সাভার প্রতিনিধি : ২৬ মার্চ মঙ্গলবার আজ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। এদিনে প্রতিবছর মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঢ্ল নামে লাখো মানুষের। তার ব্যতিক্রম ঘটেনি এবারও।
মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) প্রথম প্রহরে ভোর ৫টা ৫৬ মিনিটে স্মৃতিসৌধের বেদিতে প্রথমে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ও ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এসময় বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল এ উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। শেখ হাসিনা পরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলীয় নেতাদের সঙ্গে আরও একবার জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইয়ে সই করেন ভুটানের রাজা ও তার স্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সৌধ প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত করা হলে বাড়তে থাকে জনতার স্রোত। শিশু-ছেলে-বুড়োসহ সব বয়সী মানুষের আগমনে মুখর হয়ে ওঠে সৌধ প্রাঙ্গণ।
পর্যায়ক্রমে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা সরকারি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ মানুষ। তাদের ফুলেল শ্রদ্ধায় ভরে ওঠে শহীদ বেদি। মনের শক্তিতে ভর করে প্রতিটি মুহূর্ত পার করা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষেরাও আসেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে। স্বাধীনতার এই দিনে তাঁদের ছলছল চোখ একদিকে যেমন আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের কথা মনে করিয়ে দেয়, অপর দিকে মনে করিয়ে দেয় স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য অর্জনের কথা।
পরে ৮টা ৫৫ মিনিটে স্মৃতিসৌধে আসেন বিএনপির নেতা কর্মীরা। বিএনপির পক্ষ থেকে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে এক লাখ মামলা দেওয়া হয়েছে ও ৫০ লাখ নেতাকর্মীকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে।
মঈন খান আরো বলেন, ‘আমাদের ৫০ লাখ নেতাকর্মীকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। এক লাখ মামলা দেওয়া হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগে তাদের আসামি বানানো হয়েছে। এখানে যদি মানুষের ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ ও গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ না থাকে, তাহলে আজকে যারা কবরে শায়িত মুক্তিযোদ্ধা, তাদেরকে প্রশ্ন, কেন তারা এ দেশটি স্বাধীন করেছিলেন। সেই প্রশ্নের উত্তর আওয়ামী লীগ সরকারকে দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, যে উদ্দেশ্যে এবং আদর্শ নিয়ে এই দেশের লাখ লাখ মানুষ বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, যে আদর্শের জন্য তার নাম ছিল গণতন্ত্র, উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। আজকে ৫৩ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের একটি প্রশ্ন সেই গণতন্ত্র কোথায় গেলো, সেই দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি কোথায় গেলো, এটাই আজকের প্রশ্ন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘একটি সরকার এ দেশে এসেছে, সে সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা মুখে বলে গণতন্ত্র, বাস্তবে করেছে একদলীয় শাসন। তারা এবার করেছে বাকশাল-২। এটা আমার কথা নয়, এটা বিশ্ববাসীর কথা। আজকে আপনারা দেখেছেন কীভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে লক্ষ হাজার কোটি টাকা এ দেশ থেকে পাচার করে দেওয়া হয়েছে। মেগা উন্নয়নের নামে কীভাবে মেগা দুর্নীতি হয়েছে।’
এসময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, সাভারের সাবেক সংসদ সদস্য ডা.দেওয়ান মোঃ সালাউদ্দিন বাবুসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও ঢাকা জেলা বিএনপিসহ দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর পর উপস্থিত হন গণ অধিকার পরিষদ এর নেতা কর্মীরা।
গণ অধিকার এর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ খান তার সকল নেতাকর্মী নিয়ে। আরও উপস্থিত ছিল তার অঙ্গসংগঠন ছাত্র, যুব, শ্রমিক ও আইনজিবি অধিকার পরিষদ এর নেতাকর্মিরা।
এছাড়া পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, জাসদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হল সমূহ, সাংবাদিক সমিতি, বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ মাশরুম ফাউন্ডেশন সাভার, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন, বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রাক্তন সৈনিক সংস্থা সাভার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিক), এডাব, ঢাকা সিটি কলেজ ছাত্র কাউন্সিল, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, সাভার সিটিজেন ক্লাব লিঃ, কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার সাভার, বাংলাদেশ গামের্ন্টস শ্রমিক ফেডারেশনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শ্রমজীবী ও পেশাজীবী সংগঠন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।এই দিনটি বাঙালি জাতির জন্য গৌরবময় দিন।
গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকশলী মিজানুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার সকালে জনসাধারণের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করার পর দলে দলে মানুষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। শ্রদ্ধার ফুলে ধীরে ধীরে বেদি ভরে গেছে।
এদিকে নিরাপত্তার জন্য স্মৃতিসৌধসহ আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ কর্মকর্তার মোতায়েন রয়েছে।