নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গোপালপুর আলিম মাদ্রাসায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে ব্যবহার করার ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল, ১৪ মে ২০২৫, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রাজশাহী জেলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামিমা ইয়াসমিন শিখা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি লিগাল নোটিশ পাঠিয়েছেন। নোটিশে শিশুদের ব্যবহার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে দ্রুত প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ২৪ এপ্রিল গোপালপুর আলিম মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের বাধ্য করে একটি মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করায়। মানববন্ধনের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত একটি মামলার প্রতিবাদ ও প্রত্যাহারের দাবি। স্থানীয়দের অভিযোগ, শিক্ষার্থীরা এ ধরনের কর্মসূচির অর্থ না বুঝেই সেখানে অংশ নেয়।
এক শিক্ষার্থী জানায়, “আমরা বুঝতে পারিনি কেন দাঁড়িয়ে ছিলাম। স্যাররা বলছিলেন, ‘এটা ধরো, দাঁড়াও, ছবি তুলবো।’” অনেক অভিভাবকও বিষয়টি সম্পর্কে জানতেন না। একজন অভিভাবক বলেন, “আমার ছেলে এসে বলেছে, না দাঁড়ালে নাম লেখাবে। এটা কি পড়াশোনার পরিবেশ?”
উল্লেখ্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০২৪ সালের ২৮ নভেম্বরের নির্দেশনা অনুযায়ী (স্মারক নং: ৩৭.০০.০০০০.০৭১.১৮.০০১.২৪.৮৮২), কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের সভা, সমাবেশ কিংবা মানববন্ধনে ব্যবহার করতে পারবে না। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
ঘটনার পেছনে একটি জমি সংক্রান্ত বিরোধের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। জানা যায়, মাদ্রাসার পাশের জমিতে এক স্থানীয় বাসিন্দা পাঠাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে স্থানীয়রা সেই নির্মাণ ভেঙে দেয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যক্তি থানায় অভিযোগ করেন এবং ২১ এপ্রিল রাজশাহীর জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলামকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
বাগমারা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, “আমি ঘটনাটি শুনেছি। কোমলমতি শিশুদের এভাবে ব্যবহার করা অনৈতিক এবং এটি প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” একইসঙ্গে বাগমারা থানার ওসিও তদন্তের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকারকর্মীরা ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের আচরণ শিশুদের অধিকার লঙ্ঘন করে এবং নৈতিকতা বিরোধী। তাঁরা দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।