এইচ এম এরশাদ,আন্তর্জাতিক সংবাদদাতাঃ এটি শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলার বিষয় নয় — এটি একটি সামাজিক জরুরি অবস্থা
এক ভয়াবহ পরিসংখ্যান প্রকাশ পেয়ে আইন ও সমাজিক মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
২০২৪ সালে মাদক পাচার ও অপব্যবহারের রেকর্ড ৩,৩৭৪টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে — যা গত ছয় বছরে সর্বোচ্চ। এর সঙ্গে ছিল ৯৯৩টি আসক্তি সংক্রান্ত অভিযোগ, যা হতাশাগ্রস্ত বাবা-মা ও পরিবার নিজের সন্তানদের বিরুদ্ধেই দায়ের করেছেন। সব মিলিয়ে, মাদক ও মনস্তাত্ত্বিক পদার্থসংক্রান্ত মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৪,৩০০-এ।
আর ২০২৫? শুরুতেই ভয় ধরাচ্ছে।
শুধুমাত্র প্রথম পাঁচ মাসেই প্রায় ১,৫০০ নতুন মামলা নথিভুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ১,১০২টি মাদক অপব্যবহার ও পাচারের ঘটনা এবং ৩৫৫টি পারিবারিক আসক্তির অভিযোগ — অথচ বছর এখনও অর্ধেকও পেরোয়নি।
আল-জারিদাকে সূত্র জানিয়েছে, অধিকাংশ মামলাই মনস্তাত্ত্বিক বড়ি ও পদার্থ সংশ্লিষ্ট। হাশিশসহ অন্যান্য নিষিদ্ধ মাদকও বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে। ২০২৩ সালের ২,৬৬৬টি মামলার তুলনায় ২০২৪ সালের ৩,৩৭৪টি মামলা দেশের মাদক সংকটের ভয়াবহতা আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।
কিন্তু সবচেয়ে ভয়ংকর দিকটা কোথায়? অভিযুক্তদের প্রোফাইল।
গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে প্রায় ১৫% এখন নারী — যা উদ্বেগজনকভাবে ইঙ্গিত দেয়, সমাজের সব স্তরে, এমনকি তরুণী নারীদের মধ্যেও মাদকের বিস্তার ঘটছে।
অভিযুক্তদের বয়স বিভিন্ন প্রজন্মজুড়ে বিস্তৃত। সবচেয়ে প্রবীণ অভিযুক্ত হলেন ৭০ বছর বয়সী এক যাত্রী, যিনি ওষুধের মোড়কে লুকানো মাদকসহ ধরা পড়েন।
প্রায় ৩০০ মামলায় নিষিদ্ধ ঘুমের বড়ি ও অন্যান্য ওষুধ বিদেশ থেকে ভুল তথ্য দিয়ে আনার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু মামলা খারিজও হয়েছে, কারণ অপরাধের উদ্দেশ্য প্রমাণিত হয়নি।
পাবলিক প্রসিকিউশন মাদকবিরোধী ইউনিটের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা তৎপর রয়েছে, তল্লাশির অনুমতি প্রদান, তদন্ত এবং আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে অভিযান চালানো অব্যাহত রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রের সতর্কবার্তা — এই সংখ্যা ২০২৫ সালে আরও বাড়তে পারে এবং গত বছরের চেয়েও বেশি হতে পারে।
এটি শুধুমাত্র আইন প্রয়োগের বিষয় নয় — এটি এক সামাজিক জরুরি অবস্থা।কর্তৃপক্ষ পরিবারগুলোকে সচেতন, সম্পৃক্ত এবং সক্রিয় থাকার আহ্বান জানিয়েছে, যেন সন্তানরা মাদকের ছোবল বা অপরাধচক্রের ফাঁদে না পড়ে।
কুয়েত এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। সমাজ কি এই হুমকির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে? নাকি এই পরিসংখ্যান আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে?