যায়ে প্রাসঙ্গিক পাঠ্যপুস্তক অন্তর্ভুক্তি।
৪। পালি টোল ও কলেজগুলোর শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে জোরালো সুনির্দিষ্ট সুপারিশ।
৫। অদম্য মেধাবীদের জন্য বিশেষ শিক্ষাবৃত্তির কার্যক্রম চালু।
৬। বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ।
৭। পূজ্য বনভান্তের জীবন ও অবদান জাতীয় পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তিকরণ।
৮। কাপ্তাই লেকের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে টেকসই মৎস্য চাষ ও ইকো-ট্যুরিজমের উন্নয়ন।
৯। কফি ও কাজুবাদাম চাষকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করে বৈদেশিক রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি।
১০। সমাজে সম্প্রীতি ও সহনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ও সাংস্কৃতিক বিনিময় অনুষ্ঠান।

এই সেমিনার যেন শুধুই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না থাকে-এই আকুতি ছিল সভাপতি ভবেশ চাকমার সমাপনী বক্তব্যে। তিনি বলেন, “এই আলোচনার সার্থকতা তখনই, যখন নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের কর্মীদের মাঝেও এই প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য ছড়িয়ে দেওয়া হবে।”

সত্যিকার অর্থে, এই সেমিনারের আলো যদি আমাদের হৃদয়ে পৌঁছে যায়, তবেই আমাদের মানবিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণ হবে।

সেমিনারে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শ্যামল মিত্র চাকমা প্রমুখ।

Author

  • আমার নামে কোনো অভিযোগ থাকলে এই ঠিকানায় (muktakathan247@gmail.com) অথবা 01307006206, 09638262545 এই নম্বরে যোগাযোগ করে আপনারা প্রমাণ সহ পাঠাতে পারেন। আমার পত্রিকা অফিস আমার অপরাধ প্রমাণ সাপেক্ষে আইন গত ব্যবস্তা নিতে পারবেন আমার অপরাধের বিষয়ে।

    View all posts

Please Share This News in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© Muktakathan Kalyan Foundation ©
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102