কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: খালিদ বিন শওকত: কুষ্টিয়ার মিরপুরে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর গ্রুপ) একাংশের জনসভায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনকে অশালীন ভাষায় সম্বোধন করে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন দলটির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন। ওই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাতে ভেড়ামারা শহরে ফরিদা ইয়াসমিনের সমর্থকরা মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা ও ঝাড়ুমিছিল করেন। এ সময় জাতীয় যুব সংহতির পৌর কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে লিংকনের বাসভবনের সামনে নিরাপত্তা জোরদার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেলে মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের আমলা বাজারে স্থানীয় জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর গ্রুপ) নেতাকর্মীরা এ জনসভার আয়োজন করেন। ইউনিয়ন সভাপতি বিল্লাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন।
বক্তব্যের প্রায় ৩২ মিনিট পর লিংকন বিএনপি নেত্রী ফরিদা ইয়াসমিনের নাম উল্লেখ করে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ফরিদা ইয়াসমিন সেলিমা রহমানের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ভোট বিক্রির অভিযোগ করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, “আমি যদি ভোট বিক্রি করে দিই, তাহলে সর্বোচ্চ ভোট পেলাম কীভাবে?” —এর পরই তিনি অশালীন ভাষায় ফরিদা ইয়াসমিনকে সম্বোধন করেন।বক্তব্যটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিএনপি ও স্থানীয় বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। রাতেই ফরিদা ইয়াসমিনের সমর্থকরা ভেড়ামারায় ঝাড়ুমিছিল বের করেন এবং আহসান হাবিব লিংকনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
অন্যদিকে জাতীয় যুব সংহতির পৌর কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ এনে সংগঠনটির পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমন বিশ্বাস বলেন, “ফরিদা ইয়াসমিনের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের অফিসে হামলা চালিয়েছে। প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, আমরা লিখিত অভিযোগ দেব।”
এ বিষয়ে বিএনপি নেত্রী ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, “একজন দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তার এ বক্তব্য সম্পূর্ণ শিষ্টাচারবহির্ভূত ও মানহানিকর। আমি বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়েছি এবং মানহানির মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।”কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্যসচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার বলেন, “আহসান হাবিব লিংকন বিএনপির কেউ নন। তিনি আমাদের নেতানেত্রীদের নিয়ে এমন বক্তব্য দিতে পারেন না। দল থেকে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।”
এদিকে বুধবার সকাল ১০টায় ভেড়ামারা দক্ষিণ রেলগেট এলাকায় উপজেলা জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আহসান হাবিব লিংকন তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “ফরিদা আমার ছোট বোনের মতো। It was my slip of tongue. আমি অনিচ্ছাকৃতভাবে কষ্ট দিয়েছি, এজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রব তালুকদার জানান, বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
উল্লেখ্য, আহসান হাবিব লিংকন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কুষ্টিয়া জেলা সভাপতি ছিলেন। ১৯৮৮ সালে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে কাজী জাফর আহমেদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০-দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর) আসনে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এবারও তিনি জোটের মনোনয়নপ্রত্যাশী। অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ফরিদা ইয়াসমিন একই আসনের প্রার্থী হিসেবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।