সাধীন আলম হোসেন,নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরের ওষুধি গ্রাম খ্যাত খোলা বাড়িয়া ইউনিয়নের লক্ষীপুর বাজার যেন চিকিৎসার নামে প্রতারণার হাট,নেই কবিরাজ ও কবিরাজ ঘরের অভাব।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও চলে এদের রমরমা ব্যাবসা।অর্ডার পেলেই দেশ বিদেশে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানো হয় ওষুধ।পাওয়া যায় যৌন শক্তি বর্ধক হালুয়া,পাউডার ও গোপনাঙ্গে মালিশের জন্য মেসেজ পাওয়ার ওয়েল সহ জন্ডিস,ডায়াবেটিস, লিভার,হাড়ক্ষয়, দৃষ্টিশক্তি,জ্বর, কাশি, কোষ্ঠকাঠিন্য,পাইলস, কোলেস্টেরল,ওজন কমানো,উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি ইত্যাদি রোগের গাছামো ওষুধ।যে গুলো তৈরিতে নেই কোনো অনুমোদন।উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে,এক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না চিকিৎসাবিজ্ঞানের কোনো নিয়মকানুন। ‘শতভাগ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ও বিফলে মূল্য ফেরত’ ঘোষণা দিয়েও ফেসবুকে রীতিমতো আধিপত্য বিস্তার করেছে এসব ভুয়া পণ্য। চটকদার এসব বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্ত হয়ে সুস্থতার আশায় সেসব ফাঁদে পা দিচ্ছেন অনেকে।এসব ওষুধ সেবন করে শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন অনেকে।
সোমবার(8 জুলাই-2025)সকালে ওষুধি গ্রামে গিয়ে কবিরাজ আব্দুস সালাম,কবিরাজ মোজাম্মিল হক,মোস্তাফার সাথে কথা হলে তারা বলেন আমাদের গ্রামটা ওষুধি গ্রাম,ওষুধি গাছ মেশিনে মাড়াই করে পলির মাধ্যমে ও কৌটার মাধ্যমে রোগীদের দিয়ে থাকি।আমাদের দোকানের ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া আর কোন অনুমোদন নেই।কেউ ওর্ডার করলে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেও পাঠাই।অনুমোদন লাইসেন্স বা কাগজপত্র কারা দেই তাও আমাদের জানা নেই।এ দিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধ প্রস্তুতকারক ও গবেষকদের চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ে বৈধ সনদ থাকতে হয়।কোনো ওষুধ, ফুড সাপ্লিমেন্ট ও কসমেটিক পণ্য বাজারজাতের আগে মানবদেহে তা কতটুকু মাত্রায় কার্যকর এবং এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে কি না, তা নিয়ে গবেষণা করা হয়। মানবদেহে প্রয়োগের আগে প্রাণীদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও হয়। চূড়ান্ত ধাপে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদনের পর তা বাজারজাত করা হয়।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্র বলছে, অ্যালোপ্যাথিক, ইউনানি,আয়ুর্বেদিক, হোমিও ও হারবাল ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশের জোগান দিয়ে বিশ্বের ১৫৭টি দেশে রপ্তানি করছে। বর্তমানে ওষুধের এ বাজার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার। সুযোগসন্ধানী প্রতারকরা রোগীদের আকৃষ্ট করতে প্রচারপত্র বিলি, কেবল অপারেটরে বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় ফেসবুকে পেজ ও গ্রুপ খুলে বিভিন্ন নামে এসব মানহীন ও নকল ওষুধ বিক্রি করছে। যদিও আইনে আছে, শুধু হারবাল বা ভেষজই নয়, প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিও ফেসবুকে ক্যাম্পেইন করে ওষুধ বিক্রি করতে পারে না।
এ বিষয়ে ঐ এলাকার সচেতন মহল সংবাদ কর্মীদের জানান,ফেসবুকে এসব পেজ কারা পরিচালনা করছে, জনস্বার্থে দ্রুত এর তদন্ত হওয়া দরকার। অনলাইনে অপরাধ ঠেকাতে সরকার যে কঠোর সাইবার নিরাপত্তা আইন করেছে, তা মূলত এসব অপরাধের লাগাম টেনে ধরতেই কাজ করার কথা। অনলাইনে এমন প্রতারণা ঠেকাতে স্বাস্থ্যসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই তাদের প্রত্যাশা।