প্রতিনিধি ১২ আগস্ট ২০২৫ , ২:০৮:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধিঃ লক্ষ্মীপুর জেলাসহ আশেপাশের জেলা সমূহের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত আলতাফ মাস্টার ঘাট।আস্তে আস্তে মেঘনার পেটে হারিয়ে যাচ্ছে এই বিনোদন কেন্দ্রটি। গত তিনমাসে ঘাটের একাংশ তলিয়ে গেছে। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে।আগে সেখানে ছিল জোয়ার-ভাটার নিত্য খেলা, ঢেউ আর বেলাভূমির মিতালী, নদী আর প্রকৃতির মিশেল এক অপরুপ দৃশ্য! উঁচু ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চকচকে রুপালি ইলিশ শিকার এবং সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করার জন্য সেখানে অনেকে রাত-বিরাতে ছুটতেন। এখন তা অনেকটা অতীত।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ক্ষয়ক্ষতি কমাতে জরুরি ভিত্তিতে আলতাফ মাস্টার ঘাট এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। প্রায় ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দে এক মাস ধরে এ কার্যক্রম চলছে। এছাড়া চাঁদপুরের হাইমচর থেকে রায়পুরের আলতাফ মাস্টার ঘাট এলাকা পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার নদীর তীর ভাঙনরোধে প্রকল্পের প্রস্তাবনা রয়েছে। ব্লকের মাধ্যমে এ কাজ হওয়ার কথা রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে নদীর তীরের বাসিন্দরা টেকসই সুফল পাবেন।
গত রবিবার বিকেলে ওই ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, মানুষের জমজমাট উপস্থিতি থাকা এলাকাটি এখন কোলাহলমুক্ত-নিষ্প্রাণ। ভাঙনের ক্ষত চিহ্ন ভেসে আছে। ঘাট এলাকায় ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে উঠা হোটেল-রেঁস্তোরাসহ অন্তত ১০টি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্থাপনাগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়। এতে শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী কর্মহীন হয়ে পড়েছে। সীমিত পরিসরে ২-৩টি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান চালু থাকলেও ক্রেতাদের সায় নেই।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রায়পুরে উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের চরজালিয়া গ্রামে ২০১৭ সালে নিজের নামে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন হাওলাদার প্রথমে মাছঘাট স্থাপন করেন। স্থানটি জেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে। সেখানে গড়ে উঠে হোটেল-রেঁস্তেরাসহ বিনোদনধর্মী বিভিন্ন স্থাপনা।
পরে সেটি বিনোদন কেন্দ্রে রুপ নেয় এবং এটি আলতাফ মাস্টারের ঘাট নামে পরিচিতি পায়। লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুরসহ বিভিন্নস্থান থেকে আসা ভ্রমণপিপাসুরা প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এখানে ভিড় করতেন। বিশেষ করে ঈদ বা সরকারি ছুটির সময় নানা বয়সী সমাগম হতো।
ওই ঘাটে নোয়াখালীর একলাশপুর থেকে আসা এনজিওকর্মী নাহিদ ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘অনেকের কাছে মাস্টার ঘাটের সুনাম শুনে তিনি এসেছেন। এসে দেখেন, ঘাটের একাংশ ভেঙে গেছে। দ্রুত নদীরপাড়ে টেকসই বাঁধ না দিলে বিনোদনকেন্দ্রটি অস্তিত্ব হারাবে।’
ওইঘাটের তিনজন ব্যবসায়ী জানান, আমরা অনেক স্বপ্ন নিয়ে ঘাটে প্রতিষ্ঠান গড়েছি। একদিকে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন অন্যদিকে ভাঙনের কারণে আমরা সব হারিয়েছি। ভাঙনের শুরুতে সরকার ব্যবস্থা নিলে এ বিপদ হতো না। এখন টেকসই বাঁধ দিলেও আগের সেই আমেজ ফেরানো সম্ভব হবে না।
ঘাটের প্রতিষ্ঠাতা আলতাফ হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘ভাঙনের কারণে ঘাট এলাকাটি এখন চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতোমধ্যে একাংশ তলিয়ে গেছে। জিওব্যাগের ডাম্পিং ধীরগতিতে চলছে। ডাম্পিংটি সঠিকভাবে না করায় ঘাটের পাকা সড়কেও ফাটল ধরেছে। এতে ঘাট আগের অবস্থায় ফেরা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।’
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ জামান খান বলেন, ‘ভাঙনে আলতাফ মাস্টার ঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতি কমাতে জরুরিভিত্তিতে সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এছাড়া চাঁদপুরের হাইমচর থেকে আলতাফ মাস্টার ঘাট এলাকা পর্যন্ত সাত কিলোমিটার নদী তীরের ভাঙনরোধে প্রকল্পের বাস্তবায়ন হলে নদী তীরের বাসিন্দারা সুফল পেতে শুরু করবে।