আবুল কালাম আজাদ, ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের ভালুকায় ভূমি সেবাকে হয়রানিমুক্ত ও স্বচ্ছ করার লক্ষ্য নিয়ে কঠোর অবস্থানে গিয়েছেন সদ্য যোগদানকারী সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইকবাল হোসাইন। দায়িত্ব গ্রহণের পর মাত্র কয়েকদিনেই তিনি নামজারির কয়েকটি আবেদনে জাল দলিল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওয়ারিশান সনদ চিহ্নিত করে স্থানীয় প্রশাসনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন।
গত ২৪ জুন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি সরকারি নির্দেশনার আলোকে ভূমি সেবার প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দিয়েছেন কড়া নির্দেশনা—মূল দলিল বা সহীমুহুরীর রঙিন ও স্পষ্ট কপি স্ক্যান করে জমা দিতে হবে, ফটোকপি স্ক্যান গ্রহণযোগ্য নয়। তিন মাসের মধ্যে ইস্যুকৃত ওয়ারিশান সনদ ছাড়া আবেদন গ্রহণ করা হবে না। জন্মসনদ অবশ্যই অনলাইন ভেরিফায়েড হতে হবে। নাবালকের জমি বিক্রিতে অভিভাবকের সম্মতি বা আদালতের অনুমতি বাধ্যতামূলক এবং প্রাতিষ্ঠানিক আবেদনে জেলা প্রশাসকের পূর্বানুমতি থাকতে হবে।
তিনি আরও জানান, দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ১০ ধারা অনুযায়ী, কোনো মামলার কার্যক্রম চলাকালে সংশ্লিষ্ট জমির নামজারি বা মিসকেস কার্যক্রম গ্রহণযোগ্য নয়। হিন্দু নারীদের সম্পত্তিতে মালিকানা বিষয়ে বিশেষ পরিস্থিতিতে ব্যতিক্রম প্রযোজ্য হলেও, নিয়ম অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইকবাল হোসাইন বলেন, “ভূমি সেবা হয়রানিমুক্ত ও স্বচ্ছ রাখতে কোনো ধরনের জাল কাগজপত্র গ্রহণ করা হবে না। প্রতিটি আবেদন যাচাই-বাছাই করে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ভূমি অফিস নিয়ে জনগণের অভিযোগ অনেক। আমি চাচ্ছি সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে। যে সেবা সঙ্গে সঙ্গে দেওয়া সম্ভব, তা দেবো। আর যা সম্ভব নয়, তার কারণ ও সমাধান লিখিতভাবে জানিয়ে দেবো।
জনগণকে বৈধ ও সঠিক কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ভূমি সেবাকে হয়রানিমুক্ত করতে আপনাদের সহযোগিতা চাই।
ভালুকার স্থানীয় বাসিন্দারা এই উদ্যোগকে যুগান্তকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাদের মতে, ভূমি অফিসে দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম ও হয়রানি চলছিল। এখন সহকারী কমিশনারের কঠোর অবস্থান ভূমি ব্যবস্থায় বাস্তব পরিবর্তনের পথ দেখাবে।
তাদের প্রত্যাশা, এই উদ্যোগ যেন শুধুমাত্র তাৎক্ষণিক প্রদর্শনীতে সীমাবদ্ধ না থেকে একটি স্থায়ী দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে। যাতে করে সাধারণ মানুষ অবশেষে হয়রানিমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক ভূমি সেবা পাই।