দুর্নীতি

এতিমদের টাকা আত্মসাৎ ও জাতীয় পতাকাকে অসম্মান করার অভিযোগ শিক্ষকের বিরুদ্ধে

  প্রতিনিধি ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ৫:৩৮:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ

তারেক রহমান ফয়সাল, বিশেষ প্রতিনিধি: বছরের পর বছর ধরে এতিমদের নামে সরকারী অনুদান আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে নেত্রকোনা জেলা কেন্দুয়া উপজেলার সরাপাড়া হাফিজিয়া এতিমখানাও মাদরাসার মুহতামিম হাফেজ রফিকুল ইসলাম বিরুদ্ধে। অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য সরেজমিনে মাদরাসায় গিয়ে অভিযুক্ত মুহতামিম রফিকুল ইসলাম সাথে কথা বলতে স্থানীয় আমরা সাংবাদিক দের নিয়ে অত্র মাদ্রাসায় হাজির হই।

এ সময় অত্র মাদ্রাসায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি মাদ্রাসা সহকারী শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম তিনি মেয়ে অসুস্থতার জন্য ময়মনসিংহ ছুটিতে আছেন । অথচ উনার কোন ছুটির দরখাস্ত আমরা পাইনি।একই সঙ্গে কমিটির সভাপতি কে ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে তিনি জানান। আমি একটু দূরে আছি আসতে একটু সময় লাগবে অপেক্ষা করুন আমি আসছি। মাদরাসায় সাংবাদিক ঢুকলে প্রথমেই আমাদের চোখে ধরা পড়ে অত্র মাদ্রাসায় কোন জাতীয় পতাকার প্রতিস্থাপন নেই। মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষককে প্রশ্ন করলে জানা যায় সে আমরা আসার কিছুক্ষণ আগে পতাকা নামিয়েছে, আমরা বুঝতে পারলাম পতাকার প্রতিস্থাপন নেই, এ কথা কাটাকাটির পর আরেকজন সহকারি শিক্ষক উনি বলেন ১ থেকে ২ মাস ধরে পতাকা টানো হয় না। মাদ্রাসার এতিম ছাত্রদের কথা জিজ্ঞেস করলে বলে ছুটিতে গিয়েছে আর কিছু আছে।
অতঃপর মাদ্রাসার অবকাঠামোর জন্য জিজ্ঞেস করলে জানায় যে এগুলোর জন্য কোন বরাদ্দ দেয়া হয়নি ।

ছুটিতে যাওয়া এতিমদের জন্য আমরা অপেক্ষা করি দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর অত্র মাদ্রাসা সভাপতি এসে হাজির হন। আমাদের প্রশ্নে মাদ্রাসা সভাপতি বলেন যে আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা দেশের একটি লাল সবুজ পতাকার জন্য আমি রক্ত দিয়েছি যুদ্ধ করেছি সে পতাকাকেই তারা অব মাননা করছে এ বিষয়ে তিনি তাৎক্ষণিক অত্র মাদ্রাসা শিক্ষকদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে যান। মাদ্রাসার এতিমদের অনুদানের টাকা জিজ্ঞেস করলে বলেন যে আমি এসবের কিছুই জানি না অত্র মাদ্রাসার মোহতামিম এ বিষয়ে জানেন উনি টাকা উত্তোলন করেন। এর কিছুক্ষণ পর আমরা জিজ্ঞেস করি এতিম ছাত্র সবাই আসছে কিনা প্রতি উত্তরে তারা ১৪ জন ছাত্র হাজির করে এরমধ্যে আমরা সাতজন এতিম খুঁজে পাই বাকিরা দোস্ত পরিচয় দেয় ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে একই প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বে থাকার সুবাদে মাদরাসা পরিচালনা কমিটিকে ম্যানেজ করে বিভিন্ন সময় এতিম শিক্ষার্থীদের জন্য আসা সরকারি বরাদ্দ আত্মসাৎ এবং নানা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত অভিযুক্ত পরিচালক রফিকুল ইসলাম।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কেন্দুয়া উপজেলার ৮ নং বলাই শিমুল ইউনিয়নে অবস্থিত সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সমাজসেবা অধিদপ্তরে ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট প্রাপ্ত সরাপাড়া হাফেজিয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসা মাদরাসার দীর্ঘদিন ধরে মুহতামিমের দায়িত্বে রয়েছেন হাফেজ রফিকুল ইসলাম

জানতে চাইলে স্থানীয় গ্রামের অত্র মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলেন, তিনি প্রায় অনেক বছর ধরে এই মাদরাসায় পড়াশোনা করছেন। তার নামে মাদরাসায় একাধিক টাকা বরাদ্দ আসলেও কখনও এক টাকাও তিনি পাননি। অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, তার বাবা নেই, অনেক কষ্টে সংসার চলে তাদের। টাকার অভাবে লেখা-পড়া করতে পারছেন না তিনি। অথচ তার নামে সরকারি বরাদ্দের যে টাকা আসছিল তা হাফেজ রফিকুল ইসলাম আত্মসাৎ করে খেয়ে ফেলেছেন, এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

এতিম শিশুদের জন্য সরকারের যে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়, তা তারা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

অভিযোগ ওঠে, হাফেজ রফিকুল ইসলাম সমাজসেবা অফিস থেকে প্রত্যায়ন পত্র নিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

স্থানীয় সরকারের প্রত্যয়ন নিয়ে তার কাছ থেকে মাদরাসার শিক্ষার্থীদের নামে প্রত্যায়ন পত্র স্বাক্ষর নিয়ে এসব দুর্নীতি করে যাচ্ছে।

এতিম শিশুদের নামে বরাদ্দ হওয়া হাজার হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে শিক্ষক রফিকুল ইসলাম আমাদেরকে সাক্ষাৎকারে প্রতিউত্তর ভুল ও ভিত্তিহীন বলে জানিয়ে দেয় তার সবকিছুই ঠিক ঠিক আছে আপনারা যা করার তা করেন তাতে আমার কোন সমস্যা নাই এবং নানা অযুহাত দেখিয়ে পাশ কাটিয়ে যান।

বিভিন্ন মাদরাসায় সমাজসেবা অফিস থেকে মাসে জন প্রতি ২ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা ১৮ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত চলে। তবে সরাপাড়া হাফিজিয়া এতিমখানা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে কেন্দুয়া উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ইউনুস আহমেদ জানান, ‘লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৭৩ অনুযায়ী নিবন্ধিত বেসরকারি এতিমখানাগুলোর শিশুদের প্রতিপালন, চিকিৎসা ও শিক্ষা প্রদানের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়, যা ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট নামে পরিচিত। এতিমদের টাকা আত্মসাৎ করার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ও সাংবাদিকরা অভিযোগ দিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

Author

আরও খবর

Sponsered content