অনুসন্ধান

আমতলীতে বিভিন্ন এতিমখানায় গিয়ে চার সাংবাদিকের চাঁদাবাজি, প্রতিকার চেয়ে ইউএনওর বরাবরে ভূক্তভোগীদের অভিযোগ

  প্রতিনিধি ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ৬:২৯:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ

মাইনুল ইসলাম রাজু, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি :   বরগুনার আমতলীতে বিভিন্ন পত্রিকা ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনের সাংবাদিক পরিচয়ে বিভিন্ন এতিমখানা ও শিশু সদনে গিয়ে অনৈতিকভাবে টাকা দাবী এবং তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে ভিডিও প্রকাশ করে ব্ল্যাকমেইল অভিযোগ উঠেছে বরগুনার চার সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে।

 

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে আমতলী উপজেলা বে-সরকারী এতিমখানা কল্যাণ সমিতির ব্যানারে ১৩টি এতিমখানা ও শিশু সদনের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকরা।

 

অভিযুক্ত চার সাংবাদিকরা হলেন জয়নাল আবেদীন রাজু (চ্যানেল এ-অন ও দৈনিক মাতৃজগত), ইরতিজা হাসান মনির (এশিয়ান টিভি), রাসেল শিকদার (বৈশাখী টিভি) ও মেজবাহ উদ্দিন (বাংলা টিভি)। ভুক্তভোগীদের দেয়া অভিযোগের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়।

 

উপজেলার ১৩টি এতিমখানা ও শিশু সদনের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকদের দায়ের করা লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, উপরোক্ত ওই চার সংবাদকর্মী বরগুনা জেলা শহর থেকে আমতলীতে এসে প্রতিনিয়ত উপজেলা ও জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে নিবন্ধনকৃত বিভিন্ন এতিমখানা ও শিশু সদনে পরিদর্শন এবং তথ্য সংগ্রহের নামে মোটা অংকের টাকা দাবী করে আসছে। কর্তৃপক্ষ তাদের চাহিদা মাফিক টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাদের বিভিন্ন রকম ভয়-ভীতি ও নিউজ প্রকাশের হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর যে সকল প্রতিষ্ঠান টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে তাদেরকে উল্টা-পাল্টা প্রশ্ন করে তাদের ভিডিও বক্তব্য ধারন করেন। তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে সেই বক্তব্য কাট-সাট করে মিথ্যা ভিডিও বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক ও বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশ করে তাদের প্রতিষ্ঠানের মানহানি করছেন। তাদের স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন, ওই চার সংবাদকর্মীদের অত্যাচার এতটাই বেড়ে গেছে মনেহয় তারা এতিমখানা ও শিশুসদনগুলো বন্ধ করে দেওয়ার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে। তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়কে তদন্তের মাধ্যমে ওই চার সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান।

 

কাসেমুল উলুম কারীমিয়া বালিকা শিশু সদনের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মীর মোঃ সুলাইমান বলেন, ওই চার সংবাদকর্মীদের অপকর্মের সকল প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে। তারা তাকেসহ বিভিন্ন এতিমখানা ও শিশু সদনে গিয়ে কর্তৃপক্ষকে ভয়-ভীতি দেখান এবং মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন। তাদের দাবীকৃত টাকা না দিলে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যায়। এরমধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে দুপুরের ভাত খাবার ও মোটর সাইকেলের তৈল কেনার জন্য টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আমার কাছেও টাকা দাবী করছেন। আমি দেইনি।

 

আমতলী কেন্দ্রীয় শিশু সদনের পরিচালক মাওলানা মকসুদুল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, আমতলী উপজেলার বিভিন্ন এতিমখানা ও শিশু সদনে গিয়ে পরিদর্শনের নামে চাঁদা চেয়ে হুমকি ধামকি দিলে আমরা এর প্রতিকার চেয়ে উপজেলার ১৩টি এতিমখানা ও শিশুসদনের সভাপতি সম্পাদকরা স্বাক্ষর করে নির্বাহী অফিসারের বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছি। বিষয়টি টের পেয়ে ওই চিহ্নিত ধান্দাবাজ চার সংবাদকর্মী তাদের চাঁদাবাজির বিষয়টি ঢাকতে আমতলী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কয়েকটি নিউজ পোর্টালে “এতিমের টাকা তুলতে ১২% ও নতুন নাম দিতে দিতে ৭৫% সমাজসেবা অফিসে ঘুষ দিতে হয়” শিরোনামে একটি নিউজ প্রকাশ করছে। যাহা সমাপূর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট। আমরা এহেন চাঁদাবাজ ও হলুদ সাংবাদিকতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

 

বরগুনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক সমকাল জেলা প্রতিনিধি আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ বলেন, সাংবাদিকতার নামে দলবেঁধে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় গিয়ে পরিদর্শনের নামে কর্তৃপক্ষের ভিডিও ধারন করে ব্ল্যাকমেইল ও চাঁদাবাজির ঘটনা প্রকৃত সাংবাদিকদের মান ক্ষুন্ন করে। এদের বিরুদ্ধে মুলধারার সকল সাংবাদিকদের সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আমি ভুক্তভোগীদেরকে অনুরোধ করব জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিতে।

 

আমতলী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হক কাওসার বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে সমাজসেবা কার্যালয় থেকে নিবন্ধিত এতিমখানা ও শিশু সদনে বরগুনার কতিপয় সংবাদকর্মী সাংবাদিক পরিচয়ে অনৈতিকভাবে টাকা দাবী এবং তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও প্রকাশ করে ব্ল্যাকমেইল করছেন। এমন অভিযোগ করে আমাকে অবগত করেন বিভিন্ন এতিমখানা ও শিশু সদনের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকরা।

 

তিনি আরো বলেন, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে অভিযুক্ত ওই চার সংবাদকর্মী আমার কার্যালয়ে এসে আমার বক্তব্য নেওয়ার অজুহাতে আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমন করে নানা প্রশ্ন করতে থাকেন। আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলেছি এতিমখানায় অনিয়ম বা অসংঙ্গতি থাকলে আপনারা নিউজ করেন। সেটা না করে কেন আপনারা অনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকা দাবী করছেন?। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের মধ্যে উঠে এক সংবাদকর্মী আমার দিকে তেরে আসেন। যার ভিডিও ফুটেজ আমার কাছে সংরক্ষিত আছে। এরপর আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে তারা চলে যায়। আজকে দেখলাম কয়েকটি অখ্যাত অনলাইন পোর্টালে আমাকে জড়িয়ে সম্পূর্ন মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত একটি নিউজ প্রকাশ করেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি ও প্রকৃত সাংবাদিকদের কাছে এই অপসাংবাদিকতা প্রতিহত করার অনুরোধ করছি।

 

অভিযুক্ত চার সংবাদকর্মীদের মধ্যে এশিয়ান টিভির জেলা প্রতিনিধি ইরতিজা হাসান মনির মুঠোফোনে বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন এতিমখানা ও শিশু সদনে গিয়ে পরিদর্শন ও অনিয়নের ভয় দেখিয়ে কর্তৃপক্ষের ভিডিও বক্তব্য ধারন করে ব্ল্যাকমেল ও চাঁদাবাজির অভিযোগটি সঠিক নয়। ওই সকল এতিমখানায় ব্যাপক অনিয়ম আছে। নিউজ করেন না কেন? জানতে চাইলে উত্তর না দিয়ে মোবাইলের সংযোগটি কেটে দেন।

 

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রোকনুজ্জামান খান বলেন, এতিমখানা ও শিশু সদনে চার সাংবাদিকের নামে চাঁদাবাজির বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছ

Author

আরও খবর

Sponsered content