প্রতিনিধি ১২ অক্টোবর ২০২৫ , ১২:২৮:০২ প্রিন্ট সংস্করণ
কুমিল্লা প্রতিনিধ : কয়েকদিন ধরেই ফেসবুকে নতুন বিভাগ নিয়ে আলোচনা-দাবি তুঙ্গে। কুমিল্লা, যশোর, দিনাজপুর — সকলেই দাবিদার; কারো পোস্টে উন্মাদনা, কারো মন্তব্যে অতিরঞ্জন। কথাগুলো অনেক সময় আবেগঘন, কখনও রাজনৈতিক, কখনও ব্যক্তিগত আঘাতও হয়ে ওঠে। কিন্তু আমাদের একটাই প্রশ্ন থাকা উচিত — নতুন বিভাগ করার মূল উদ্দেশ্য কি? এবং সেই উদ্দেশ্যকে অনুসরণ করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কি সরকার?
নতুন বিভাগ সাধারণত বড় উদ্দেশ্যেই করা হয় — প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ, সেবা পৌঁছানো সহজ করা, স্থানীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা এবং প্রশাসনিক ভারসাম্য রক্ষা করা। যদি শুধু নাম-আদলবদল অথবা রাজনৈতিক সুবিধার কারণে একেকটা এলাকার নাম শোনা-শোনা হয়ে যায়, তাহলে সেই বিভাগ কখনও বাস্তবে মানুষের জীবনে পরিবর্তন এনে দেবে না। বিকেন্দ্রীকরণ মানে ক্ষমতা ও সুযোগ কেন্দ্রী থেকে দূরে সরানো — ঢাকার কাছাকাছি বস্তুত কীভাবে বিকেন্দ্রীকরণ হবে, সেটা বিবেচ্য বিষয়।
বিভাগ ঘোষণার জন্য স্পষ্ট মানদণ্ড থাকা উচিত — জনঘনত্ব, ভৌগোলিক বিস্তার, প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা, যোগাযোগ ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার, অর্থনৈতিক সামর্থ্য এবং স্থানীয় জনসাধারণের বাস্তব দাবি। শুধু শিক্ষা বোর্ড বা সিটি করপোরেশন থাকলেই হবে—এমন সহজ সমীকরণ ঠিক নয়। যদি শিক্ষা বোর্ডকে একমাত্র মানদণ্ড ধরা হয়, তাহলে যশোর বা দিনাজপুরও দাবিদার হবে — এবং তখন এ অনিয়ন্ত্রিত দাবির শেষ থাকবে না। তাই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে এসব মানদণ্ড পরামর্শ-ভিত্তিক ও স্বচ্ছভাবে প্রকাশ করা জরুরি।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় — সামাজিক সহনশীলতা। অনুপ্রবেশমূলক, আক্রমণাত্মক বা হুমকিপূর্ণ ভাষা দিয়ে যে কোনো বিতর্ক বিষাক্ত হয়ে ওঠে। মেজাজে ভর করে কেউ ফেসবুকে লিখলেন, “নোয়াখাইল্লারা যদি উল্টাপাল্টা করে তাহলে কুমিল্লায় বাস থেকে নামিয়ে মারবো” — এমন বক্তব্য কেবল বিবাদ উসকে দেয়, সমাজকে বিভক্ত করে। দেশ সবাইের; ব্যক্তিগত গর্ব বা আঞ্চলিক আবেগ আছে, তা স্বাভাবিক, কিন্তু সেটা অশান্তি কিংবা সহিংসতার আহ্বান হয়ে ওঠা উচিত না।
সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যারা বিভাগ বা প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে — তাদের উচিত স্বচ্ছ প্রক্রিয়া, মানদণ্ড প্রকাশ এবং পর্যাপ্ত স্থানীয় পরামর্শ সংবলিত সিদ্ধান্ত। গণমাধ্যম ও সামাজিক প্ল্যাটফর্মগুলোও মানুষের দাবিকে তুলে ধরতে পারে, কিন্তু দাবির পেছনে যুক্তি থাকতে হবে, আবেগ নয়; এবং বিরোধীদের প্রতি সৎ আচরণ বজায় রাখতে হবে।
শেষে পাঠকের প্রতি আহ্বান — নতুন বিভাগ হওয়া হোক, বা না হোক, আলোচনায় যুক্ত হোন চিন্তা-ভাবনা করে; যে কোনো বক্তব্য থাকলে কেবল রাগে নয়, যুক্তিতে তুলে ধরুন। প্রশাসনিক পরিবর্তন জনগণের স্বার্থে হওয়া জরুরি — তাই দাবীদার হতে হলে দাবি-তথ্য আর যুক্তি দুটোই মেলাতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সদ্ভাব বজায় রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব — দেশের নামে ব্যক্তিগত হিংসা ও অপমানকে কোনোভাবেই সহ্য করা যায় না।
উপর্যুক্ত বাস্তবতাগুলো বিবেচনা করেই আমরা দাবি করি — বিভাগ হোক, কিন্তু মানদণ্ড অনুসারে এবং শান্তিপূর্ণ আলোচনার মধ্য দিয়ে। দেশের প্রতিটি মননশীল নাগরিকের অংশগ্রহণই এ প্রক্রিয়াকে শক্ত করে তুলবে।