প্রতিনিধি ১৮ অক্টোবর ২০২৫ , ১:০৫:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ
গৌরাঙ্গ বিশ্বাস,বিশেষ প্রতিনিধিঃ আধ্যাত্মিক সাধক, মানবতার দার্শনিক ও ফকির দর্শনের প্রবর্তক মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজির ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে সরকারি স্বীকৃতির অংশ হিসেবে সারাদেশের মতো টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে কেন্দ্রীয় সাধুসংঘ আয়োজন করে দিনব্যাপী এক বর্ণাঢ্য ও হৃদয়গ্রাহী অনুষ্ঠান।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) ভোর থেকে শুরু হওয়া এ আয়োজনে সাধুসংঘ প্রাঙ্গণ পরিণত হয় এক আধ্যাত্মিক মহামিলনমেলায়। ভক্ত, বাউল, সাধু ও আখেরি মানবতাবাদী দর্শনের অনুরাগীরা ভরে তোলেন প্রাঙ্গণ। বাতাসে ভেসে আসে একের পর এক লালনগীতি ও দেহতত্ত্বভিত্তিক বাণী, যা ছড়িয়ে দেয় ভালোবাসা, সাম্য ও মানবতার মর্মবাণী।
দিনব্যাপী আয়োজনে ছিল— সাধুদের খাবার ও হাত দোয়া, বৃক্ষরোপণ, আলোচনা সভা, আধ্যাত্মিক বক্তব্য, মধ্যাহ্নভোজ ও লালনসঙ্গীত পরিবেশনা।
অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন কেন্দ্রীয় সাধুসংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের কালিহাতী শাখার সভাপতি, সিনিয়র সাংবাদিক শাহ আলম।
সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি হরিমোহন পাল।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন— বুলবুল প্রকাশনীর মালিক বুলবুল হোসেন, উপজেলা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান লেলিন, প্রবাসী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ইদ্রিস আলী, স্থানীয় বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার সামসুল আলম ফকির, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাংবাদিক গৌরাঙ্গ বিশ্বাস, কালিহাতী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি দুলাল হোসেন রানা, সাংবাদিক আতোয়ার রহমান, সাংবাদিক শুভ্র মজুমদার, এবং এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবক ও অসংখ্য বাউল–ভক্তবৃন্দ।
সাধুদের মধ্য উপস্থিত ছিলেন, সাধু চানঁ মোহন, ,সাধু বনস্পতি মজুমদার,সাধু বিজন ভট্রাচার্য, সাধু দুলাল চন্দ্র সূত্রধর, সাধু আনোয়ার হোসেন চিশতী, সূরুজ আলী পীর, সাধু মতিয়ার রহমান,আব্দুর রহিম আজমেরি, সাইদ ফকির,প্রমুখ।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, আল কামাল রতন মাষ্টার।
বক্তারা বলেন,
লালন সাঁইজি ছিলেন কেবল একজন সাধক নন; তিনি ছিলেন মানবতার স্থপতি। তার বাণী আজও আমাদের সমাজে শান্তি, ভালোবাসা ও সাম্যের অনন্ত আলোকবর্তিকা।
তারা আরও বলেন, কেন্দ্রীয় সাধুসংঘ আজ সেই মানবতাবাদী দর্শন ও আধ্যাত্মিক ঐক্যের ধারক-বাহক হয়ে উঠেছে। এই সংগঠন নিয়মিতভাবে লালন দর্শনের চর্চা, অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ, এবং সমাজে মানবতার শিক্ষা প্রচারে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।
আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত সাধু, বাউল ও লালনভক্তদের মিলনে কেন্দ্রীয় সাধুসংঘ প্রাঙ্গণ পরিণত হয় মানবতার তীর্থস্থানে। সন্ধ্যায় সমাপনী পর্বে লালন সাঁইজির অমর বাণী —
“মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি”
ধ্বনিত হয় প্রাঙ্গণের চারদিকে।
এইভাবেই কেন্দ্রীয় সাধুসংঘের আয়োজনে লালন তিরোধান দিবস উদযাপন হয় গভীর শ্রদ্ধা, ভাবগাম্ভীর্য ও ভক্তির আবেশে, যা প্রমাণ করে— মানবতার আলো আজও জ্বলছে টাঙ্গাইলের কেন্দ্রীয় সাধুসংঘের প্রদীপে।