দুর্নীতি

মিথ্যা মামলায় রাজশাহীতে সাংবাদিক সমাজ ফুঁসে উঠেছে — ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

  প্রতিনিধি ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ৩:৩২:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ

মোঃ সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহী: রাজশাহীতে ছয় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে প্রতারককে দিয়ে শাহমখদুম থানায় দায়ের করা মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন রাজশাহীতে কর্মরত সাংবাদিকসহ সারাদেশের সাংবাদিক সমাজ। এ ঘটনায় ওসির প্রত্যক্ষ মদদে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও তাকে অপসারণের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের ব্যানারে রাজশাহীতে কর্মরত সকল সাংবাদিক।

মানববন্ধনে রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাব ছাড়াও রাজশাহী বিভাগীয় প্রেসক্লাব, রাজশাহী প্রেসক্লাব, রাজশাহী অনলাইন সাংবাদিক ফোরাম, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন রাজশাহী শাখা, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা রাজশাহী শাখাসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা অংশ নেন।

বক্তারা স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন— আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও শাহমখদুম থানার ওসি মাছুমা মুস্তারীকে অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় শুধু রাজশাহী নয়, গোটা বিভাগজুড়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। প্রয়োজনে আরএমপি সদর দপ্তরের সামনেই অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

ঘটনা প্রবাহ
২৬ আগস্ট নগরীর অগ্রণী ব্যাংক আরডিএ শাখায় জমি নিলাম সংক্রান্ত সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে কথিত পত্রিকার মালিক পরিচয়দানকারী প্রতারক আক্তারুল ইসলামের সঙ্গে সাংবাদিকদের বাকবিতণ্ডা হয়। এসময় তিনি এক সাংবাদিকের মোবাইল ভেঙে দেন ও অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন। ঘটনাটি ভিডিওতে ধারণ হয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

সাংবাদিকরা প্রতারক আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলে ওসি মামলা না নিয়ে কেবল লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করেন। পরে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশে ক্ষিপ্ত হয়ে ছয় দিন পর প্রতারককে থানায় ডেকে এনে নিজেই এজাহার লিখিয়ে স্বাক্ষর করান। এরপর সেটি চাঁদাবাজির মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয় (মামলা নং-২/২০২৫)।

কিন্তু আক্তার মুঠেফোনে বলেন, তিনি মামলা সম্পর্কে কিছুই জানে না, প্রশাসনের চাপে তিনি অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষর করেছেন। এছাড়া তিনি প্রচন্ড মানষিক চাপে আছেন ( অডিও কল সংরক্ষিত)।
প্রতারক আক্তারের স্বাক্ষরিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে,সাংবাদিকরা তার কাছে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। তবে ঘটনার ভিডিওচিত্র এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন প্রমাণ করছে। এমনকি প্রতারক আক্তার নিজেই স্বীকার করেন তিনি মামলা সম্পর্কে জানে না, প্রশাসনের চাপে তিনি মামলা দিয়েছেন। সাংবাদিকদের দাবি, এটি পুরোপুরি ওসির প্রতিশোধমূলক মামলা, যা পুলিশের পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকারই প্রমাণ।

সাংবাদিকের মামলা না নিয়ে আ’লীগের দোসর প্রতারক আক্তারুল ইসলামকে থানায় ওসি মামলা নেয়। মূলত ফ্যাসিস্ট ওসি একজন ফ্যাসিস্টকে বাঁচাতে ও নিজের নানা অপকর্ম ঢাকতে এ মিথ্যা মামলাটি নেয়। মামলার একজন আসামী ওইদিন ঢাকায় ছিলো সেও নিউজ করার অপরাধে মামলার আসামী হয়।

কে এই আক্তার?

আওয়ামী লীগ আমলে প্রভাব খাটিয়ে এলজিইডি, বিএমডিএ ও গণপূর্ত ভবনে কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেন আক্তারুল ইসলাম। স্থানীয় ঠিকাদারদের অভিযোগ— তিনি এমপি মির্জা আজম ও নুরু ইসলাম ঠান্ডুকে আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে কমিশন আদায় করতেন। নামমাত্র কাজ করে কোটি টাকার বিল উত্তোলনের নজিরও রয়েছে।

৫ আগস্টের ঘটনার পর আচমকা ভোল পাল্টে জামাত-বিএনপি পরিচয়ে প্রতারণা চালাচ্ছেন আক্তার। তার বিরুদ্ধেও বহু প্রতারণার অভিযোগ স্থানীয়ভাবে প্রচলিত।

ওসি মাছুমা মুস্তারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ

দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালন করছেন ওসি মাছুমা মুস্তারী। তার বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে— টাকার বিনিময়ে মামলা রেকর্ড বা বাতিল (মামলা বাণিজ্য), স্থানীয় প্রভাবশালী চক্রের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায়, প্রতারণা চক্রকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া সহ বর্তমানে সাংবাদিকদের দমনে প্রতিশোধমূলক মামলা দায়ের ।

এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী সরকারের আমলে বিএনপি-জামাত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন তিনি। আবার সরকারের পতনের পর যেসব আওয়ামী নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়নি কিন্তু ছবি-ভিডিও প্রমাণ ছিল, তাদের মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের মাসোহারা আদায় করেছেন।

বর্তমানে তিনি বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের খুশি করতে ব্যস্ত বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে শাহমখদুম থানার এলাকায় বেড়েছে ছিনতাই, রমরমা মাদক ব্যবসা ও জুয়ার বোর্ড—কিন্তু পুলিশের কোনো অভিযান নেই।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিনি বর্তমানে নগরীর কাজলা মৌজায় সাততলা ভবন নির্মাণ করছেন। সীমিত বেতনের একজন সরকারি কর্মকর্তার কোটি টাকার এই সম্পদের উৎস নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ।

সাংবাদিক সমাজের হুঁশিয়ারি
মানববন্ধনে সাংবাদিক নেতারা বলেন—
“গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংবিধান প্রদত্ত অধিকার। অথচ সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার পরিবর্তে পুলিশ প্রতারকের দালালি করছে।”
“এ মামলা সাংবাদিকদের কলম ভাঙার হীন ষড়যন্ত্র। কিন্তু কলমকে ভয় দেখানো যায় না।”
“ওসি মাছুমা মুস্তারীকে অবিলম্বে অপসারণ করে জবাবদিহির মুখোমুখি করতে হবে।”
“২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে শুধু রাজশাহী নয়, পুরো বিভাগে সাংবাদিক সমাজ রাজপথে নামবে। প্রয়োজনে আরএমপি সদর দপ্তরের সামনেই অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে।”

Author

আরও খবর

Sponsered content