এইচ এম এরশাদ,আন্তর্জাতিক সংবাদদাতাঃ স্বৈরতন্ত্রের দীর্ঘ ইতিহাস এবং গণতন্ত্রের ক্ষণিক উত্থান — এই চক্রেই আবর্তিত হয়েছে মিশরের রাজনীতি। হোসনি মোবারকের ৩০ বছরের শাসন, এরপর গণঅভ্যুত্থানে তার পতন, এবং মোহাম্মদ মুরসির সংক্ষিপ্ত গণতান্ত্রিক শাসন — সবশেষে সামরিক হস্তক্ষেপে ফের ক্ষমতা দখল। এই চিত্রনাট্য যেন শুধু মিশরের নয়, বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলনও বটে — এমনটাই ভাবছেন অনেকে।
গত ১৬ বছরের একচ্ছত্র শাসনে দেশবাসী দেখেছে বিরোধীদের নিপীড়ন, বাক-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, এবং মতপ্রকাশের সীমাবদ্ধতা। অতঃপর জনগণের পরিবর্তনের প্রত্যাশায় পথ চলা শুরু হয়। ভোট ও আন্দোলনের মাধ্যমে এক ভিন্নমতাবলম্বী সরকার ক্ষমতায় এলে জনগণের মাঝে ফিরে আসে আশা — কিন্তু তার পরেই শুরু হয় নতুন সংকট।
বিরোধী শক্তির দাবি-দাওয়া, রাস্তা অবরোধ, ধর্মীয়-সামাজিক সংস্কার প্রশ্নে দ্বন্দ্ব এবং আন্তর্জাতিক চাপ — সবমিলিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয় নতুন নেতৃত্বের চারপাশে। দেশ যেন পড়ে যায় আরেক অচল অবস্থার মুখে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অতিরিক্ত প্রত্যাশা, দায়িত্বহীন দাবি, আর নেতৃত্বের স্থিতিহীনতার মধ্যে দিয়ে গণতন্ত্র নিজেই বিপন্ন হতে পারে। আর এর সুযোগ নিয়ে যদি আবির্ভূত হয় আরেক “ত্রাতা”, তবে গণতন্ত্রের স্বপ্ন ফের দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে পারে।
এমন আশঙ্কার মধ্যে অনেকেই বলছেন, এই জাতির বড় সমস্যা হলো — ক্ষমতার প্রতি অতিমাত্রায় আসক্তি এবং গঠনমূলক সমালোচনাকে শত্রু হিসেবে দেখা। ফলস্বরূপ, যিনি আজ নেতৃত্বে, কাল তিনি ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যেতে পারেন।
বাংলাদেশের রাজনীতি ক্রমেই এমন এক মোড়ে পৌঁছেছে, যেখানে ভবিষ্যৎ যেন আবারও ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি। গণতন্ত্রের নামে স্বৈরতন্ত্র, আর স্বৈরতন্ত্রের নামে আবারও “উদ্ধার অভিযান” — এ জাতির ভবিষ্যৎ কি তবে আবারও অন্ধকারেই?