আবুল কালাম আজাদ, ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি: জনমনে বাড়ছে আতঙ্ক, বিশেষজ্ঞরা বলছেন—সামাজিক অবক্ষয় ও বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা দায়ী
ময়মনসিংহে চলতি বছরের মাত্র সাত মাসে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই ২০২৫) পর্যন্ত সংঘটিত হয়েছে ৬৩টি হত্যাকাণ্ড। বেশিরভাগ হত্যার পেছনে কারণ হিসেবে উঠে এসেছে পারিবারিক কলহ, সামান্য বিরোধ বা তুচ্ছ ঘটনা। এ অবস্থায় এলাকাবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উদ্বেগ ও আতঙ্ক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, পরিস্থিতি মোকাবেলায় জোরদার করা হবে বিট পুলিশিং ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম।
জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত সাড়ে চার বছরে ময়মনসিংহে মোট ৪৫১টি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাসের মধ্যেই ঘটেছে ৬৩টি হত্যাকাণ্ড—যার প্রতিটির কারণ খুঁজলে বেরিয়ে আসছে ‘তুচ্ছ’ রাগ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব কিংবা আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত ক্ষোভ।
সম্প্রতি ময়মনসিংহ সদরের রাঘবপুর গ্রামে চাচা আলতাব হোসেন খুন হন ভাতিজির সঙ্গে স্বামী রাসেলের বিচ্ছেদের জেরে। ১১ জুলাই রাতে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে তাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে জখম করা হয়। হাসপাতালে এক সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থেকে ১৭ জুলাই তিনি মারা যান। অভিযুক্ত রাসেল এখনও পলাতক।
ভালুকায় একটি ঘটনায় দেবরের হাতে খুন হন এক গৃহবধূ ও তার দুই সন্তান, শুধুমাত্র খাবার নিয়ে পারিবারিক বিরোধের জেরে। এমনকি ১০ টাকা নিয়ে ঝগড়া বা কথার কাটাকাটিও কখনো প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে।
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডগুলোর বেশিরভাগই তাৎক্ষণিক রাগ বা আবেগের ফল। ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের চেয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষোভই বেশি ভয়ানক হয়ে উঠছে। এই প্রবণতা রোধে আমরা বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করছি।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে কাজ করছে গভীর সামাজিক অবক্ষয়, পারিবারিক অনুশাসনের অভাব এবং বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ ওয়াকিলুর রহমান বলেন, “আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামো ভেঙে পড়ছে। সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবারও মূল্যবোধ ও শালীনতার চর্চা শুরু করতে হবে। সেই সঙ্গে বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা দূর না করা পর্যন্ত এ ধরনের অপরাধ থামবে না।”
পুলিশ বলছে, জনসচেতনতা বাড়ানো ও অপরাধ প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনকে এ বিষয়ে দায়িত্বশীল হতে হবে।