গোকুল চন্দ্র রায়, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার একতা ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় প্রাণ হারিয়েছেন আশা মনি (১৯) নামের এক প্রসূতি নারী। মৃত্যুর পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দায়িত্বে চরম গাফিলতি এবং ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে স্থানীয় জনতা, বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ক্লিনিক ঘেরাও করে অনশন শুরু করেন।
পরিবারের দাবি, শুক্রবার সকালে বীরগঞ্জ পৌর শহরের বলাকা মোড়ের চা দোকানি অতুলের ছেলে হৃদয়ের স্ত্রী আশা মনিকে প্রসবজনিত কারণে স্থানীয় একতা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিজারিয়ান অপারেশনের সময়ই তাঁর মৃত্যু ঘটে। মৃত্যুর বিষয়টি গোপন করে, মৃতদেহটি “সুস্থ রোগী” হিসেবে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্লিনিকের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. ইয়াসমিন ও কর্তৃপক্ষ মিলে ঘটনার সত্যতা আড়াল করার চেষ্টা করেন। খবর ছড়িয়ে পড়লে জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং ক্লিনিক মালিক রিপনসহ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও স্টাফরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।
বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যরা ক্লিনিক ঘেরাও করে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তারা বলেন, “এই ঘটনার বিচার না হলে আর কোনো মা চিকিৎসা অবহেলায় প্রাণ হারানোর ঝুঁকিতে থাকবেন।”
এদিকে একটি স্বস্তির খবর হলো, নিহত প্রসূতির নবজাতক সন্তানটি সুস্থ রয়েছে এবং পারিবারিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে বলে জানা গেছে।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় বীরগঞ্জে শোক ও ক্ষোভের ছায়া নেমে এসেছে। তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত গাইনী চিকিৎসক ডা. ইয়াসমিনের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এদিকে ক্লিনিকটির মালিক রিপন ইসলামের মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আফরোজ সুলতানা বলেন,
“মৃত আশা রানী রায়ের পরিবারের পক্ষ থেকে যদি কোনো লিখিত অভিযোগ আসে, তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
বীরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল গফুর বলেন,
“একতা ক্লিনিকে সিজারিয়ানের পর এক প্রসূতির মৃত্যুর খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিল। এখনো পর্যন্ত মৃতের পরিবার থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর আহমেদ বলেন,
“এটি একটি স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিষয়। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”