হাসান মাহমুদ, স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা শহরের রাত অনেকটাই আলাদা দিনের চেহারা থেকে। চারপাশে নিস্তব্ধতা, নেই মানুষজনের চিৎকার-চেঁচামেচি, নেই ভিড়। শুধু জ্বলছে ল্যাম্পপোস্টের বাতি, আর বাজছে যানবাহনের হর্ন। দূর পাল্লার গাড়িগুলো ছুটে চলছে মহাসড়ক দিয়ে, মনে হচ্ছে যেন আকাশে পাখির মতো উড়ছে।
রাতে কিছুদূর হাঁটলেই দেখা মেলে সেইসব মানুষের, যাদের থাকার জায়গা নেই। গরমে ঘামছে, মশার কামড়েও তারা ক্লান্ত না হয়ে শুয়ে আছে রাস্তার পাশে। কারও মাথার ওপরে ছাদ নেই, নেই মশারি কিংবা তুলার বিছানা—তবু তারা একটা কোণ খুঁজে নিয়ে সারি করে শুয়ে পড়েছে। দেখে মনে হয় জেগে থেকেই রাতটা কাটিয়ে দিচ্ছে।
আবার কেউ কেউ ভবনের নিচে পাহারায়, ছোট একটা চেয়ার বা মোরায় বসে পান চিবাচ্ছে আর ঝিমুচ্ছে। কেউ বা রিকশা চালাচ্ছে, কেউ সিএনজি—তাদের জন্য রাত মানেই রুটি-রুজির সংগ্রাম।
এই রাত যেন এক নতুন ঢাকার গল্প বলে, যেখানে আলো জ্বলে কিন্তু মানুষ ঘুমায় না। কেউ বাধ্য হয়ে, কেউ দায়িত্বে—তবু সবার চোখেই ক্লান্তি আর স্বপ্ন জেগে থাকে।
এই শহরের রাত যেন দিনকে অতিক্রম করে ভিন্ন এক বাস্তবতা তৈরি করে। দিনের আলোয় ঢাকা যেখানে ব্যস্ত, চাকচিক্যপূর্ণ, সেখানেই রাতের ঢাকা নীরব অথচ কষ্টে ভরা। বিশাল ফাঁকা রাস্তায় নির্জনে হেঁটে যাওয়া মানুষের চোখে পড়ে বাস্তব জীবনের সংগ্রাম—যেখানে ঘুম বিলাসিতা, বিশ্রাম অলীক স্বপ্ন।
শত শত মানুষের এই জেগে থাকার পেছনে লুকিয়ে আছে না বলা গল্প। কেউ পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে রাতভর শ্রম দেয়, কেউ শুধুই বেঁচে থাকার তাগিদে রাস্তায়। কারো শরীর ক্লান্ত, কারো চোখে ঘুম জমেছে, তবুও থেমে নেই কেউ। এমনকি যখন আকাশের তারা হারিয়ে যায়, তখনও তারা আলো জ্বেলে রাখে নিজেদের মতো করে—কারও সাইকেলের হেডলাইটে, কারও চায়ের দোকানের ছোট্ট বাতিতে।
এই রাত শুধু শহরকে ঘুম পাড়িয়ে রাখে না, বরং তুলে ধরে এমন এক ঢাকা—যেখানে শ্রম, সহ্য আর স্বপ্ন মিশে থাকে নিঃশব্দে। যেখানে প্রতিটি নিশ্বাস বলে, "এখনও বেঁচে আছি, এখনও লড়ছি।