সারাদেশ

বাংলাদেশে আবারও ভূমিকম্প হতে পারে কেন? এক বৈজ্ঞানিক অথচ রহস্যময় বিশ্লেষণ

  প্রতিনিধি ২৩ নভেম্বর ২০২৫ , ১:৫৫:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশ শান্তির দেশ। কিন্তু এর নিচে রয়েছে এক অস্থির পৃথিবী—মাটি নরম, নদী বহমান, আর তারও নিচে লুকিয়ে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী টেকটনিক শক্তি।

কখনো কখনো মনে হয়, পৃথিবী যেন গভীর নিঃশ্বাস নেয়…
আর সেই নিঃশ্বাসের কম্পনই রূপ নেয় ভূমিকম্পে।

আজ জানবো-বাংলাদেশে কেন আবারো ভূমিকম্প হতে পারে?এবং এর পিছনে কী কী কঠিন বৈজ্ঞানিক যুক্তি লুকিয়ে আছে।

⚡ ১. বাংলাদেশের নিচে লুকিয়ে আছে তিনটি শক্তিশালী টেকটনিক প্লেট। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক অঞ্চলগুলোর একটি।

এখানে তিনটি প্লেট পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা খায়-

ইন্ডিয়ান প্লেট

ইউরেশিয়ান প্লেট

বার্মা মাইক্রো প্লেট

যখন বিশাল এই প্লেটগুলো একে অপরকে ঠেলে ধরে,
মাটির নিচে জমতে থাকে হাজার হাজার বছরের চাপ।

এই চাপ একসময় ভেঙে মুক্ত হয়,
এটাই ভূমিকম্প।

এটা এমন এক শক্তি যা থামানো অসম্ভব।
শুধু বোঝা যায়…
কখন?
কোথায়?
কত বড়?

⚡ ২. “মেগা-থ্রাস্ট ফল্ট” বাংলাদেশের পূর্বদিকের নীরব দানব

বাংলাদেশের পূর্ব দিকে আছে পৃথিবীর অন্যতম বিপজ্জনক ফল্টলাইন-
মেগা-থ্রাস্ট ফল্ট জোন।

এটি এতটাই শক্তিশালী যে মাত্র ২০–৩০ সেকেন্ডেই
পুরো একটি শহর বদলে দিতে পারে।

এই ফল্ট বহু বছর ধরে নীরব।
এই নীরবতাই ভয়ঙ্কর।

কারণ ভূ-পদার্থবিদদের ভাষায়:
“Long silence = stored energy.”

অর্থাৎ দীর্ঘ নীরবতা মানে জমে থাকা বিপুল শক্তি-
যা একসময় না একসময় বের হবেই।

⚡ ৩. ৮.০+ মাত্রার ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বিজ্ঞানীরা আগেই সতর্ক করেছেন

আন্তর্জাতিক জিওফিজিক্স গবেষণা অনুযায়ী;
বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায়
একটি ৮.২ থেকে ৯.০ মাত্রার ভূমিকম্প ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।

এটি কেবল ধারণা নয়-
শক্ত প্রমাণ আছে:

মাটির নিচে প্লেটের স্লিপ রেট বেড়েছে

মাটি উঁচু-নিচু হওয়ার অস্বাভাবিক পরিবর্তন

ভূকম্পন তরঙ্গের অস্বাভাবিক নীরবতা

পূর্বে হওয়া ছোট ছোট কম্পনের প্যাটার্ন

এই সংকেতগুলো বিজ্ঞানীদের চোখ এড়ায়নি।

⚡ ৪. বাংলাদেশের মাটি নরম, তাই কম্পন গুণিতক হয়ে ওঠে

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ,
বেশিরভাগ জায়গা নরম পলিমাটিতে তৈরি।

এই নরম মাটি ভূমিকম্পের কম্পনকে ৩-৪ গুণ বেশি বাড়িয়ে দেয়।

যেখানে ভারতের পাহাড়ি এলাকায় ৫ মাত্রার কম্পন হয়,
বাংলাদেশে তা অনুভূত হয় ৬ বা ৬.৫ হিসেবে।

এটাই বাংলাদেশকে আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে।

⚡ ৫. ঢাকা পৃথিবীর সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ২০ শহরের একটি

ঢাকা বসে আছে পুরোনো একটি ফল্টলাইনের ওপরে।
তার সাথে রয়েছে-

অতিরিক্ত জনসংখ্যা

পুরোনো ভবন

সংকীর্ণ রাস্তা

পুনর্বাসন ব্যবস্থা দুর্বল

বিজ্ঞানীরা এটিকে বলেন-
“A seismic time-bomb.”
একটি কম্পনই পুরো সিস্টেম নাড়িয়ে দিতে পারে।

⚡ ৬. ছোট ছোট ভূমিকম্প বৃদ্ধি বড় কিছুর আগাম বার্তা

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ৪-৫ মাত্রার ছোট কম্পন অনেক বেড়েছে।
এগুলো সাধারণ মানুষের কাছে তুচ্ছ মনে হলেও, বিজ্ঞানীরা জানেন-

ছোট কম্পন = ফাটল সক্রিয় = বড় ঝাঁকুনির পূর্বাভাস

পৃথিবী ঠিক আগুনের নিচে ফুটন্ত হাড়ির মতো-
উঠছে, নামছে, চাপ জমছে…

একসময় সেই চাপ ভাঙবেই।

🌏 তাহলে কি বাংলাদেশে আবারো ভূমিকম্প হবে?

হ্যাঁ-
ভূগোল, ভূকম্পবিদ্যা, প্লেট-টেকটনিক সব মিলিয়ে এটা প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

বাংলাদেশ আবার ভূমিকম্প অনুভব করবে।
সময় শুধু অজানা।

কিন্তু প্রস্তুত থাকা জ্ঞানীর কাজ।
পৃথিবী থামবে না, প্লেট থামবে না,
কিন্তু আমরা সতর্ক হলে ক্ষতি কমাতে পারব।

⭐শেষ কথা

প্রাকৃতিক দুর্যোগকে ভয় নয়,
বোঝা উচিত।
জ্ঞানই মানুষের আসল শক্তি।
আমরা যত সচেতন হব,
ভবিষ্যৎ তত নিরাপদ হবে।

⭐ লেখাটি বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ এবং নিজের গবেষণা থেকে কিছুটা লেখা।
✍️ লেখক: সবুজ কুমার

Author

আরও খবর

Sponsered content