হাসান মাহমুদ, স্টাফ রিপোর্টার : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে একমাত্র মেয়ে মরিয়মের লাশের ছবি হাতে নিয়ে বিচার চেয়ে এখনও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বাবা নজরুল ইসলাম ও মা শাহীনুর খাতুন। পরিবারের অভিযোগ, যৌতুকের জন্য মরিয়মকে হত্যা করা হয়েছে। অথচ ঘটনার দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত।
২০২৪ সালের ২১ জুন রাতে মরিয়মকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ পরিবারের। পরদিন ২২ জুন সকালে শ্বশুরবাড়ি থেকে মরিয়মের মৃত্যুর খবর আসে। মরিয়মের বাবা-মা সেখানে গিয়ে দেখেন, ঘরের মেঝেতে মেয়ের নিথর দেহ পড়ে আছে এবং শ্বশুরবাড়ির সবাই পালিয়ে গেছে। মরিয়মের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্নও ছিল।
ঘটনার পর উল্লাপাড়া থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে এবং অসহায় বাবা নজরুল ইসলামের টিপসই নিয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করে। পুলিশের গড়িমসির কারণে পরে ২৬ জুন পরিবারটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পিটিশন মামলা দায়ের করে।
প্রথমে উল্লাপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রবিউল তদন্ত করে এটিকে ‘আত্মহত্যা’ বলে প্রতিবেদন দেন। পরিবারের আপত্তির পর তদন্তভার পিবিআইয়ের এসআই মোজাম্মেল হককে দেওয়া হয়, যিনি একই রকম প্রতিবেদন দেন। তবে ময়নাতদন্তে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, মরিয়মকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
আদালত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের সঙ্গে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনের অমিল দেখে আপত্তি জানান এবং তৃতীয়বারের মতো তদন্তভার দেন জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের হাতে। এই বছরের ১৬ জুলাই থেকে তদন্তভার পেয়েছেন এসআই মো. রায়হান আলী। তবে বাদীপক্ষ ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে কথা বলেননি তিনি। ১৫ সেপ্টেম্বর আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি সময় বাড়িয়ে নেন।
এ বিষয়ে এসআই রায়হান আলী বলেন, “আমরা তদন্ত করছি। ময়নাতদন্তে হত্যার বিষয়টি বলা হয়নি। তবে কোর্টের অর্ডার শিটে লেখা হয়েছে হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে।”
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে তাঁকে কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি।
মরিয়মের বাবা নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, “পুলিশ আমার মেয়ের হত্যার ন্যায়বিচার দিচ্ছে না। আসামিপক্ষ থেকে টাকা নিয়ে তাদের হয়ে কাজ করছে।” তিনি আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার চান।
মরিয়মের মা শাহীনুর খাতুন বলেন, “বিয়ের সময় ৪ লাখ টাকা আর ১ ভরি সোনা দিয়েছি। তারপরও জামাই যৌতুকের জন্য মেয়েকে মারধর করতো। অন্য মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কও ছিল। টাকার দাবি পূরণ করতে না পারায় আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। আমি এর বিচার চাই।”
২০২০ সালের জুলাই মাসে মরিয়মের বিয়ে হয় সেনাবাহিনীর সদস্য রিয়াজুল ইসলামের সঙ্গে। তবে সেনা নিয়ম ভেঙে অনুমতি ছাড়া বিয়ে করার পর কাবিননামায় তারিখ দেখানো হয় ২০২৩ সালের ২৫ আগস্ট। অথচ ২০২১ সালের ৩১ মে জন্ম নেয় তাদের কন্যাসন্তান রুবাইয়া। বিয়ের তারিখ গোপন করার এই বিষয়টি সেনা সদস্য রিয়াজুলের বিরুদ্ধে নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগকে আরও জোরালো করেছে।