প্রতিনিধি ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ৫:৫১:৩৫ প্রিন্ট সংস্করণ
মোঃ সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহীতে সাংবাদিকদের নামে দায়ের করা ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে সাংবাদিক সমাজের দেওয়া ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষ হলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)। এর ফলে ক্ষুব্ধ সাংবাদিক সমাজ শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) আরএমপি পুলিশের সকল সংবাদ বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
শনিবার সকাল ১১টায় শিরোইল বাস টার্মিনাল পূর্বালী মার্কেটে অবস্থিত রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাব কার্যালয়ে আয়োজিত জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাব, রাজশাহী বিভাগীয় প্রেসক্লাব, রাজশাহী অনলাইন সাংবাদিক ফোরাম, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা রাজশাহী শাখা, রুর্যাল জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন রাজশাহী শাখা, বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেসক্লাব রাজশাহী শাখা এবং রাজশাহী অনলাইন প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ।
সাংবাদিক সমাজের ক্ষোভ ও অভিযোগ
সভায় বক্তারা অভিযোগ করেন—আরএমপির শাহমখদুম থানার ওসি মাছুমা মুস্তারী এবং প্রতারক আক্তারুল ইসলামের যোগসাজশে ছয় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়েছে। অথচ ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের অভিযোগ আমলে না নিয়ে উল্টো প্রতারকের পক্ষেই মামলা রেকর্ড করেছে পুলিশ।
বক্তারা বলেন, সারা দেশের ন্যায় রাজশাহীতে সাংবাদিকদের হয়রানি, স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর হামলা এবং গণমাধ্যমকে স্তব্ধ করার এক নোংরা অপচেষ্টা চলছে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—“আমরা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। কিন্তু আরএমপি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই আজ থেকে আরএমপির সব ধরনের সংবাদ বর্জন করা হলো।”
পরবর্তী কর্মসূচি
সভায় সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়—
ওসি মাছুমা মুস্তারীকে অবিলম্বে প্রত্যাহার ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইজিপি বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে।
শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।
আদালতের মাধ্যমে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সাংবাদিক নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন—“যদি মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও ওসিকে অপসারণ না করা হয়, তবে আন্দোলন আরও জোরালো করা হবে এবং প্রয়োজনে জাতীয় পর্যায়ে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
ঘটনার পটভূমি
এর আগে ৪ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন করে সাংবাদিক সমাজ। সেখানে তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও ওসি মাছুমা মুস্তারীকে অপসারণের আল্টিমেটাম দেন।
উল্লেখ্য, সংবাদ প্রকাশের জেরে শাহমখদুম থানার ওসি মাছুমা মুস্তারী ও প্রতারক আক্তারুল ইসলামের যোগসাজশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। প্রতারক আক্তারুল ইসলাম আ.লীগ নেতা নুরুল ইসলাম ঠান্ডুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন দপ্তরে ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিতো।
অভিযোগ রয়েছে, ওসি মাছুমা মুস্তারী দীর্ঘ এক যুগ ধরে আ.লীগের প্রভাবে রাজশাহীতে কর্মরত আছেন। বর্তমানে তিনি মতিহার এলাকায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে সাত তলা বিশিষ্ট বাড়ি নির্মাণ করছেন। এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক মামলা করেন।
এ মামলায় রাজশাহীর দৈনিক আলো পত্রিকার সম্পাদক আজিবার রহমান, সিনিয়র ফটো সাংবাদিক ফায়সাল হোসেন, আরটিভি’র ক্যামেরাম্যান আরিফুল হক রনি, কালের কণ্ঠ এর নাঈম হোসেন, গণমুক্তি পত্রিকার মাজহারুল ইসলাম, আজকের প্রত্যাশা পত্রিকার নাজমুল হকসহ একজন ঠিকাদারকে আসামি করা হয়।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সাংবাদিকদের অভিযোগ আমলে না নিয়ে বরং এক সপ্তাহ পর প্রতারকের পক্ষ নিয়ে মামলা রেকর্ড করে আরএমপি শাহমখদুম থানা। এতে সাংবাদিক সমাজে ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।