প্রতিবাদ, বিক্ষোভ

পীরগঞ্জে নিজ উপজেলায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে বদলি : উপজেলাবাসীর ক্ষোভ

  প্রতিনিধি ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ৫:২৭:২২ প্রিন্ট সংস্করণ

লিমন সরকার, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:  ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে ক্লিনিকি ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ব্যসায়ী হিসেবে পরিচিতি কামাল আহমেদ নামে স্থানীয় এক চিকিৎসককে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে। চিসিকৎসা ব্যবসায়ী এমন একজন চিকিৎসককে স্বাস্থ কর্মকর্তা হিসেবে বদলির আদেশে হতবাক হয়েছেন উপজেলাবাসী। এ নিয়ে উপজেলা আইন শৃংখলা সভায় ব্যাপক আলোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। ডাঃ কামালের ওই বদলির আদেশ বাতিল করার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্ঠি আকর্ষন করেছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তবে ডাঃ কামাল বলছেন, তিনি ক্লিনিক বা ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ব্যবসার সাথে জড়িত নন।

জানা যায়, পীরগঞ্জ পৌর শহরের রঘুনাথপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে ডাঃ কামাল আহমেদ ২০১৪ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত থাকাকালে স্থানীয় ভাবে ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েন। হাসপাতালের ডিউটি বাদ দিয়ে ক্লিনিক ও ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারে সময় দিতে থাকেন তিনি। এ নিয়ে তৎকালীন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল মজিদ প্রতিবাদ করলে তার সাথে বিরোধে জড়ান ডাঃ কামাল আহাম্মেদ। কিন্তু সে সময় কামাল সরকারি দল সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সাথে যুক্ত থাকায় তার বিরুদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থা নিতে পারেননি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মজিদ। স্বাচিপের ছত্র ছায়ায় থেকে তিনি হাসপাতালের দায়িত্ব ফাঁকি দিয়ে দিন রাত ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে সময় দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা কামিয়েছেন। মাঝে মধ্যে হাসপাতালে দু/এক ঘন্টা সময় দিলেও রোগী, রোগীর স্বজন, হাসপাতালের স্টাফ এবং হাসপাতালে আগত স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে খারাপ আচড়ণ করতেন। ক্লিনিক ও ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়া এবং অসদাচরণের অভিযোগে তখন তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগও হয়। অনেকে ফোন করেও তার বিরুদ্ধে সিভিল সার্জনের কাছে অভিযোগ করেন। নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে জেলার বাইরে বদলি করা হয়। জেলার বাইরে চাকরী করার সময়ও তিনি প্রায়ই ফাঁকি দিয়ে পীরগঞ্জ ও এর আশপাশের উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে সময় দিয়েছেন। প্রায় তিন বছর আগে পীরগঞ্জ পৌশরের শহিদ অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা সড়কে তার নিজ বাসায় নিজেই কেয়ার ডিজিটাল ডায়াগনষ্টিক সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন। যদিও এর মালিকানা অন্যজনকে দেখানো হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে সেই ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মালিক তিনিই। এছাড়াও হিমালয়, গ্লোবাল, পপুলার ও একতা ক্লিনিক সহ শহরের প্রায় প্রত্যেকটি ক্লিনিকে তার শেয়ার রয়েছে। সেই ডাক্তার কামাল আহমেদকে গত সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে বদলির আদেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সুত্র জানায়, নিজ উপজেলায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে বদলী হওয়ার সুযোগ না থাকলেও এক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। এ হাসপাতালে কামালের বদলির আদেশের খবর জানা জানি হলে হতবাক হন উপজেলাবাসি। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা আইন শৃংখলা সভায় বিষয় উপস্থাপন করেন উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোকাদ্দেস হায়াত মিলন। তিনি সভায় ডাক্তার কামালের বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ব্যবসা ও অসদাচড়নের বিষয়টি বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেন। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয় এবং বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়।
উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোকাদ্দেস হায়াত মিলন বলেন, ডাক্তার কামাল এর আগে এ হাসপাতালে নামমাত্র চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সরকারী ডিউটি ফাঁকি দিয়ে ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ব্যবসায় সব সময় নিজেকে ব্যস্ত রাখেন তিনি। এতে তার কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন সাধারণ মানুষ।
ওষুধ ব্যবসায়ী আবুল হোসেন জানান, উপজেলার প্রায় সব ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে কামাল ডাক্তারের শেয়ার রয়েছে। তিনি এগুলিতেই সময় দেন বেশী।
পীরগঞ্জ প্রেসক্লাবের ক্রিড়া ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক লিমন সরকার বলেন, ডাক্তার কামালের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে এখানে আসলে চিকিৎসা সেবা আর সেবা থাকবে না, ব্যবসায় পরিণত হবে আশংকা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মালিক জানান, ডাঃ কামালকে শেয়ার না  রাখলে তিনি সেখানে কাজ করেন না। বাধ্য হয়েই তাকে শেয়ারে রাখতে হয়।
এ বিষয়ে ডাঃ কামলা আহমেদ বলেন, তার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ সত্য নয়। তিনি এখন পীরগঞ্জবাসীকে সেবা দিতে চান।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডাঃ আনিসুর রহমান জানান, এটা বিভাগীয় বিষয়। তার করার কিছুই নাই।

Author

আরও খবর

Sponsered content