এইচ এম এরশাদ, আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা : যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি বিমান হামলায় ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর সৌদি আরব গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে।
রোববার সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে সাম্প্রতিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি, বিশেষ করে দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ঘটনাকে সৌদি আরব গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে।” বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “বর্তমান পরিস্থিতিতে সংঘাত এড়াতে ও উত্তেজনা কমাতে সংযম অনিবার্য। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছাতে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হচ্ছে।”
এর আগে রোববার সকালে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফোর্দো, নাতানজ ও ইসফাহান পারমাণবিক কেন্দ্রে বিমান হামলা চালায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ দেওয়া এক পোস্টে হামলার খবর নিশ্চিত করে বলেন, “সব টার্গেট সফলভাবে আঘাত করা হয়েছে এবং অংশ নেওয়া সব যুদ্ধবিমান নিরাপদে ইরানের আকাশসীমার বাইরে ফিরে গেছে। বিশ্বের আর কোনো সেনাবাহিনী এমন নিখুঁত অভিযান চালাতে পারত না। এখন শান্তির সময়।”
ট্রাম্প আরও দাবি করেন, ভারি বোমার আঘাতে ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনাটি, যা মাটির ২৬২ ফুট নিচে অবস্থিত, পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, “অনেক টার্গেট এখনো বাকি আছে। আজ রাতের লক্ষ্যবস্তু ছিল সবচেয়ে জটিল ও বৈধ। কিন্তু যদি দ্রুত শান্তি না আসে, তাহলে আমরা আরও আঘাত হানব — নিখুঁতভাবে, দ্রুত এবং কার্যকরভাবে।”
ইরানের পক্ষ থেকেও এই হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থার বরাতে ইরনা জানিয়েছে, যেসব স্থাপনায় হামলার কথা বলা হয়েছে, সেখানে বর্তমানে তেজস্ক্রিয় উপাদান নেই। ধারণা করা হচ্ছে, ইরানি কর্তৃপক্ষ আগেভাগেই এসব স্থান থেকে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলেছিল।
উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন ভোররাতে ইসরায়েল ইরানে প্রথম হামলা শুরু করে। ইসরায়েল জানায়, আগাম প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে তারা ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়। এরপর থেকে দু’পক্ষের মধ্যে চলমান সংঘাত আজ দশম দিনে গড়িয়েছে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত সংঘাতে দেশটির ২৪ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত আট দিনে ইরানে অন্তত ৪৩০ জন নিহত এবং ৩,৫০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট নিউজ এজেন্সির দাবি, ইরানে নিহতের সংখ্যা ৬৫৭ জনে পৌঁছেছে।