হাসিনুজ্জামান মিন্টু, ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শিবগঞ্জ গ্রাম। এই গ্রামে হঠাৎ
ই যেন লেগে গেছে সোনার খনি জ্বর। খবর ছড়িয়ে পড়েছে এখানে মাটি খুঁড়লেই সোনা পাওয়া যাচ্ছে। এই খবরে গ্রামবাসীর মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলের পর থেকেই এ গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
গ্রামের কয়েকজন জানান, দুজন মানুষ নাকি সত্যিই মাটি খুঁড়ে সোনা পেয়েছেন। সেই খবর এক কান থেকে আরেক কানে ছড়িয়ে পড়তেই যেন হৈচৈ শুরু হয়ে যায়। আজ রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত শিবগঞ্জের ওই স্থানে ভিড় জমায় শত শত মানুষ।
শিশু, কিশোর, তরুণ, এমনকি প্রবীণ নারীরাও কোদাল, কাস্তে, লাঠি, ঝুড়ি নিয়ে সেখানে ছুটে আসেন—মাটি খুঁড়ে সোনা পাওয়ার আশায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠজুড়ে এক অদ্ভুত দৃশ্য। মাটির ওপর ছোট ছোট গর্ত। একেকজন মাটি খুঁড়ে আবার ভরছেন, কেউবা মুঠো মুঠো মাটি হাতে নিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন।
কারো চোখে-মুখে স্বপ্ন—সোনার খোঁজে নতুন জীবন শুরু হবে, ভাগ্য বদলে যাবে।
স্থানীয় এক কিশোরী জান্নাত বলেন, ‘গতকাল আমি মাটি খুঁড়ে সোনা পেয়েছি। ছোট্ট একটি টুকরা। তাই আজ আবার এসেছি। হয়তো আজ আরো পাব।
’ তার কথাই আশপাশের মানুষের বিশ্বাস আরো জোরদার করেছে।
জান্নাতের সঙ্গে আরো এক তরুণের নাম উঠে এসেছে, যিনি নাকি গতকাল সামান্য সোনা পেয়েছিলেন। তবে এ নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি।
আজকের ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, শুধু শিবগঞ্জ নয়, আশপাশের কয়েকটি গ্রাম থেকেও মানুষ দলে দলে সেখানে ভিড় করছেন। ভ্যান-রিকশা, মোটরসাইকেলে করে অনেকেই এসেছেন। বিকেল গড়িয়ে রাত নামার আগ পর্যন্ত চলেছে এই মাটি খোঁড়াখুঁড়ি।
তবে এ নিয়ে প্রশাসন ও পুলিশের কোনো পদক্ষেপ এখনো দেখা যায়নি। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাইরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। একইভাবে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরোয়ার আলম খানের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
স্থানীয় প্রবীণরা বলছেন, এটা আসলে গুজব ছাড়া আর কিছুই নয়। কেউ হয়তো সোনাসদৃশ ধাতব কিছু পেয়েছিলেন, সেটাই এখন বিশাল কাহিনিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু গুজবের প্রভাবে সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের কাজকর্ম ফেলে মাটিখোঁড়ায় নেমে পড়েছেন।
গ্রামের এক স্কুলশিক্ষক আব্দুর রহিম বলেন, ‘মানুষের মধ্যে এখনো কুসংস্কারের প্রভাব রয়েছে। সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই সবাই বিশ্বাস করছে। এতে অযথা সময় নষ্ট হচ্ছে, ক্ষেতের ক্ষতি হচ্ছে।’