সারাদেশ

রাষ্ট্রীয় শোকের দিনেও উড়েনি জাতীয় পতাকা অন্নদা সুন্দরী সরকারি বিদ্যালয়ে ,প্রশ্নের মুখে কর্তৃপক্ষ

  প্রতিনিধি ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ , ২:৩১:০৯ প্রিন্ট সংস্করণ

পাভেল ইসলাম মিমুলঃ রাষ্ট্রীয় শোকের দিনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হয়নি রাজশাহীর সপুরা অন্নদা সুন্দরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব শরীফ ওসমান হাদীর মৃত্যুতে শনিবার রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষিত শোক দিবসে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সকল সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশনা থাকলেও সকাল গড়িয়ে গেলেও ওই বিদ্যালয়ে কোনো পতাকা উত্তোলন করা হয়নি।

সকাল ৮টা ২০ মিনিট পর্যন্ত বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ডটি সম্পূর্ণ শূন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও পতাকা উত্তোলনের কোনো উদ্যোগ না থাকায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যুতে যখন সারা দেশ শোক পালন করছে, তখন একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল গড়িয়ে গেলেও জাতীয় পতাকা না ওড়ানো চরম অবহেলা ও দায়িত্ব হীনতার পরিচয়। তাদের মতে,এটি রাষ্ট্রীয় নির্দেশনার সরাসরি লঙ্ঘন এবং জাতীয় প্রতীক ও শোক দিবসের প্রতি অসম্মান প্রদর্শনের শামিল। বিশেষ করে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে জাতীয় চেতনা ও দায়িত্ববোধ গঠনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক বার্তা দেয়।

অভিযোগ রয়েছে, সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পাওয়ার পর পরিস্থিতি সামাল দিতে তড়িঘড়ি করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উম্মে সালহা খাতুন তার স্বামী শহিদুলকে বিদ্যালয়ে পাঠান এবং এরপর জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ,গণমাধ্যমের উপস্থিতি না থাকলে সেদিনও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হতো কি না,তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ফলে পুরো ঘটনাটি দায়িত্বজ্ঞানহীন উদাসীনতা নাকি পরিকল্পিত অবহেলা—সে প্রশ্ন উঠেছে।

এছাড়াও বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক ব্যবস্থাপনা নিয়েও গুরুতর অভিযোগ সামনে এসেছে। জানা গেছে, বিদ্যালয়ের নিয়মিত দপ্তরি বাসুদেব চন্দ্র মজুমদার অনুপস্থিত থাকায় তার পরিবর্তে বিদ্যালয়ের পাশের একটি মুদি দোকানের ব্যবসায়ী মহাদেব চন্দ্র মজুমদার,যিনি দপ্তরির ভাই,দপ্তরির দায়িত্ব পালন করেন। একজন বহিরাগত দোকানদার দিয়ে সরকারি বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজ করানো কতটা বিধিসম্মত—তা নিয়েও সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোয়ালিয়া থানা শিক্ষা অফিসার মো. রবিউল ইসলাম বলেন, শরীফ ওসমান হাদীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষিত শোক দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পালন করার কথা। কোনো বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক যদি এ ধরনের অবহেলা করেন, তাহলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সব অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উম্মে সালহা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, “আজ সকালে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল হয়েছে। দপ্তরি উপস্থিত না থাকায় নির্ধারিত সময়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা সম্ভব হয়নি। পরে বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই পতাকা উত্তোলনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।”

তবে স্থানীয়দের মতে, একজন সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে শোক দিবস, জাতীয় দিবস ও রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা সম্পর্কে অবগত থাকা এবং তা যথাসময়ে বাস্তবায়ন করা তার মৌলিক প্রশাসনিক দায়িত্ব। দপ্তরি অনুপস্থিত থাকলেও বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব প্রধান শিক্ষকের ওপরই বর্তায়। রাষ্ট্রীয় শোক দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনে এমন অবহেলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছেন তারা।

উল্লেখ্য, শরীফ ওসমান হাদীর মৃত্যুতে আজ সারা দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক দিবস পালন করা হচ্ছে। শোক পালনের অংশ হিসেবে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি দপ্তরে জাতীয় পতাকা বিধিমালা কঠোরভাবে অনুসরণ করার নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটায় সপুরা অন্নদা সুন্দরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভূমিকা নিয়ে স্থানীয়ভাবে সমালোচনা এবং তদন্তের দাবি উঠেছে।

এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আরও অজানা ও বিস্তর তথ্য সামনে আসছে আগামী পর্বে। বিস্তারিত জানতে সঙ্গেই থাকুন।

Author

আরও খবর

Sponsered content