বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ০৬:৪০ অপরাহ্ন
English
ব্রেকিং নিউজ
বারহাট্টায় তিনদিনব্যাপী জাতীয় ফল মেলার উদ্বোধন পাইকগাছায় দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রম প্রকল্প অহিতকরণ সভা আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন নাটোর-১ আসনে বিএনপির একাধিক, জামায়াতের একক প্রার্থী মাঠে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল জিম্মি কসাইদের হাতে ময়মনসিংহে ১১দিনে ৭ খুন, পুলিশের ব্যর্থতায় বেপরোয়া খুনি, নিরাপত্তাহীনতায় সাধারণ মানুষ” গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আহত ছয়, ধস দুই তলা বিল্ডিং বিধবা নারীকে পেটানোর অভিযোগ সেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে লালপুরে ভেজাল আইসক্রিম তৈরির অভিযোগে ব্যবসায়িককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ভেষজ বিজ্ঞানী টিপু সুলতান: কুসুমপুরে সৌখিন কৃষি ও একজন মুক্তিযোদ্ধার মানবসেবায় নিরব বিপ্লব ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুদকের অভিযান

ময়মনসিংহে ১১দিনে ৭ খুন, পুলিশের ব্যর্থতায় বেপরোয়া খুনি, নিরাপত্তাহীনতায় সাধারণ মানুষ”

Muktokathan news
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন, ২০২৫
  • ১০ Time View

আবুল কালাম আজাদ, ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি :  ঈদের পর মাত্র ১১ দিনের ব্যবধানে ময়মনসিংহ জেলায় অন্তত ৭টি নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এসব খুনের ঘটনায় প্রশাসনের ব্যর্থতা ও সামাজিক নিরাপত্তার চরম সংকট স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কোথাও প্রেমঘটিত বিরোধ, কোথাও চায়ের ১০ টাকা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা, আবার কোথাও পারিবারিক কলহ—এইসব তুচ্ছ কারণেই খুন হচ্ছে মানুষ। অথচ অধিকাংশ ঘটনায় পুলিশ অপরাধীর অবস্থান জানার পরও ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ, যা জনমনে চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটে ১৭ জুন রাতে ফুলপুর উপজেলার ভাইটকান্দি মোড়ে, যেখানে নিখোঁজ হওয়ার চার দিন পর নবম শ্রেণির স্কুলছাত্র আবু রায়হানের মরদেহ উদ্ধার হয় একটি বাড়ির সেফটিক ট্যাংক থেকে। প্রেমঘটিত বিরোধকে কেন্দ্র করে পাশের বাড়ির মেয়ের পরিবার এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ। অথচ ঘটনার পরপরই ঘাতকদের বাড়িতে তালা ঝুলছিল, তবুও পুলিশ তাৎক্ষণিক কোনো অভিযান চালায়নি। বরং ওসি আবদুল হাদি এখন বলছেন, ‘তারা পালিয়ে গেছে, তাই তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে ধারণা করছি’—এমন দায়িত্বহীন বক্তব্যে পুলিশের পেশাদারিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

এর আগে ত্রিশালের হরিরামপুরের হাফিজুর রহমানকে মাথা থেঁতলে হত্যা করে ইটভাটায় ফেলে রাখা হয়। একাধিক দিন পার হলেও পুলিশ হত্যার কারণ খুঁজে পায়নি। গফরগাঁওয়ে কলেজছাত্র নাঈম মিয়া পূর্ববিরোধের জেরে কুপিয়ে হত্যা হলেও থানায় কোনো অভিযোগ নেই—এমন দাবিতে দায় এড়াতে ব্যস্ত পাগলা থানা। অথচ নিহত নাঈমের বিরুদ্ধে থানায় ছয়টি মামলা থাকার পরও তার নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি।

১৩ জুন গৌরীপুরে চায়ের ১০ টাকা নিয়ে ছাত্রদল নেতা হুমায়ুন কবীরকে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এত বড় একটি ঘটনা ঘটার পরও পুলিশ মাত্র একজনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে, যা তদন্তের দুর্বলতাই প্রমাণ করে।

মাসকান্দায় ৭০ বছরের বৃদ্ধা জোবেদা খাতুনের অর্ধগলিত মরদেহ পাওয়া যায় ঈদের পাঁচ দিন পর। অথচ পরিবার তার নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই থানায় বারবার যোগাযোগ করে আসছিল বলে দাবি স্বজনদের। পুলিশ রহস্য উদ্‌ঘাটনে এখনো ব্যর্থ।

ভালুকায় স্বামী কর্তৃক গার্মেন্টসকর্মী স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনকে হত্যা এবং মুক্তাগাছায় মানসিক ভারসাম্যহীন নাতির হাতে বৃদ্ধা জমিলা খাতুন হত্যাকাণ্ড নিয়েও পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। অপরাধী ‘স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি’ দিলেও এতদিন প্রশাসনের ভূমিকা ছিল সীমিত।

এইসব ঘটনায় প্রতীয়মান হচ্ছে—জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। অপরাধের আগাম বার্তা থাকলেও পুলিশ প্রতিক্রিয়াশীল অবস্থানে রয়ে যাচ্ছে।

ময়মনসিংহ ফোরামের কো-অর্ডিনেটর সাঈদ ইসলাম বলেন, “সহনশীলতার অভাব, পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা সমাজকে হিংস্র করে তুলেছে। কিন্তু অপরাধ রোধে পুলিশ যেভাবে ব্যর্থ, তাতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।”

পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম স্বীকার করেছেন, “এগুলো ঠান্ডা মাথার হত্যাকাণ্ড নয়, তাৎক্ষণিক রাগে ঘটে যাচ্ছে।” কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—এই তাৎক্ষণিক রাগে কেন বারবার মানুষ খুন হচ্ছে? কেন পুলিশ এসব ঘটনা প্রতিরোধে আগাম প্রস্তুতি নিতে পারছে না?

জেলায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে পুলিশের দায়িত্বশীলতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে সামাজিক সচেতনতা এবং অপরাধ প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স নীতিতে ফিরতে হবে—এমনটাই প্রত্যাশা এখন জেলার সাধারণ মানুষের।

Authors

Please Share This News in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© Muktakathan Kalyan Foundation ©
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102