প্রতিনিধি ২৩ নভেম্বর ২০২৫ , ১:৪৮:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ
মোঃ হাবিবুল্লাহ,ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধিঃ বরিশাল নগরীর বেলতলা এলাকায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে এসেছে। একটি চারতলা ভবনের ওপর হেলে পড়েছে পাশাপাশি থাকা আরেকটি ভবন। স্থানীয়দের দাবি—তিন দিন আগে হওয়া ভূমিকম্পের কারণেই ভবনটি হেলে পড়ে। রোববার (২৩ নভেম্বর) সকালে ঘটনাটি নজরে আসার পর থেকেই এলাকায় তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে ভবন হেলে পড়ার ঘটনায় দুই ভবনের মালিকই একে অপরকে দায়ী করছেন।

ঘটনাস্থল বেলতলা মাহামুদিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন। প্রায় ১৪ বছর আগে সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিয়ে সাড়ে চারতলা ভবন নির্মাণ করেন আব্দুল মোতালেব হাওলাদার। একই স্থানে এক বছর আগে পরিকল্পনা অনুযায়ী চারতলা ভবন তৈরি করেন আরেক বাসিন্দা জাহির হাওলাদার। দুটি ভবনেই মালিকসহ ভাড়াটিয়ারা বসবাস করছেন।
রোববার সকালে প্রথম ভবনটির হেলে পড়া লক্ষ্য করেন স্থানীয় বাসিন্দা মো. দুলাল। তিনি জানান, “বাড়ি থেকে বের হয়েই দেখি একটি ভবন আরেকটির ওপরে হেলে রয়েছে। এরপর এলাকাবাসী ভিড় জমায়।”
প্রতিবেশী হারিছুর রহমান স্বপন ও সাইফুল ইসলাম জানান, এসব ভবনের জায়গাটি একসময় ডোবা ছিল, যেখানে মানুষ আবর্জনা ফেলত। তাদের দাবি—ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড মানতে ব্যর্থ হওয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুই ভবনের মাঝে আড়াই ফুট জায়গা রাখার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হয়নি। ফলে দেয়ালের ওপর দেয়াল ঘেঁষে গিয়েই ভবন হেলে পড়েছে বলে মনে করেন তারা।
নতুন চারতলা ভবনের মালিকের ছেলে মো. ফাকের হাওলাদার বলেন, “আমাদের ভবন মাত্র এক বছর আগে অনুমোদিত প্ল্যান অনুযায়ী নির্মাণ হয়েছে। পুরোনো ভবনটিই আমাদের ভবনের ওপর হেলে পড়েছে। দ্রুত অপসারণ না হলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
অন্যদিকে পুরোনো ভবনের মালিক আব্দুল মোতালেব হাওলাদার দাবি করেন, “আমাদের ভবনের ওপর নতুন ভবনটি হেলে পড়েছে। হয়তো ২২ নভেম্বরের ভূমিকম্পে এমনটি হয়েছে। বিষয়টি সিটি করপোরেশনকে জানিয়েছি।”
তবে নির্মাণে অনিয়ম—বিশেষত সাড়ে চারতলা ভবন নির্মাণের প্ল্যান বহির্ভূত কর্মকাণ্ড—সম্পর্কে সঠিকভাবে উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের স্থপতি সাইদুর রহমান লুসান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তদন্ত ছাড়া কোন ভবনটির ত্রুটি সেটি বলা যাচ্ছে না। শহরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হচ্ছে, এর আগে তিনটি ভেঙেও ফেলা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “মানুষ সচেতন না হলে ভূমিকম্পের ঝুঁকি কখনোই পুরোপুরি এড়ানো যাবে না। নির্মাণকাজে বিল্ডিং কোড না মানাই অধিকাংশ দুর্ঘটনার মূল কারণ।”
স্থানীয়রা বলছেন, দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিলে দুটি ভবনই বড় দুর্ঘটনার মুখে পড়তে পারে। ভাড়াটিয়ারা ইতোমধ্যে আতঙ্কে অন্যত্র সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ ও যথাযথ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তারা।

















